You dont have javascript enabled! Please enable it!
কাগমারী সম্মেলন

আওয়ামী লীগ এখন আর ড্রইং রুম বিলাসী রাজনৈতিক দল নয়, সারা বাংলায় তার। সংগঠন প্রক্রিয়া ও ইউনিয়ন পর্যায়েও সাংগঠনিক কার্যক্রম সক্রিয় হয়েছে। দলের ভেতর আরও গণতন্ত্র নিয়ে আসতে হবে, এই তাগিদ হল দলের ভেতর অনুপ্রবেশকারী। বামপন্থিদের, মূলত এখন তারাই আওয়ামী লীগের চালিকাশক্তি। নীতি নির্ধারণ সভা আহ্বান করা এবং লােক সমবেত করার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তেছে। বামপন্থিরা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কিংবা সুবিধাভােগীদের মত রাজনীতি করে না, দেশপ্রেম মেনে তাদের রাজনীতি চর্চা। নিজের খেয়ে অপরের সেবা । মণি সিংহ জমিদারি বিলিয়ে দিলেন, অনেকেই লেখাপড়া করে রাজনীতিতে নেমে বিয়ে করে সংসার করার সুযােগই পেলেন । সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত সারা জীবনের প্রতিভা এর জন্য ব্যয় করলেন। তারা। এসে আওয়ামী লীগে ভিড় করাতে আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠল। মওলানা ভাসানী একজন মাদ্রাসা পড়ুয়া আলেম এবং আগে আসামে থাকতে পাকিস্তানের জন্য লড়াই করতে গিয়ে কিছুটা সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি প্রাণিত থাকলেও এই সাচ্চা ও ত্যাগী বামপন্থিদের সংশ্রবে এসে সম্পূর্ণ বাম ঘেঁষা রাজনীতি অবলম্বন করে মজলুম জননেতা উপাধিতে ভূষিত হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে, সরকারি দল। হিসেবে দেশের প্রধান থেকে তাগিদ এল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন চাই। মওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারীতে এ সম্মেলন আহ্বান করেন। ড্রইং রুম রাজনৈতিক পদ্ধতিতে, অর্থাৎ দলের কর্মীদের দ্বারা নির্বাচিত না হয়ে এতদিন এই সংগঠনের কার্যকরী কমিটি মনােনীত হয়েছে। দলনেতা মওলানা ভাসানী কিংবা সােহরাওয়ার্দী যাকে ইচ্ছা দলভুক্ত করে দায়িত্ব দিয়েছেন। সােহরাওয়ার্দী পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি, পূর্ব বাংলার আওয়ামী মুসলীম লীগের নির্দেশে চলেন না।

ইতিপূর্বে তিনি পাকিস্তানি শাসনচক্রের সঙ্গে আপােস করে ক্ষমতার জন্য দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে দ্বিধা করেন নি। কায়েমি স্বার্থচক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে একটা কাজ করেছেন যা প্রশংসার যােগ্য। তিনি। সাম্প্রদায়িক পৃথক নির্বাচনের বিপক্ষে জোরালাে যুক্তি খাটিয়ে গণপরিষদে যুক্ত নির্বাচন বিল পাস করিয়ে নেন। পাকিস্তান ইতিমধ্যে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীগােষ্ঠীর তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, সিয়াটো সেনটো বাগদাদ প্যাট ইত্যাদি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। সোহরাওয়ার্দীর মার্কিন ঘেঁষা মনােভাব রয়েছে এবং এসব চুক্তিও নীতির প্রতি সমর্থন। আছে। বামপন্থিদের তিনি দুশমনের মতাে মনে করেন। সােহরাওয়ার্দীপন্থিরা আওয়ামী পাপের ভেতর কম সক্রিয় নয়। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে তারা নেই, লাভের ক্ষেত্রে হাজির। সম্মেলনের জন্য বামপন্থিদের ঘুম নেই, সােহরাওয়ার্দীপন্থিরা কেবল বাগড়া দিতে ওস্তাদ।  ভিন পথে তােরণ নির্মিত হয়েছে অবশ্য কায়েদে আজম তােরণ তােরণও অভ্যন্তরে রয়েছে। সম্মেলন বানচাল হতে হতে রক্ষা পায়। সম্মেলন স্থলের বিভিন্ন পথে তাে মার্কস এঙ্গেলস, লেনিন-স্টালিন, মাও সেতুং-এর নামে। অবশ্য কায়েদে সর্বাগ্রে থাকলেও মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ বসু, রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি তােরণও অভ্যন্ত সােহরাওয়ার্দী এসব তােরণ ভেঙে ফেলতে উদ্যত হলেন। মওলানা ভাসানীর উচিত সােহরাওয়ার্দীর নির্দেশ আপাতত স্থাপীত হল এবং সেই কর্ম থেকে তারা বিরত বিষের মতাে হজম করে নিল। কমিটি গঠনকালে মওলানা তাঁর অনুসারীদের পর্যাপ্ত যে করে আনতে পারলেন না। দুঃখের বিষয় সােহরাওয়ার্দীপন্থিরা প্রাধান্য পেল, শেখ মজি সােহরাওয়ার্দীপন্থি কিন্তু ভাসানীর দুর্বলতা তার প্রতি বেশি, তিনি সম্পাদক নির্বাচিত হন। আশ্চর্যে বিষয় যে তার সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদক হলেন খােন্দকার মােস্তাক। আতাউর রহমান খান সহ-সভাপতির পদ পেয়ে যান। মওলানা ভাসানী তাঁর সভাপতির ভাষণে তীব্র ভাষায় পাকিস্তানি শাসকচক্রের চেহারা তুলে ধরেন, চুয়ান্নর নির্বাচনে বাংলার জনগণের রায়কে বানচাল করার জন্য তাদের দোষারােপ করেন। সােহরাওয়ার্দী তাঁর ভাষণে পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতির কিছু ব্যাখ্যা দেন। অবশ্য সে ব্যাখ্যাটা তিনি সম্মেলন স্থলে খােলসা না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল মিলনায়তনে ছাত্রদের কাছে স্পষ্ট করেন এভাবে, পাকিস্তান অবশ্য কারও বন্ধুত্ব চায়, বন্ধুত্ব হল প্লাস, কোনও জোটে গিয়ে পাকিস্তান শক্তিশালী হােক এটা অবশ্য আমরা চাই ।। আর নির্জোট হল জিরাে, যারা নির্জোটে থেকে নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি সমর্থন করে তাদের অবস্থা দাঁড়াল বন্ধুহীন জিরাে।
সুতরাং ০+০+০+…… = ০। তাঁর নিজস্ব উদ্ভাবনী নীতি ও তার জাদুকরী বক্তব্যের জোরে বিপুল করতালির জোরে আপাত চমৎকার মনে হলেও আসলে কী? কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া জুড়ে সাম্রাজ্যবাদী থাবা বিস্তার করে ছিল। পাকিস্তানকে যুদ্ধ জোটে জড়িয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিল কিন্তু পারল না। গােপন সুযােগ ভেস্তে গেল প্রতিক্রিয়াশীল ইরাক সরকারের পতনের পর, বাগদাদ প্যাক্ট হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। কাগমারী সম্মেলনে সােহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতির কঠোর সমালােচনা হয়েছিল তাৎক্ষণিকভাবে। মওলানা ভাসানীও বলেন, আমি যুদ্ধজোট বিশ্বাস করি না, যা ৭ পররঞ্জনাতি চাই। মওলানা পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের জন্য বললেন, পরর মুদ্রা ও প্রতিরক্ষা কেন্দ্রের হাতে রেখে বাকি সব প্রাদেশিক সরকারকে দিতে সম্মেলনে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, পূর্ব পাকিস্তানের অভিযােগের প্রাত হয়তাে এমনও সময় আসতে পারে যখন পূর্ব পাকিস্তান আসসালামু আলাইকু প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারে। কাগমারী সম্মেলনের পরে সােহরাওয়ার্দীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ শ গেল। সম্মেলনে যে প্রস্তাব পাঠ হয় তাতে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাপ্ত ভয়ে মুসলিম বাদ দিয়ে কেবল আওয়ামী লীগ করা নিয়ে প্রশ্ন দেয়! কম করেছিলেন ভাসানী নিজে ১৯৫৫ সালের ২৩ অক্টোবর তুমুল হলে মুখে। তবে মওলানা ভাসানী নিজে থেকে আওয়ামী লীগের অ অনুমােদন করেন। তাই তিনি নিজে যে গাছ রােপণ করেছেন তা নর অভিযােগের প্রতিকার না হলে আসসালামু আলাইকুম” বলার আওয়ামী লীগ স্পষ্ট বিভক্ত হয়ে ম লীগের সাম্প্রদায়িক চরিত্রের শয়ে প্রশ্ন দেখা দিল। এ ‘তুমুল হট্টগােল ও বিরােধিতার গগের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র রছেন তার ডালপালা কাটার
ক্ষমতা রাখেন এ কথা বুঝিয়ে দেন।

 

সূত্র : বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ বিজয় ও বঙ্গবন্ধুর জীবন উৎসর্গ – শামসুল আলম সাঈদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!