সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি থানার সােয়াবিল ও হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নে সকল কাচাঘর এখন পাঁচ ফুট পানির নিচে। মানুষ মাচানে বিষধর সাপের সঙ্গে একত্রে বাস করছে। একই থানায় সব গ্রাম ও গােরস্তান প্লাবিত। এদিকে মঙ্গলবার তিস্তার বন্যার স্রোত রংপুর শহরে দ্রুত ঢুকে পড়েছে। রাজশাহীতে পদ্মার প্লাবনে সাত হাজার একর জমিতে আউশ ফসল ডুবে গেছে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। দেশের সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির আরাে অবনতি ঘটেছে।
যমুনা, পদ্মা, মেঘনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, গড়াই, কুমার, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে জলস্ফীতি আরাে বাড়ছে। এখনাে কানাইঘাট ও সিলেটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার যথাক্রমে ৪ ফুট ৪ ইঞ্চি ও ৩ ইঞ্চি উপরে, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে পানি বিপদ সীমায় যথাক্রমে ৩ ফুট সাড়ে ৩ ইঞ্চি ও ২ ফুট আড়াই ইঞ্চি উপরে, গােয়াইনঘাটে গােয়াইন নদীতে পানি বিপদ সীমার ২ ফুট আড়াই ইঞ্চি উপরে, গােয়ালন্দে পদ্মা নদীতে পানি বিপদ সীমার ১ ফুট ৭ ইঞ্চি উপরে ও গড়াই রেল সেতুর কাছে গড়াই নদীতে পানি বিপদ সীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। | বন্যা পরিস্থিতি মােকাবিলার জন্যে সরকার সম্ভাব্য সবরকমের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। চট্টগ্যাম থেকে দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি বন্যাপ্লাবিক ফটিকছড়ি থানার দুটি ইউনিয়ন ঘরে এসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। তিনি জানান: ফটিকছড়ি থানার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দশটি ইউনিয়নের সবকটি গ্রামের গােরস্তান এখন জলশ্লান। কোথাও লাশ দাফনের এতটুকু জায়গা নেই। সবখানে পানি থৈ থৈ করে। তার উপর কাফনের কাপড় পাওয়া যায় না। এবং অনেকের পক্ষে কাপড় কেনার সঙ্গতিও নেই। সােয়াবিল ও হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের সকল কাঁচাঘর এখন ন্যূনপক্ষে পাঁচ ফুট পানির নিচে। ভয়াবহ প্লাবন এসে গ্রাস করেছে জনবসতির চিহ্নটুকু। অসহায় গ্রামবাসী আশ্রয় নিয়েছে উচু মাচানে। অনেক মাচানে সাপ ও মানুষ একত্রে সহ অবস্থান করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই প্রতিনিধি নিজে এমন একটি ঘটনা প্রত্যক্ষও করেছেন।
প্রতিনিধি আরাে জানিয়েছেন, হালদা নদীতে জলস্রোত এখানে বিপদ সীমার সাড়ে চার ফুট উঁচু দিয়ে প্রবাহিত। চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙামাটি, কক্সবাজার, নাজিরহাট ও ফেনীর সড়ক যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন। ঢাকা-চট্টগ্রাম গ্র্যান্ড ট্যাংক রােডে একটি এলাকা জলম্লান।
আমাদের রংপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন প্রমত্ত তিস্তার বন্যার স্রোত রংপুর শহরেও একাংশ প্লাবিত করেছে। এতে জুম্মাপাড়া, শালবন, চিকিলি, খটখটিয়া, জালকর ও নীলকান্ত এলাকার পাঁচশত বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। দুর্গত এলাকার পরিবারের মানুষ অন্যত্র স্কুল বা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
পাবনার ডেপুটি কমিশনার বাসসকে জানান, হার্ডিজ্ঞ ব্রিজের কাছে পদ্মা নদীতে স্রোত বিপদসীমার দেড় ফুট ও সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বিপদসীমার ১২ ফুট উঁচুতে বয়ে যাচ্ছে। এ দুটো নদীতে জলস্ফীতি আরাে বাড়ছে। নাগবাড়ির কাছে যমুনা নদীর ভাঙন বেড়ে গেছে। ফেনী, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার, হবিগঞ্জসহ বহু এলাকার বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ৩০ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত