আলােচনা
বাংলাদেশ
গত ২৪ এপ্রিল তারিখের সংখ্যায় “বাংলাদেশ” শিরােনামে শ্রীনবারুণ গুপ্ত লিখেছেন। “….এখন নাম দিলেন বাংলাদেশ….”। বাংলাদেশ নামটা ওরা অবশ্য ঘরােয়াভাবে আগে থেকেই দিয়েছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণার সঙ্গে সঙ্গে ওরা বলতে শুরু করেছেন বাংলাদেশ। যেদিন ইয়াহিয়া খান ও তার পরামর্শদাতারা নব নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বন্ধ করে দিলেন সেদিন থেকেই পূর্ববঙ্গ বাংলাদেশ” ইত্যাদি। কথাগুলি আংশিক সত্য। কারণ যেদিন থেকেই পূর্ববঙ্গ স্বধীনতা ঘােষণা করেছেন প্রকৃতপক্ষে সেদিন থেকে তারা পূর্ব পাকিস্তান নামটি একেবারে বিদায় দিয়েছেন এবং আমরা বাংলাদেশ নামটি স্বীকার করে নিয়েছি। তার মানে এই নয় যে সেদিন থেকেই ঘরােয়াভাবে তারা বাংলাদেশ নামটি দিয়েছেন,যদিও এটা ঠিক যে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম হয়েছে নতুন বাংলাদেশ সরকারের। পূর্ব পাকিস্তানের বদলে বাংলাদেশ’ নামকরণের কথা ঘােষণা করেন শেখ মুজিব ঢাকায় গত ১৯৬১ সালের ৫ই ডিসেম্বর। সেই উপলক্ষে ৬-১২-৬৯ তারিখে “ইত্তেফাক” তারিখে এ প্রকাশিত একটি সংবাদ তুলে ধরছি। “আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর ৫ই ডিসেম্বর শুক্রবার ঢাকায় ঘােষণা করেন যে, এখন হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম হইবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধু মাত্র “বাংলাদেশ”। ঢাকার হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে সােহরােওয়ার্দী ও শেরে বাংলার মাজার প্রাঙ্গনে সােহরােওয়ার্দী স্মরণে আয়ােজিত এক আলােচনা সভায় বক্তৃতাকালে শেখ সাহেব বলেন, এক সময় এ দেশের বুক হইতে মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে বাংলা’ কথাটির চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। তিনি বলেন, একমাত্র “বঙ্গোপােসাগর” ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সঙ্গে “বাংলা” কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। মুজিব বলেন-এই দুই নেতার মাজারের পাশে দাঁড়াইয়া জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘােষণা করিতেছি-আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম হইবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ। সমবেত শ্ৰোতৃমণ্ডলী বিপুল করতালি হর্ষধ্বনি সহকারে নেতার এই ঘােষণার প্রতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। প্রকৃতপক্ষে তারপর থেকেই তারা বাংলাদেশ কথাটি চালু করেন যার জন্যই গত নির্বাচনের আগে তাদের একটি স্লোগান ছিল “জয় বাংলা”। এ ছাড়াও সে সময়ে সেখানকার কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদরা এক যুক্ত বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানের নাম পাল্টে পূর্ব বাংলা রাখার দাবি জানিয়েছিলেন। যতদূর মনে পড়ছে সে সংবাটি কলকাতার আনন্দবাজারেও বেরিয়েছিল। এ ছাড়া ১২৫৩ পাতায় কলহন ছাত্রনেতা আবদুল রবের নাম উল্লেখ করেন। ওর পুরাে নাম হলাে আ. শ. ম. আব্দুর রব, যেটি সাধারণত ওখানে চলে থাকবে।
-বাসবজিৎ বন্দোপাধ্যায়
কলকাতা ৩১
দেশ এর স্বাধীন বাংলাদেশ সংখ্যা প্রকাশ করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পূর্ব বাংলার সাহিত্যিকদের অনেকেই আজ ইয়াহিয়ার দস্যুতার শিকার হয়েছে। দেশ-এর এই সংখ্যাকে বিশেষ সংখ্যার মর্যাদা দেওয়ায় এ পারের সাহিত্যিকরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছেন-এটাই বােঝায়। পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের কবিতাটি উক্ত সংখ্যার একটি উল্লেখযােগ্য সংযােজন। শ্রীসুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখাটির শেষার্ধ পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের সম্পর্কে যে কটুক্তি করা হয়েছে-তা মেনে নিতে পারছি না। পশ্চিমবঙ্গের আজ অবক্ষয়ের রাজনীতির পথপ্রদর্শকদের নিন্দা না করে সবাইকে একাকার করে ফেলাটা ঠিক নয়।
অমলকুমার ভট্টাচার্য
বঙ্কিমনগর, ইছাপুর
আমি লেখক বা সমালােচক নই, একজন উদ্বাস্তু ছা-পােষা কেরানী। আমি দেশের পুরােনাে গ্রাহক। একটা কথা না লিখে পারছি না। দেশ পত্রিকার ১৭ই এপ্রিলের ‘৭১’ সংখ্যাটিতে অভিনবত্বের স্বাদ পেয়ে পত্রিকা সংশ্লিষ্ট সকলকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দুই বাংলার বিখ্যাত লেখকবৃন্দের প্রবন্ধ, কবিতা ও রণজগৎ আমার চব্বিশ বছরের হারানােনিধির সঙ্গে পুনশ্চ যোেগসূত্র স্থাপন করলাে। সংখ্যাখানি পড়তে পড়তে ভুলে গেলাম আমি কোথায় এবং কি অবস্থায় আছি।
-কৃষ্ণজীবন দাস
কান্দী বি ক্যাম্প, মুর্শিদাবাদ
বাংলাদেশ’-সংখ্যা আমাদের ওপার বাংলার মাটিতে টেনে নিয়ে গেছে। ওপারের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে আমাদের প্রাণের স্বতঃস্ফুর্ত প্রণতি জানাই। আমরা জানি সেদিনের আর বেশী দেরী নেই যেদিন পদ্মা মেঘনা শীতলক্ষ্মার দেশের মানুষদের সাথে আমরা সমস্ত কিছুর দিক দিয়ে একাত্ম হয়ে যেতে পারবাে।
-ইন্দ্রানী রহমান
শান্তিপুর কলেজ
ভালােবাসার মুখ
‘দেশ’ পত্রিকার বাংলাদেশ সংখ্যায় নগেন্দ্র দাশের “ভালােবাসার মুখ” লেখাটি খুব ভালাে লাগলাে। আন্তরিকতার সপ্রাণ লেখাটি দ্বারা মনে হয় লেখকের সঙ্গে পূর্ব বাংলার একটি আত্মিক যােগ আছে। পশ্চিম পাকিস্তানী জহলাদের দ্বারা নিহত বিভিন্ন মনীষী এবং জগন্নাথ হল সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণায় একটি বেদনালুপ্ত মন সহজেই ধরা পড়েছে। আরও লেখার সঙ্গে পরিচিত হতে চাই।
-শঙ্কর রায় চৌধুরী
কলকাতা ২৮
১৯৬০ এর কোন এক সন্ধ্যা। ড. দেবের বাসায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রী ভিড় করেছিলাম। ভিড় করেছিলাম তাকে জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। দর্শনশাস্ত্র বিভাগের ছাত্রীরা তাকে চন্দন দিয়ে সাজিয়েছিলেন। কোআর্টারের সামনেকার লনে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে আমরা অনেক ফুল নিয়ে গিয়েছিলাম। কবিতা পড়েছিলাম স্বরচিত। সেই জন্মদিনের পবিত্র অনুষ্ঠানে আমার স্পষ্ট মনে আছে, তিনি বলেছিলেন : আমি ছাত্র জীবনে পথে পথে কলা ফেরি করতাম পড়াশুনার জন্যে। তিনি অবশ্য তার সঙ্গে হরগােবিন্দ বিদ্যালয়ের উল্লেখ করেছিলেন। আমার ত্রুটি অথবা মূখতাও হতে পারে, হরগােবিন্দ বিদ্যালয়কে আমি দিনাজপুরের অন্তর্গত ভেবেছিলাম। তিনি দিনাজপুরের অধ্যক্ষ ছিলেন। সেই সূত্রে, কার্যকারণসূত্রে এটা ভাবা আমার পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। কেননা ড. দেবের অন্যতম প্রিয় সন্তান প্রতিম ছাত্র, তাকে সশ্রদ্ধ আসনে বসিয়েছিলাম তার উদার মানবিকতার জন্য। তাঁকে আমি মানুষ হিসেবে দেখেছিলাম। তাই অন্যকিছু সন্ধান করতে যাইনি। তিনি তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তার জন্মদিনে ফেলে আসা জীবনের কোন অধ্যায়কে যদি তুলে ধরে থাকেন, তার পিছনের কারণ হলাে এই যে, জগন্নাথ হলে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক হিন্দু ছাত্র আসতেন। অনেকেই তাকে, যখন তিনি প্রভােস্ট ছিলেন, হলের প্রাপ্য টাকা পয়সা রেয়াত করবার অনুরােধও জানাতেন। অনেককেই তিনি নিজের কাছে রাখতেন। প্রতি সেশনে তাঁদের সংখ্যা পাঁচসাত, এমনকি দশও হতে পারে। তাদের সমস্ত খরচ তিনিই বহন করতেন। অতএব, যখন বারম্বার অনুরুদ্ধ হতে হতে তিনি ব্রিত হতেন, তিনি তাে রক্ত মাংসেরই মানুষ ছিলেন, তাদেরকে উৎসাহিত করতে চাইতেন। অনেকেই উৎসাহিত হতেন। আমিই হয়ে ছিলাম। চৌষট্টিতে এখানে এসে আমার অসমাপ্ত পড়াশােনা চালাতে গিয়ে কী ভীষণ দারিদ্রের সঙ্গে আমি সংগ্রাম করেছিলাম, আমি আজকে নিজেই তা ভাবতে পারি না। এই শক্তি কোথায় পেয়েছিলাম? সে ও ওই ড, দেবের কাছ থেকে। ড. দেব আমার জীবনের একটি অম্লান আদর্শ। তিনি অনেকেরই পথ দ্রষ্টা। জগন্নাথ হলের আমার অনেক সতীর্থ বন্ধুকে জানি, কি নিদারুণ কৃচ্ছসাধনার মধ্য দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন তারা। আমার সময়ে যারা জগন্নাথ হলে ছিলেন, আমার প্রতিটি বক্তব্যের সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি মিলিয়ে দেখতে অনুরােধ করি। এবং পুজ্যপাদ শ্ৰীবীরেন্দ্রচন্দ্র দেব পুরকায়স্থ মহাশয়কে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ হলাম। তিনি আমার জীবনে পিতৃতুল্য গুরুদেবদের অগ্রগণ্য ড. দেবের জীবনের অনেক কথা জানার সুযােগ করে দিলেন আমাকে।
-নগেন্দ্র দাশ
কলকাতা ৪০
আমি তােমায় ভালবাসি
গত ১৭ই এপ্রিল তারিখের দেশ পত্রিকায় বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী লেখক আবু সায়ীদ আইয়ূব সাহেবের লেখা ‘আমি তােমায় ভালবাসি’ নামের প্রবন্ধটি পড়লাম। পূর্ববঙ্গের কোনাে কোনাে মেয়ে খুব ভালাে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়, অতএব তাবৎ বাংলাদেশীয়রা আইয়ুব সাহেবের এবং ইঙ্গিতক্রমে সমস্ত মননশীলদের আত্মার আত্মীয় এ অনুভূতি অত্যন্ত উচ্চস্তরের। অতএব সেই সম্বন্ধে কিছু বলার নেই। আইয়ূব সাহেবের একটি উক্তি আমাকে অত্যন্ত ভাবিত করে তুলেছে এবং সেই সম্বন্ধে দু একটা কথা বলব। আইয়ুব সাহেব বলেছেন যে, বঙ্গদেশীয়দের (বা বাঙ্গালি মুসলমানদের) “চিত্ত আজ মধ্যযুগীয় ধর্মভাবনা থেকে মুক্ত”। আজ’ বলতে তিনি কী বােঝাতে চান? ইয়াহিয়ার দানবিক মরণাস্ত্রের মুখে পড়ে ? তা যদি হয় তাহলে ঠিক আছে, কারণ এই যুদ্ধে হিন্দু মুসলমান এককাট্টা হয়ে লড়লে বাংলাদেশীয়দের সুবিধা-হিন্দুরা সরে থাকলে বা বিরুদ্ধতা করলে ইয়াহিয়ারই সুবিধা হত। কিন্তু এই বুদ্ধি যুক্তিকে (ভাষাটা তাঁর তিনি যদি Secularism বলে ভাবেন (যে ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন) এবং একে যদি তিনি ভবিষ্যতের গ্যারান্টি বলে মনে করতে বলেন আমাদের, তা হলে তার সঙ্গে একমত হতে দ্বিধাবােধ করব। পূর্ববাংলার মুসলমানেরা যদি সত্যিই মধ্যযুগীয় ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে তাদের প্রথম কর্তব্য হবে দুটি কথা স্বীকার করা-১. মুহম্মদ আলী জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব ভুল ছিল এবং ২. পাকিস্তানের সৃষ্টি গােড়া থেকেই ভুল এবং অন্যায় হয়েছিল। তা কি তারা করবেন? ধরা যাক বাংলাদেশীয়রা Secularism-এ অনুপ্রাণিত হয়ে এ দুটো জিনিসই স্বীকার করে নিলেন। তখন কিন্তু আর পাকিস্তান বা তার অংশ বিশেষের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে থাকার কোনাে যৌক্তিকতা থাকে না। পশ্চিম পাকিস্তান না হয় মধ্যযুগীয় ধর্মভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে তার পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখল: বাংলাদেশ পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করবে কোন যুক্তিতে। যদি স্বীকার করে নেওয়াই হয় যে, ঐতিহাসিক কারণে (যে কারণে মধ্যযুগীয় ধর্মভাবনা ছাড়া আর কিছু নয়) যে রাষ্ট্রের এবার সৃষ্টি হয়েছে, তাকে এত সহজে লােপ করা যায় না (ইতিহাসে অবশ্য এরকম লােপের নজীর আছে) এবং যে নতুন বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে তাহা হবে Secular বা ধর্মনিরপেক্ষ, তা হলেও সে ধর্ম নিরপেক্ষতায় সংশয় থাকার অবকাশ রয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনের বাংলাদেশ যদি সত্যি-সত্যিই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়, তাহলে তার প্রাথমিক কর্তব্যগুলাের অন্যতম হবে-যে লক্ষ লক্ষ হিন্দুকে তারা গৃহচ্যুত, সম্বলহীন করে এপার পাঠিয়ে দিয়েছিল তাদের ডেকে নেওয়া এবং তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিয়ে তাদের নিজভূমিতে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। বাংলাদেশের নবগঠিত সরকারেরও এ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ঘােষণা করা উচিত। এবং এ ঘােষণা দেবার পরও এই সরকারের নেতারা যদি অনুগামীদের কাছে নিজেদের জনপ্রিয়তা এবং প্রতিষ্ঠা বজায় রাখতে পারেন তাহলেই বুঝব “দু একজনের মধ্যে নয়, লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের বিকাশ হচ্ছে। নয়ত বুঝতে হবে, বাংলাদেশ সম্বন্ধে সাম্প্রতিককালে আমরা যা ভাবছি এবং বলছি এ সমস্ত শুধু আবেগ, বাস্তবের সঙ্গে এর কোনাে যােগ নেই। ইয়াহিয়ার বীভৎস নারকীয় দানবিকতার নিন্দা করার ভাষা আমার নেই। পূর্ব বাংলার জনতার বেশ বড় একটা অংশের বীরত্ব ও কর্মকুশলতারও আমি প্রশংসা করি। কিন্তু তার জন্য সত্যকে অস্বীকার করে কিংবা সত্যের দিকে চোখ বুজে রেখে সস্তা ভাবুলতায় নিজেকে আচ্ছন্ন করে রাখাটাকেও ঠিক মনে করতে পারছি না।
-অহিতভূষণ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা ৯
১৭-৪-১৯৭১ দেশ পত্রিকার বাংলাদেশ সংখ্যায় ‘আমি তােমায় ভালবাসি’ প্রকাশিত প্রবন্ধের জন্য আবু সায়ীদ আইয়ুব মহাশয়, বাঙ্গালি মাত্রেরই কৃতজ্ঞতা ভাজন হবেন। গভীর মননশীলতা, যুক্তি নিষ্ঠা ও সংবেদনশীল মন নিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের উপর বীভৎস অমানুষিক অত্যাচারের নির্মমতা তিনি এই প্রবন্ধের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এ ধরনের অপ্রিয় সত্য, যুক্তিনির্ভর, গভীর অর্থপূর্ণ এবং স্বার্থলেশ শূন্য বক্তব্য বাঙ্গালি এবং বাংলাকে সঠিক পথ দেখাবে।
-সুশীল পাঁজা
উলুবেড়িয়া, হাওড়া
এখন সেখানে যুদ্ধ চলছে
১৭ই এপ্রিল, ১৯৭১ সংখ্যা দেশে প্রকাশিত সমরেশ বসুর লেখা এখন সেখানে যুদ্ধ চলছে’ পড়লাম। সেখানে আমি কখনাে যাইনি। শিল্পী সমরেশ বসুকে ধন্যবাদ-তার তুলিকে ধন্যবাদ এত স্পষ্ট আর নিখুঁত করে ছবি এঁকেছেন যে, আমি যেন অতি স্বাভাবিকভাবে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছি। এত অন্তরঙ্গ, এত মমতাময় লেখা খুবই কম পড়ার সুযােগ হয়েছে। পরিশেষে আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আপনাদের সকলকে-যারা এই স্মরণীয় সংখ্যা “দেশ” আমাদের উপহার দিলেন যার প্রচ্ছদ থেকে শেষ পৃষ্ঠাটি পর্যন্ত স্মরণীয়।
শৈলেন কুন্ডু নডিহা,
পুরুলিয়া
দেশ ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৮