You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.17 | পাক আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরােধের খতিয়ান | পশ্চিমবঙ্গ - সংগ্রামের নোটবুক

পাক আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরােধের খতিয়ান

৯ ডিসেম্বর: বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ চাদপুর বন্দর কবলমুক্ত। ভুট্টোর হুমকি পাক ভারত সংঘর্ষ শীঘ্রই এক বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হবে। ঢাকায় অবরুদ্ধ বিদেশী নাগরিকদের সরিয়ে আনার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে ২৮ ঘন্টার জন্য বােমা বর্ষণের জন্য বিরতি ঘােষণা। করাচীর ক্ষেত্রেও অনুরূপ আদেশ দেওয়া হয়। ভারত পাকিস্তান সংঘর্ষে চীন উস্কানীদাতার ভূমিকা গ্রহণ করেছে বলে সােভিয়েত সংবাদপত্র প্রাভদা’র অভিযোেগ।
১০ ডিসেম্বর: সকল ধর্মের মানুষই সমভাবে আমাদের ভাই, এই মহান আদর্শ রক্ষার জন্য আপনারা এবং আমরা সংগ্রাম করছি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর আবেদন। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যােগদানের জন্য পররাষ্ট্র শ্রীশরণ সিংহের নিউইয়র্ক যাত্রা। ভারতে প্রতি চীনের পুনরায় শাসানি। দেশপ্রেমিক জওানদের ঢাকার পথে মেঘনা নদী অতিক্রম, পশ্চিম খণ্ডে ভারতীয় বাহিনীর অগ্রগতি।।
১১ ডিসেম্বর: পলায়ন পর পাক সেনা কর্তৃক বিশেষ অন্যতম বৃহৎ সেতু সাড়া ব্রীজ ধ্বংস। ময়মনসিংহ, হিলি, কুষ্টিয়া প্রভৃতি শত্রুমুক্ত। মস্কোতে ভারত পাক যুদ্ধ সম্পর্কে ভারত রুশ আলােচনা। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামের ঘােষণা-তাঁর সরকার ধর্ম নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক আদর্শ মেনে চলবে। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে- স্বাধীন জোট নিরপেক্ষতা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থায়ী মৈত্রী হবে। কুষ্টিয়ার মুক্ত এলাকায় অসামরিক প্রশাসন কায়েম। রাষ্ট্রসংঘে ভারতীয় প্রতিনিধি শ্রী পি কে কর্তৃক চীনের আজগুবি অভিযােগের খণ্ডন। কলকাতা আসাম অসামরিক বিমান চলাচল শুরু।
১২ ডিসেম্বর: শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন। ঢাকার পথে নরসিংদীতে প্রচণ্ড লড়াই। ভারত পাক সংঘর্ষের অছিলায় পশ্চিমী রাষ্ট্রজোটের সঙ্গে পাকিস্তানের যেসব সামরিক চুক্তি আছে তাকে কার্যকর করে তােলার চক্রান্ত সম্বন্ধে পাকিস্তানের সাগরেদদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর হুঁশিয়ারী। ভারত কখনই পাকিস্তানের জনগণকে শত্রু বলে মনে করে না। পাকিস্তানের জনগণের প্রতি ভারত সহানুভূতিশীলদিল্লীর রামলীলা ময়দানে বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ঘােষণা। ত্রিপুরায় নিপ্রদীপ প্রত্যাহত। কেন্দ্রীয় পূনর্বাসন মন্ত্রী শ্রী আর কে খাদিলকরের সঙ্গে বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ এর মধ্যে মুজিব নগরে বৈঠক। বাংলাদেশের শরণার্থীদের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের বিষয়ে উভয় পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ আলােচনা। সােভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী সংবাদপত্র ‘ইজভেস্তিয়ায় অভিযােগ পশ্চিমী দেশগুলাে পূর্ব বাংলায় গণতন্ত্র রক্ষা এবং পূর্ব বাংলার জনগণকে সন্ত্রাস ও ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষার জন্য সময়মতাে কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
১৩ ডিসেম্বর: টাঙ্গাইল মুক্ত ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী কর্তৃক তিনদিন থেকে ঢাকা বেষ্টিত। মার্কিন সপ্তম নৌবহরে পরমাণুশক্তি চালিত বিমানবাহী যুদ্ধে জাহাজ এন্টারপ্রাইজ’ ভারত মহাসাগরের দিকে এগােচ্ছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস’ এর সংবাদ প্রকাশ! ভারতের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের হুমকিতে সংসদে তীব্র বিক্ষোভ। কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি-অর্থমন্ত্রী শ্রীচ্যবনের ঘােষণা। ভারত উপমহাদেশের বর্তমান বিরােধের মৌলিক কারণ দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি বুঝবার অনুরােধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব উথান্টের পত্র প্রেরণ। পাকিস্তান কর্তৃক ভারতের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে-ভারত মার্কিন বণিক সমিতির প্রেসিডেন্ট সি. এ. এল. টেলের ঘােষণা। পাকিস্তানকে মদত দেবার জন্য কয়েকটি অঞ্চলে চীন সৈন্যের আনা গােনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন তৃতীয় রাষ্ট্রের মাধ্যমে পাকিস্তানকে অস্ত্র দিবেন-এই মর্মে সংবাদ প্রকাশ।
১৪ ডিসেম্বর: পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডা. এ, এম, মালিকসহ ৬৫ জন কর্তাব্যক্তির পদত্যাগ, ঢাকা নগরীর উপকণ্ঠে মুক্তির লড়াই। পশ্চিম রণাঙ্গনের শিয়ালকোটে ৯০০ বর্গ কি. মি. ভারতের দখলে। নিরাপত্তা পরিষদে সােভিয়েতের ভােটে চীন সমর্থিত মার্কিন প্রস্তাব পরাজিত। বাংলাদেশের রাজনীতিক মীমাংসার প্রশ্নকে আলাদা করে পাক-ভারত সংঘর্ষ বিরতির প্রশ্নটি দেখা উচিত। সােভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপতি নিকোলাই পদগর্নির মন্তব্য। বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে বাদ দিয়ে কোন যুদ্ধ বিরতি হতেই পারে না-নিউইয়র্ক এ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার শরণ সিংহের ঘােষণা।
১৫ ডিসেম্বর: বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. এ, এ, কে নিয়াজি কর্তৃ ভারতের কাছে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব। জেনারেল মানেক শ’ কর্তৃক ভারতের আত্মসমর্পণের জন্য পুনরায় নির্দেশ। পাক যুদ্ধবাজদের মদদ দেওয়ার জন্য বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবাহিনীর রণতরী। নিরাপত্তা পরিষদে পােল্যান্ডের প্রস্তাব-পূর্ব ইউরােপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রস্তুত হচ্ছে বলে সংবাদে প্রকাশ। ভুট্টোর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ত্যাগ। বিপদের দিনে রাশিয়া ভারতের শ্রেষ্ঠ বন্ধু মস্কোতে শ্রী ডি পি ধরের ঘােষণা।
(সংবাদ পত্রে প্রকাশিত সংবাদের সংক্ষিপ্ত সংকলন)

সূত্র: পশ্চিমবঙ্গ : ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১