You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.07.28 | চট্টগ্রামের ৪৮টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত: রংপুরে ভাঙ্গন | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

চট্টগ্রামের ৪৮টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত: রংপুরে ভাঙ্গন
কয়েকটি স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

ক্রমাগত প্রবল বর্ষণের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে। অর্থনীতি ঘটেছে রংপুর কুড়িগ্রাম ও আরাে কয়েকটি স্থানের পরিস্থিতির। পানি বাড়ছে দেশের প্রায় সবকটি নদীতে। পদ্মা, যমুনা, হালদা, গড়াই, সুরমা, ঘােয়াই, কুশিয়ারা, গােয়াইন, মুহুরী, শঙ্খ, বাকখালী ও তিস্তা নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে।
চট্টগ্রামের ৪৮টি ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই কমবেশি বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে এবং এখানকার প্রায় সবকটি নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে চট্টগ্রাম থেকে দৈনিক বাংলার নিজস্ব প্রতিনিধি জানিয়েছেন। এর মধ্যে নাজিরহাটের কাছে হালদা নদীর পানি বিপদসীমার সাড়ে চার ফুট ওপরে উঠে গেছে। গত তিনদিনে চট্টগ্রামে বৃষ্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ ইঞ্চি।
এ পর্যন্ত এই এলাকার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ থানা হচ্ছে ফটিকছড়ি ও চকোরিয়া। এ দুটি থানার ২০টি ইউনিয়ন এখন আংশিকভাবে বন্যাকবলিত। নাজিরহাট কলেজ ও ছাত্রাবাস তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হালদার বন্যায় ফটিকছড়ির কয়েক শ বাড়িঘর ভেসে গেছে। ফটিকছড়ির বন্যা কবলিত ১০টি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণ স্কুল মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে।
হাটহাজারী সাতটি ইউনিয়ন, সাতকানিয়ার ছয়টি এবং টিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নের বন্যার পানি ঢুকেছে। হাটহাজারীর দুই মাইল উত্তরে চকরিয়াতে চট্টগ্রাম নাজিরহাট রাস্তার প্রায় আধ মাইল এলাকা তিন ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। হালদা ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের আরাে যে তিনটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে সেগুলাে হচ্ছে মাতামুহুরী শংখ ও বাঁকখালী।

কক্সবাজার
কক্সবাজার থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন। গত দুদিনের অবিরাম বর্ষণে কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। মাতামুহুরী ও বাকখালী নদী বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রাস্তায়ানি উঠে যাওয়ার রামুর কাছে নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে।
দেশের অন্যান্য কয়েকটি স্থান থেকেও পরিস্থিতি অবনতির খবর পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বাের্ডের পক্ষ থেকে গতকাল জানান হয়েছে: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, গড়াই, কুমার, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, সুরমা, খােয়াই, গােমতী ও মুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত হয়েছে। এসব নদীতে পানি আরাে বৃদ্ধি পাবার আশংকা রয়েছে। হার্ডিঞ্জ সেতু ও গােয়ালন্দে পদ্ম, গড়াই রেল সেতুতে গড়াই, ছাতক ও সিলেটে সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেওলাতে কুশিয়ারা, হবিগঞ্জে খােয়াই এবং গােয়াইনঘাটে গােয়াইন নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। গােয়ালন্দে পদ্মা বিপদসীমার ১ ফুট ১ ইঞ্চি ও গােয়াইনঘাটে গােয়াইন নদী বিপদসীমার প্রায় আড়াই ফুট ওপরে রয়েছে।
জগন্নাথগঞ্জে যমুনা বিপদসীমার পৌনে দুই ফুট ওপরে উঠে গেছে বলে জামালপুর থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়ছে। গত দুদিন ধরে জামালপুরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এই অস্বাভাবিক বৃষ্টির ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অবনতি ঘটেছে রংপুরের বন্যা পরিস্থিতির। তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার দুই ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে দৈনিক বাংলার নিজস্ব প্রতিনিধি জানিয়েছেন। সবচেয়ে আশংকাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীর ভাঙন। গঙ্গাছাড়া ও লক্ষ্মীতাড়ি ইউনিয়নের মােট ৫৭টি বাড়ি নদীর ভাঙনে ধ্বসে গেছে। এই এলাকার অধিবাসীরা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধা হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে ফসলহানিরও খবর পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রাম পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটছে বলে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রংপুরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিই দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্য। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাকশালকে মেহনতি মানুষের সত্যিকার সংগঠন হিসেবে গড়ে তােলার কাজে এগিয়ে আসার জন্য দেশের মেহনতি মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রােববার বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণী সরকারী কর্মচারী সমিতির এক বিশেষ কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে বাকশাল সম্পাদক ওই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিদানের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় বিপ্লব শুরু করেছেন। তাই আজ রাজনীতিবিদ কৃষক শ্রমিক সাধারণ জনগণকে তার পাশে দাঁড়াতে হবে।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ২৮ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত