You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.07.26 | পর্যাপ্ত সার মজুত: প্রয়ােজন সুষ্ঠু বন্টন | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

পর্যাপ্ত সার মজুত: প্রয়ােজন সুষ্ঠু বন্টন

জনগণ আমন ফসলের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থার কাছে প্রতি সার মজুত রয়েছে এবং থেকে আরাে সার আমদানী করা হচ্ছে। এছাড়া ঘােড়াশাল সার কারখানায় ইউরিয়া সার উৎপাদন। শুরু হয়েছে। কেবল সুষ্ঠু বিতরণের ব্যবস্থা করা হলে আমন ফসলের জন্য সারের কোন সংকট হবে না। কৃষি উন্নয়ন সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন যে কৃষি মন্ত্রণালয় সারের সুষ্ঠু বিতরণের উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা করেছেন। কৃষিমন্ত্রী জনাব সামাদ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারকালে জানান যে সারের সুষ্ঠু বিতরণের উপায় এখনাে উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়নি। তাঁর মন্ত্রণালয় এ নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা করছেন। এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএডিসি এর গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুত থাকা সত্ত্বেও কৃষকদের মধ্যে সার বিতরণ করা হচ্ছে না। বিতরণ পদ্ধতি সংক্রান্ত সরকারী নির্দেশের অপেক্ষায় সার বিতরণ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। কৃষকদের অভিমত: বর্তমানে বীজতলার জন্য কিছু সার বিতরণ করা দরকার। নতুবা ভাল চারা তৈরি করা যাবে না।
জানা গেছে যে আসন্ন আমন ফসলের জন্য দেড় লাখ টনেরও বেশি ইউরিয়া সার দরকার হবে। এর মধ্যে বর্তমান বিএডিসি-এর কাছে এক লাখ টন ইউরিয়া সার মজুত আছে। ২২ লাখ টন সার বিদেশ থেকে আমদানীর ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। শীগ্রই তা এসে পৌছুবে। ইউরিয়া সারের অবশিষ্ট অংশ স্থানীয় উৎপাদন থেকে পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। | এছাড়া, টিএসপি এবং এমপি সারের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা আসন্ন আমন ফসলের চাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃত্ত থাকবে। জানা গেছে যে আমন ফসলের জন্য প্রায় ৫৫ হাজার টন টিএসপি সার দরকার হবে। এর মধ্যে ৮০ হাজার টনের মত সার সরকারের কাছে মজুত আছে। ৩০ হাজার টন আমদানী পর্যায়ে উৎপাদন থেকে পাওয়া যাবে ১৫ হাজার টনের মত।
আর এমপি সারের প্রয়ােজন হবে প্রায় ১৭ হাজার টন। বিএডিসি-এর কাছে মজুত রয়েছে ১২ হাজার টন। আমদানী পর্যায়ে রয়েছে ১০ হাজার টন। অতএব আসন্ন আমন ফসলের চাহিদা পূরণের জন্য সারের কোন অভাব হবে না। ওয়াকিফহাল মহলের অভিমত: কেবল বিতরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা দরকার। যাতে কৃষকগণ ন্যায্য মূল্য সার পেতে পারেন।
উল্লেখ্য যে গত মাসে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠক জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার কৃষক অভিযােগ করেছিলেন যে প্রদত্ত সার পুরােপুরি কৃষক এর কাছে পৌছে না। শতকরা ৩০ ভাগ কালােবাজারে বিক্রি হয়।
অতএব, জাতির জনকের ইচ্ছা অনুযায়ী লক্ষ্য রাখা উচিত, যাতে আসন্ন আমন ফসলের সময় সরকার সার কৃষকদের কাছে যথাযথভাবে পৌছে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে জড়িত ফসল উৎপাদন করে তার থেকে বিপ্লবের কর্মসূচি সফল করে তােলার জন্য কৃষকগণ খুবই আন্তরিক। কিন্তু সার ও কীটনাশকসহ প্রয়ােজনীয় সহায়কী (ইনসপুটস) যথাসময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে কৃষকদের কাছে পৌছলে কৃষকদের মধ্যে নিরাপত্তার সঞ্চার হতে পারে। অতএব, আমন ফসলের জন্য সার বিতরণের যে ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে সুনিশ্চিত করা উচিত।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ২৬ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত