You dont have javascript enabled! Please enable it!

বঙ্গবন্ধুর ঘাতক মহিউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) অপারেশন বিভাগ লস অ্যাঞ্জেলেসের এক বাড়িতে গত মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশের সাবেক সেনা কর্মকর্থা মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করে। স্বরাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং এএফপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, লস অ্যাঞ্জেলেসের অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তা ব্রায়ান ডিমাের গত বুধবার জানান, ৬০ বছর বয়সী মহিউদ্দিন একজন সন্দেহভাজন বিদেশি। আর এ ধরনের ব্যক্তিদের গ্রেফতার অভিযান তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
পর্যটক হিসেবে মহিউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। পরে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করেন। ২০০২ সালে মার্কিন অভিবাসন আদালত তাকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু ঐ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। গত মাসে সানফ্রান্সিকোর এক আদালত তার আবেদন নাকচ করে দেন। গত মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেসের নিজ বাড়ি থেকে মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। মহিউদ্দিনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে। আইসিইর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানাে হয়, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অফিসাররা গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা ও ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত পলাতক আসামি সেনাবাহিনীর এক সাবেক মেজরকে গ্রেফতার করেছে।
আইসিইর ফিউজিটিভ অপারেশন্স টিমের সদস্যরা মঙ্গলবার সকালে লস অ্যাঞ্জেলেসের ইংলিউড বুলভারের ৩৯০০ নম্বর ব্লকের বাড়ি থেকে একে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে (৬০) আটক করে। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের আদালত অভ্যুত্থান ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে মহিউদ্দিন আহমেদকে তার অনুপস্থিতিতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহিউদ্দিন আহমেদ ১৯৯৬ সালে প্রথম ভিজিটর ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ২০০২ সাে একজন ইমিগ্রেশন জজের দেওয়া প্রত্যাপর্ণ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন। গত মাসের শেষ দিকে সানফ্রান্সিসকোতে আপিলের নাইনথ সার্কিট কোট মহিউদ্দিনের আবেদন খারিজ করে দেন। এতে আগের প্রত্যাপর্ণ করার নির্দেশটি বহাল থাকে। মুজিব হত্যার পর দুই দশক ধরে মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশে বিভিন্ন কূটনৈতিক পদে বহাল ছিলেন। জুলাইয়ে তাকে দেশে ফিরে ষড়যন্ত্রের অপরাধে বিচারের সম্মুখীন হতে তলব করা হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে পৌছে মহিউদ্দিন আহমেদ এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।

কে এই মহিউদ্দিন
৩২ নম্বরে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অন্যতম পলাতক একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ সে সময় ছিলেন ১ম বেঙ্গল লান্সারের স্কোয়াড্রন কমান্ডার। হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে বালুর মাঠে নাইট ট্রেনিংয়ের নামে যে প্রস্তুতি চলে তার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার ছিলেন মেজর ফারুক এবং এই মেজর মহিউদ্দিন। পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার রাংগাবালী গ্রামের আবুল হােসেন তালুকদারের ছেলে একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন হন। ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ‘৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের বন্দিশিবিরের আটক থাকার পর দেশে ফিরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী চড়াই উত্রাইয়ের ধারাবাহিকতায় তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯৭৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ‘৭৬ সালের ১ জুলাই তার চাকরি পররাষ্ট্র দফতরে ন্যস্ত করে আলজিরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সূত্র: দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!