You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.07.29 | সার বিতরণের নয়া নীতি: সীমান্তবর্তী পাঁচ মাইলের কার্ড প্রথা- বােরাে মওসুম থেকে সরাসরি সার বিক্রি হবে | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

সার বিতরণের নয়া নীতি: সীমান্তবর্তী পাঁচ মাইলের কার্ড প্রথা
বােরাে মওসুম থেকে সরাসরি সার বিক্রি হবে

আগামী বােরাে মৌসুম থেকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিভিন্ন পাওয়ার পাম্প ও টিউবওয়েল গ্রুপের মধ্যে ডিলারদের মাধ্যমে সার বিতরণের বদলে সরাসরি সার বিতরণ শুরু করবে। তবে পাম্প ও টিউবওয়েল গ্রুপ বর্হিভূত চাষীদের জন্যে এর পাশাপাশি ডিলারদের মাধ্যমে সার বিতরণের বর্তমান পদ্ধতিও চালু থাকবে। সরাসরি বিতরণ ব্যবস্থা যদি সফল ও ত্রুটিমুক্ত হয় তবে ভবিষ্যতে পাম্প ও টিউবওয়েল গ্রুপ বহির্ভূত চাষী এবং অন্যান্য ফসলের জন্যেও সরাসরি সার বিতরণ ব্যবস্থা চালু করা হতে পারে। এ খবর বিশ্বস্ত সূত্রের বিতরণের ক্ষেত্রে সীমান্তবর্তী ৫ মাইল এলাকায় ‘কার্ড প্রথা চালু করা হবে। পরবর্তীকালে সারা দেশে এই প্রথা চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, সার বিতরণের ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় কয়েকটি নতুন নীতি গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় দিন দুয়েক আগে একটি সার্কুলার সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে প্রদান করেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় কয়েকটি নীতি সংশােধন করেছেন।
সার বিক্রি ও সার বিতরণের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির যেসব খবর গত এক বছর যাবত শােনা গেছে যেসব ত্রুটি ধরা পড়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এসব নতুন নীতি গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য, কৃষিমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদ কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, যে কৃষি মন্ত্রণালয় সারের সুষ্ঠু বিতরণের উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু সার বিতরণের একটি পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে তিনি গুরুত্ব আরােপ করেন।
জানা গেছে, আগামীতে সার বিতরণের ব্যাপারে কিছু নির্দেশ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে প্রদান করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সব বিতরণের বার্ষিক লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সঙ্গে আলােচনা করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রত্যেক জেলার জন্যে সারের বরাদ্দ নির্ধারণ করবে। প্রত্যেক জেলার থানা ওয়ারী বরাদ্দের ক্ষেত্রে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের জেলা ম্যানেজার ও জেলা কৃষি অফিসাররা ফসল ওয়ারী লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন। জেলা প্রশাসনের অনুমােদনের পর থানা গুদামসমূহে সার সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধানও তারা করবেন।
জানা গেছে, সীমান্তবর্তী থানাসমূহে সরবরাহের ক্ষেত্রে সার বরাদ্দ সংক্রান্ত আদেশের কপি এবং সার ডিলারদের প্রয়ােজনীয় তত্যাবলী বাংলাদেশ রাইফেলস এর স্থানীয় উইং কমান্ডারগণ কাছে পাঠাতে হবে।
সার বিতরণের ক্ষেত্রে থানার সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) থানা কমিটির আহ্বায়ক হবেন। থানা ইন্সপেক্টর হবেন কমিটির সদস্য সচিব। সংশ্লিষ্ট থানার জাতীয় সংসদ সদস্য কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন। থানা কৃষি অফিসার থানা বাকশাল কমিটি ও থানা কৃষক লীগের সভাপতি ও সম্পাদবৃন্দ থাকবেন কমিটির সদস্য। সীমান্তবর্তী থানাসমূহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রাইফেলস এর উইং কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি অতিরিক্ত সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।
ইউনিয়ন কমিটিসমূহের গঠন পদ্ধতি হচ্ছে: ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও ভাই প্রেসিডেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হবেন। ইউনিয়ন কৃষি সহকারী হবেন কমিটির সদস্য সচিব। ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, ইউনিয়ন বাকশাল কমিটি ও ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি ও সম্পাদকবৃন্দ কমিটির সদস্য থাকবেন। অগ্রাধিকার তালিকা অনুযায়ী এই কমিটি সার বিতরণের ব্যবস্থা করবে।
যেসব এলাকায় ডিলারদের মাধ্যমে সার বিতরণ করা হবে সেসব এলাকায় প্রতি ইউনিয়নে। ৬জন ডিলার থাকবেন। প্রত্যেক ওয়ার্ডে থাকবেন ২জন ডিলার। যেসব ইউনিয়নে ৬ জনের বেশি ডিলার রয়েছেন সেসব ইউনিয়নে কমিটি ৬জন ডিলারকে মনােনীত করবেন এবং অন্যান্যরা বাতিল হয়ে যাবেন। এসব ক্ষেত্রে প্রাথমিক সমবায় সমিতিসমূহকে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে। ইউনিয়ন কমিটির সুপারিশ অনুসারে মহকুমা ম্যানেজার ডিলারদের নিযুক্ত করবেন।
কৃষি বিভাগও কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অফিসারবৃন্দ এবং বিশেষ করে থানা ও ইউনিয়ন কমিটিসমূহের সদস্যবৃন্দ ডিলারদের বিতরণ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও তাদের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের একজন মুখপাত্র সােমবার দৈনিক বাংলার প্রতিনিধিকে জানান যে, ঘােড়াশাল সার কারখানায় দুর্ঘটনার পর সার সংকটের দরুন অতীতে সার বিতরণের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ আরােপ করা হয়েছিল তা এবার উঠে যাবে।
মুখপাত্র জানান যে, ১৯৭৫-৭৬ আর্থিক বছরের জন্যে দেশে সারের চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৬ লাখ টন। এর মধ্যে ইউরিয়ার পরিমাণ হলাে ৪ লাখ টন, টিএসপি ১ লাখ ৫০ হাজার টন এবং এমপি ৫০ হাজার টন। ৬ লাখ টনের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টন আমদানী করতে হবে। মুখপাত্র আরাে জানান যে বর্তমানে সার বিতরণ করা হচ্ছে না বলে পব্রিকায় যেসব খবর বেরিয়েছে তা ঠিক নয়।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ২৯ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত