দারিদ্রের আবর্ত থেকে মুক্তির জন্যে সঞ্চয় বাড়াতে হবে- অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী জনাব এ আর মল্লিক বলেছেন, দারিদ্রের আবর্ত থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করে সুখী সমৃদ্ধ জীবনে উন্নতি করতে হলে অভ্যান্তরীন মূলধনের যােগান দিতে হবে। তিনি বলেন, সঞ্চয় বাড়াতেই হবে। বঙ্গভবনে জেলা গবর্নরদের প্রশিক্ষন কার্যক্রমে গতকাল ভাষন দান কালে দেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী জনাব এ আর মল্লিক বলেছেন, ঔপনিবেশিক শাষন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ ও জাতির উপযােগী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তােলার বর্তমান পরিকল্পনা এই উপমহাদেশের প্রশাসনিক পূণর্গঠনের ইতিহাসে এক বিরাট পদক্ষেপ। এই নয়া প্রশাসন ব্যবস্থার লক্ষ্য হচ্ছে প্রশাসন ব্যবস্থাকে জনগনের কাছে নিয়ে যাওয়া। ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার সৃষ্ট সমস্যা ও জনগণের দুঃখ-দূর্দশা দূর করা। তিনি বলেন, দেশের ৬১ টি জেলার নব নিযুক্ত গবর্নররাই হচ্ছেন এই প্রশাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের অগ্রসেনানী। তিনি বলেন, নয়া প্রশাসন ব্যবস্থায় সাফল্য নির্ভর করবে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা, সিদ্ধান্ত গ্রহন ও প্রশাসনিক দক্ষতার ওপর। জনাব মল্লিক বলেন, ২শ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ও পরবর্তী ২৫ বছর পাকিস্তানের বৈশম্য মূলক নীতি ও শােষণের ফলে বাংলাদেশের সম্পদ অনেকাংশে নিঃশেষ হয়েছে। অন্যান্য উন্নয়ন শীল দেশের মতই কর্মসংস্থানের অভাব, আয়ের নিন্মতম মাত্রা সঞ্চয়ের অভাব, এবং বিনিয়ােগের নিন্ম মাত্রা মিলে দারিদ্রের আবর্ত আমাদের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার এদেশের শােষিত অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে অনেকগুলি ব্যবস্থা অবণরম্বন করেন। তিনি বলেন, নতুন জাতিয় চেতনা ও রাষ্ট্রিয় নীতির পরিপেক্ষিতে যুদ্ধবিদ্ধস্ত অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরন এবং জায়ি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্মিত করার জন্যে সরকার ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা গ্রহন করেন; এই পরিকল্পনার অধীনে ১৯৭৭-৭৮ সাল পর্যন্ত ৪ হাজার ৪শ ৫৫ কোটি টাকা বিনিয়ােগের কার্যক্রম নেয়া হয়। বাংলাদেশ পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন আমলে একদিকে অর্থনৈতিক শােষণ ও অন্যদিকে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার ফলে এদেশের জনগণের মনে যে পুঞ্জিভূত দূঃখ-দূর্দশা ও ক্ষোবের সৃষ্টি হয়েছিল তাই ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ৬ দফা দাবীর মাধ্যমে রূপ লাভ করে। জনাব মল্লিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের রিপাের্ট অনুযায়ি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী বাংলাদেশে যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তার ফলে ৯২৯.৪৯ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ১২শ ৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ বিনষ্ট হয়। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে আমরা যে স্বদেশভুমিকে ফিরে পেলাম তা এক ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দেউলিয়া প্রায় অবস্থা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুজ্জীবিত করার জন্যে সরকার এসময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি পুনর্বাসন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, মুদ্রা ব্যবস্থা পুনর্বাসন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ব গড়ে তােলার ব্যবস্থা গ্রহণ মুদ্রামান পুননির্ধারণ করা হয়। তিনি বলেন, শােষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের মৌলিক ও বৃহৎ শিল্প কারখানা রাষ্ট্রায়াত্ত করেন। পুনর্গঠন ও পুনঃনির্মান কার্যক্রমের অগ্রগতির সঙ্গে সীমিত জাতীয় অর্থনেতিক দীর্ঘ মেয়াদীর লক্ষ্যে দেশের পাঁচশালা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনেতিক উন্নয়নের সকল অন্তরায় সত্বেও এর ভবিষ্যত সম্ভাবনাময়। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের এই যুগ সন্ধিকালে জাতীয় চেতান যে স্ফুরণ ঘটেছে তাতে জনগণ শত দুঃখ কষ্ট, কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ, তিতিক্ষা সহ্য করেও সােনার বাংলা গড়ে তুলতে পেছ পা হবে না।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ৭ আগস্ট ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত