You dont have javascript enabled! Please enable it!

চট্টগ্রামের সঙ্গে ফেনী ও রাঙামাটির সড়ক যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন

চট্টগ্রামের হালদা নদীতে প্রবল স্রোতে নৌকাডুবির ফলে একজন স্কুল শিক্ষক মারা গেছেন। ফটিকছড়ি থানার হারুয়ালছড়ি গ্রামে একটি কাঁচাঘর ধসে পড়লে একটি শিশুসহ তিন ব্যক্তি মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। বন্যায় চট্টগ্রামের সঙ্গে ফেনী ও রাঙামাটির সড়ক যােগাযােগ এখন বিচ্ছিন্ন। নাজিরহাট স্টেশনের কাছে প্রায় দেড় মাইল রেল লাইনজলমান চট্টগ্রাম ও নাজিরহাটের মধ্যে বাস চলাচল এখন পুরােপুরি বন্ধ।
সিলেটে বন্যা কবলিত মানুষের সাহায্যে সিভিল ডিফেন্স ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী নিয়ােগ করা হয়েছে। সিলেট শহরে বন্যার্তদের জন্য তিনি সাহায্য শিবির খােলা হয়েছে। জেলার ৭টি থানার ২৫টি ইউনিয়নের দু লাখ বাসিন্দা ক্ষতির সম্মুখীন। সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির সােমবার আরাে অবনতি ঘটেছে। বন্যা এখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
এইদিন সকালে কানাইঘাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জে সুরমা নদী বিপদ সীমার উপরে যথাক্রমে ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি, ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদী বিপদ সীমার উপরে যথাক্রমে ৩ ফুট আড়াই ইঞ্চি ও এক ফুট চুনারাঘাটে খােয়াই নদী বিপদ সীমার উপরে ৫ ফুট গােয়ালন্দে পদ্মা নদী বিপদ সীমার উপরে ১ ফুট সাড়ে ৩ ইঞ্চি ও গড়াই রেল সেতুর কাছে গড়াই নদী বিপদ সীমার উপরে সাড়ে ৩ ইঞ্চি উঁচু দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।
সােমবার সারা দেশেই কম বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে সিলেটের শেওলা থেকে। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৭৫ ইঞ্চি। এছাড়া সকাল নয়টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘন্টায় সিলেটের জুরীতে ৫ দশমিক ৫১ ইঞ্চি, সিলেটে ৩ দশমিক ২০ ইঞ্চি মাইজদী কোর্টে দেড় ইঞ্চি ও কুমিল্লায় ১ দশমিক ৪ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম থেকে দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি জানিয়েছেন সােমবার ফটিকছড়ি থানার নারায়ণহাটে হালদা নদীতে বন্যার প্রচন্ড স্রোতে একটি খেয়া নৌকা ডুবে যায়। মাঝিসহ ৩০ জন যাত্রীর মধ্যে ২৯ জন বহুকষ্টে সাঁতরে প্রাণরক্ষা করে। কিন্তু নারায়ণহাট বাজার হাইস্কুলের শিক্ষক জনাব মােহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সলিল সমাধি হয়েছে। পরে অবশ্য তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রতিনিধি জানান, সােমবার চট্টগ্রামের বন্যার অবস্থার আরাে অবনতি ঘটে। হালদা নদীতে বিপদসীমার সাড়ে ৬ ফুট উপরে প্রবল স্রোত প্রবাহিত। এর দুপাশে অনেক স্থানে বাড়ির উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। হালদার উপনদী মন্দাকিনীর দুপাশের বাঁধে প্রতিটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ফটিকছড়ি থানার ১০টি ইউনিয়ন, হাটহাজারী থানার ৫টি ইউনিয়ন ও রাউজান থানার ৫টি ইউনিয়নের সকল গ্রাম এখন প্লাবিত। ফসলের মাঠে প্রবল স্রোতের ঢেউ। তিনটি থানার কমপক্ষে এক হাজার কাঁচাঘর সেতুতে ভেসে গেছে। অধিবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বন্যার্ত মানুষের সাহায্যে অভিযান পরিচালনার… উদ্দেশ্যে ফটিকছড়ি থানায় দুজন ম্যাজিস্ট্রেট হাটহাজারী থানায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও রাউন থানায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করেছেন। তারা জাতীয় দলের স্থানীয় কর্মীদের সহযােগিতায় ত্রাণ কাজ চালিয়ে যাবেন। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি।
সিলেট দৈনিক বাংলার সিলেট প্রতিনিধির প্রতিবেদনে জানা গেছে সিলেট জেলার সব নদীতে জলস্ফীতি বিপদসীমার উপরে আরাে বাড়ছে। সিলেটের সাতটি থানার ২৫টি ইউনিয়নের দুলাখ লােক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ। সদর মহকুমার কানাইঘাট থানার বন্যার অবস্থার ভয়াবহ। এর নয়টি ইউনিয়নের সবগ্রামই এখন জলস্লান। এতে দুই হাজার বাড়ি বন্যায় ভেসে গেছে। প্রায় এক লাখ লােক আশ্রয়হীন বললেই চলে। জমিতে আউশ, আমন ও বােরাে আমনের চারা পানির নিচে। কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর বাঁধে দুটি স্থানে মারাত্মক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে খােয়াই নদীর বাঁধে তিনটি স্থানে ভাঙনের ফলে হবিগঞ্জ থানার ৫টি ও চুনারােঘাট থানার ৩টি ইউনিয়নের গ্রাম এলাকায় বন্যার পানি দ্রুত ঢুকে পড়েছে। হবিগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জে সড়কপথে বন্যার স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
নােয়াখালী: নােয়াখালী থেকে দৈনিক বাংলার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, নােয়াখালী চট্টগ্রাম ও ফেনী চট্টগ্রাম সড়কপথ বন্যায় ডুবে গেছে। সড়ক তাই বিচ্ছিন্ন। শােভাপুর ব্রীজের কাছে সড়কের উপর দিয়ে বন্যার স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এদিকে ফেনী ও বিলােনিয়া রেল যােগাযােগও এখন হুমকির সম্মুখীন। পরশুরাম থানা পুরােপুরি ও ফেনী থানার কিছুসংখ্যাক গ্রাম প্লাবিত।
রংপুর: আমাদের রংপুর প্রতিনিধি জানান তিস্তা নদীর বন্যা এখন রংপুর শহরের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের চারপাশে নীচু এলাকা ডুবে গেছে। রাঙ্গাচারা থানায় সিসিমারী বাধের উপর কয়েকটি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ২৯ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!