আদর্শ কর্মী বাহিনী গড়িয়া তুলুন- মনসুর আলী
জাতীয় দলের সেক্রেটারী জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী জনাব এম মনুসুর আলী বলেছেন বাকশাল কর্মী ও আইন শৃংখলা বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় তল্লাশী চালালে দুস্কৃতিকারীদের খুজিয়া বাহিত করতে হবে। গতকাল বঙ্গভবনে ৬১ জন জেলা সম্পাদকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী উদ্বোধনকালে তিনি জেলা গভর্নর, জেলা সম্পাদক ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে উপরােক্ত বক্তব্য রাখেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত দ্বিতীয় বিপ্লবের সফল করার জন্য আদর্শ কর্মী বাহিনী গড়ে তােলার উপর গুরুত্ব আরােপ করে সেক্রেটারী জেনারেল বলেন যে, প্রত্যেক গ্রামে মাত্র দুই জন করে আদর্শ কর্মী সষ্টি করতে পারছে ও ঈস্পিত লক্ষ্য অর্জনের পথ সহজ হয়ে আসবে। তিনি বলেন যে, স্বাধীনতা লাভেল পর স্বাধীনতার শত্রুরা গুপ্ত হত্যা রাহাজানি ও কলে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত করে ত্রাসের বাধ্য হয়ে শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি পরিবর্তন করে জাতীয় দল গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর এই দুরদর্শিতা ও সুচিন্তিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে। জনাব মনসুর আলী বলেন বেহ কেহ বলে থাকেন দেশে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। আসলে ইহা। ঠিক নয়। দেশে জাতীয় দলের শাসন কায়েম করা হয়েছে। কৃষক শ্রমিক তথা দেশের ৯৫ জন। নাগরিক জাতীয় দল ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আন্তাশীল রাজনৈতিক মুক্তির পর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু এই বিপ্লবই শেষ বিপ্লব নয়। দ্বিতীয় বিপ্লবের সাফল্য অর্জনের পর চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আপন গতিধারার বিপ্লব এগিয়ে যাবে। সেক্রেটারী জেনারেল দলীয় শৃংখলা অক্ষুন্ন রাখার জন্য পার্টি কর্মিদের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী জনাব এম মনসুর আলী গতকাল সকাল ১০টায় বঙ্গভবনে জাতীয় দলের ৬১ জন জেলা সম্পাদকের ৬ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচী উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় দলের তিন জন সম্পাদক কার্যকরী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় পরিষদের নেতৃবৃন্দ মন্ত্রী পরিষদের সদস্য বৃন্দ উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা এবং জেলা গভর্নরগণ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অপরাহ্ন ৪টা হতে ১১০ নং সার্কিট হাউস রােডে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জেলা সম্পাদকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। কর্মসূচীর উদ্বোধনী ভাষণে জাতীয় দলের সেক্রেটারী জেনারেল জেলা গভর্ণর, জাতীয় দলের জেলা সম্পাদক ও আইন শৃংখলা রক্ষাকরী মহলের উদ্দেশ্যে বলেন যে, যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে তল্লাশী চালিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, যৌথ প্রচেষ্টা চালানাে হলে দুস্কৃতিকারীরা আমাদের অপরিচিত এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কোন থানায় কাহারা দুস্কৃতি করছে ইহা অজনা থাকার কথা নয়। দেশের সীমান্ত এলাকার জেলা গভর্নর ও জাতীয় দলের জেলা সম্পাদকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন আপনাদের পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত দ্বিতীয় বিপ্লবকে সফল করার জন্য দুস্কৃতিকারী ও চোরাচালান দমন করার জন্য গ্রামে গ্রামে আদর্শ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন যে, প্রত্যেকটি গ্রামে মাত্র দুই জন করিয়াও আদর্শ কর্মী সৃষ্টি করতে পারলে সাফল্যের লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক বাধা সহজ হয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সাবেক আওয়ামী লীগের ইতিহাস এক ও অভিন্ন। স্বাধীনতা কেহ আমাদের হাতে তুলে দেয় নাই। বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন আমরা জয়ী হয়েছি বলেই স্বাধীনতাকে কেহ কেহ হাল্কা ভাবে গ্রহণ করেছে। সৈরাচার শক্তির হাতে পরাজিত অস্তিত্ব টিকে থাকতে পারে না। তিনি বলেন যে, বঙ্গবন্ধু এখনও আমাদের মধ্যে আছেন। রাজনৈতিক মুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে এবার অর্থনৈতিক মুক্তির বিপ্লবে সংগ্রাম করতে হবে। জনাব মনসুর আলী বলেন যে, স্বাধীনতার পর শত্রু পক্ষ ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়েছিল। তাহার কলে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে। নাশকতামূলক কার্যকলাপের সরকারী সম্পত্তি ক্ষতি সাধন করেছিল। গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে জনগণের শান্তি কেড়ে নেয়ার অপপ্রয়াস করেছিল। চারিদিক হতে সােচ্চার ধ্বনি উঠেছিল , বঙ্গবন্ধু তুমি কঠোর হও’। বঙ্গবন্ধু অনেক আবেদন নিবেদন করেছেন, কিন্ত চক্রান্তকারীরা শুনে নাই। বঙ্গবন্ধু বাধ্য হয়ে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞায়। জাতীয় দল গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন যে, কেহ কেহ এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা আখ্যা দিয়ে থাকেন। আসলে এক দলীয় নয়, জাতীয় দল দেশের শাসন ভার নিয়াছে। কৃষক শ্রমিক তথা দেশের শতকরা ৯৫ জন নাগরিক জাতীয় দল ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আস্তাশীল। শাসন ব্যবস্থায় জনগণের সহিত জনপ্রতিনিধিদের নৈকট্য স্থাপনের জন্য থানা এবং ইউনিয়ন পর্যন্ত জাতীয় দলের কাঠামাে সম্প্রসারণ করা হবে। তিনি বলেন ঘরে ঘরে, কতলে কারখানায় দ্বিতীয় বিপ্লবই শেষ বিপ্লব নয়। দ্বিতীয় বিপ্লবের সাফল্যের পথ ধরে চূড়ান্ত লক্ষ্যে আপন গতিধারায় বিপ্লব এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, এখন আমাদের বসে থাকার সময় নাই। জাতীয় অগ্রগতি ও স্বয়ং সম্পূর্ণতার লক্ষ্যে নিজ নিজ কাজের মাধ্যমে সকলকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। জাতীয় দলের শৃংখলা রক্ষা করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন শােষককে শােষণ করার অধিকার দেয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু আমাদের সম্মুখে চারটি রাষ্ট্রীয় মূল আদর্শ রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের পূর্ণ সুযােগ গ্রহণ করে তাঁরে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ আগস্ট ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত