৭টি নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে
অধিকাংশ নদ-নদীতে বন্যার পানি আবার বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে। সাতটি প্রধান নদীতে প্রবল জলস্রোত বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গৌহাটি থেকে ইউএন আই এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে: ব্রহ্মপুত্র ও এর প্রধান প্রধান শাখানদীসমূহে পানি দ্রুত বাড়ছে। এবং সাত জায়গায় বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আর এর ফলে আসামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আশংকাজনক মােড় নিয়েছে। ঢাকায় ওয়াকেফহাল মহলের ধারণা উজান এলাকা আসামের এই বন্যার অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া অচিরেই ভাটি অঞ্চল বাংলাদেশের নদ-নদীতেও দেখা দেবে বা দিচ্ছে। বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ দফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে শনিবার গােয়ালন্দের কাছে পদ্মা নদীতে বিপদসীমার সাড়ে আট ইঞ্চি উপরে কানাইর ঘাটের কাছে সুরমা নদীতে বিপদ সীমার ৫ ফুট ১ ইঞ্চি উপরে, ছাতকের কাছে সুরমা নদীতে বিপদসীমার ৩ ফুট ১ ইঞ্চি উপরে লেওলার কাছে কুশিয়ারা নদীতে বিপদ সীমার ২ ফুট ১০ ইঞ্চি উপরে ফেঞ্চুগঞ্জের কাছে কুশিয়ারা নদীতে বিপদসীমার এক ইঞ্চি উপরে ও গােয়াইনঘাটে গােয়াইন নদীতে বিপদ সীমার ১ ফুট সাড়ে ৯ ইঞ্চি উপরে বন্যার স্রোত বয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে হালদা নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
সামগ্রিকভাবে যমুনা, পদ্মা, মেঘনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, গড়াই, কুমার, সুরমা, কুশিয়ারা, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে আজ রােববার জলস্ফীতি আরাে বাড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আবার প্রবল একটানা বর্ষণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার আকাশেও গত চব্বিশ ঘন্টা ঘন মেঘের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শনিবার সকাল নয়টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় সিলেটে ৫ দশমিক ৩১ ইঞ্চি, ছাতকে ৭ দশমিক ৫০ ইঞ্চি ও শ্রীমঙ্গলে ৬ দশমিক ৪০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি জানান, একটানা প্রবল বর্ষণের ফলে হালদা নদীতে জলস্ফীতি আবার বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে শঙ্খ, চেরিঙ্গার কাছে মাতামুহুরী ও রামুর কাছে রাখালী নদীতেও বন্যার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। প্লাবনে ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান থানার রহমগ্রাম ও বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত। দিনরাত বিরামহীন বৃষ্টিতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নাগরিক জীবন প্রায় বিপর্যস্ত। বিভিন্ন বিপণীকেন্দ্র ও কাঁচাবাজারে বেচা কেনা প্রায় অসাধ্য। স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযােগ্যভাবে কম।
অন্যদিকে সিলেটে সুরমা নদীর প্রচন্ড স্রোতে একটি নাফ ভেঙ্গে যায়। এটি স্থানীয় জনগণের তৈরি ছিল। এতে কানাইঘাট ইউনিয়নের তেলিয়াচর, গৌরীপুর, কিষাণপুর, লিজহেরেয়া উত্তর ও দক্ষিণ নয়াহাটি, নয়াখান, মেহেরপুর ও দুর্লভপুর গ্রাম প্লাবিত ! ঘর বাড়িতে বন্যার পানি দ্রুত ঢুকে পড়েছে। গ্রামবাসীদের এখনই নিরাপদ আশ্রয় প্রয়ােজন।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ২৭ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত