অপ্রচলিত পণ্য রফতানি বৃদ্ধির ব্যাপক উদ্যোগ
১৯৭৪-৭৫ অর্থ বছরে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য অগ্রগতি হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে মােট ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে একশ এক কোটি টাকার অপ্রচলিত পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে সরকার অপ্রচলিত পণ্য রফতানী বাড়ানাের জন্য যে সব কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করা গেলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে বলে মঙ্গলবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরাের মহা পরিচালক জনাব এনাম আহমদ চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে বলেন।
উল্লেখ্য যে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৬। এর আগে এর সংখ্যা ছিল ৩৫। জনাব চৌধুরী আরাে বলেন, রফতানী উন্নয়ন ও বিদেশে বাংলাদেশের পণ্যকে পরিচিত করে তােলার জন্য বাংলাদেশ এবার বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নেবে এবং বিদেশে বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র খুলবে। দেশেরও আয়ােজন করা হবে এতদসংক্রান্ত সেমিনারের। এছাড়া ব্যক্তিগত ও সমবেত প্রচেষ্টার রফতানীযােগ্য পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে এবং জনগণকে রফতানী উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে বাংলাদেশে প্রচারাভিযান। শুরু করা হবে বলেও তিনি জানান।
এ বছর নূতন যেসব দেশে পণ্য রপ্তানি হয় সেগুলাে হলাে আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, মালদ্বীপ, তিউনিসিয়া, উগান্ডা, দোহা, আপারভােল্ট, মালটা, জ্যামাইকা, নিকারাগুয়া, ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ ইয়েমেন, প্যারাগুয়ে ইত্যাদি। এছাড়া যেসব পণ্য বিদেশে প্রথমবারের মত রফতানী হয় তার মধ্যে রয়েছে তামাক, ঝাড় না, বাঁশেরশলা, আগরবাতি, দেশলাই, নাইলন সুতাে, পশুখাদ্য, বৈদ্যুতিক ক্যাবল, নারকেলের ছােবড়া মাদুর, কচছপ, কফি মানুষের চুল ডাকটিকেট ইত্যাদি। ১৯৭৩-৭৪ সালের তুলনায় গত বছর অপ্রচলিত পণ্য রফতানীর পরিমাণ বেড়ে প্রায় শতকরা ৩৭ ভাগ। পক্ষান্তরে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের রফতানি হ্রাস পায়।
চলতি বাণিজ্য মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে অপ্রচলিত পণ্য রফতানী বাড়াবার জন্যে রফতানী উন্নয়ন ব্যুরাের কার্যক্রম ও পরিধি আরাে বাড়ানাে হবে বলে তিনি জানান। গত বছর যেসব পণ্য রফতানীর পরিমাণ বিশেষভাবে বাড়ে তার মধ্যে রয়েছে প্রাণীর আয় ১৪ লাখ ২১ হাজার টাকা থেকে ২০ লাখ ৫২ হাজার টাকা তেঁতুলে ৬৩ হাজার টাকা থেকে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, অশােষিত ঔষুধ ও হাজার টাকা থেকে ১৯ হাজার টাকা, ফলমূল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা ইত্যাদি।
বর্তমান মুহূর্তে বিদেশে পণ্য রফতানীর ক্ষেত্রে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার ও যােগাযােগের অভাব ছাড়াও রয়েছে জাহাজ সমস্যা। এই জাহাজ সমস্যা সমাধানের জন্য উচ্চতর পর্যায়ে একটি শিপিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি গঠন কিছুদিন অন্তর অন্তর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালােচনা করা ছাড়া প্রতি মাসে রফতানীকারকদের সুবিধার্থে একটি শিপিং বুলেটিন প্রকাশ করে। এছাড়া বাংলাদেশ ও নিকটবর্তী অন্যান্য দেশের সাথে একযােগে পণ্য রফতানীর সুযােগ সুবিধা বাড়াবার জন্য যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা চলছে। বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, বিদেশে যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে ৭৪-৭৫ সালে সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানী হয় তার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪৪ কোটি টাকা। যুক্তরাজ্য ২৯ কোটি টাকা। রাশিয়া ২৪ কোটি টাকা প্রধান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানীকারী দেশ হচ্ছে ইরাক ও সুইডেন এবং তৃতীয় প্রধান দেশগুলাে হচ্ছে ভারত, বেলজিয়াম, মিশর, ইটালী ও সিঙ্গাপুর। মহাপরিচালক আরাে বলেন, সুয়েজ খাল উন্মুক্ত হবার পর রফতানী বাণিজ্যে যে অগ্রগতি হবে বলে আশা করা গিয়েছিল তা হয়নি। তার কারণ সুয়েজ খাল সারচার্জ বাবদ অতিরিক্ত শতকরা সাড়ে বারাে ভাগ শুল্ক ধার্য করেছে।
তবে ১৯৭৪-৭৫ সালের রফতানী বাণিজ্যের উল্লেখযােগ্য দিক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি হ্রাস পেয়ে নতুন বাজার সৃষ্টি হওয়া। এর ফলে রাস্তাঘাট কয়েক দেশে পণ্য রফতানির নির্ভরশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন মধ্যপ্রাচ্যে রফতানী ১০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এ বছর বাংলাদেশ প্যারিস, মার্সাই, জাগ্রেব ও বার্লিন আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ, ফিনল্যান্ডে বাংলাদেশ সপ্তাহ পালন। বিদেশে আমাদের দূতাবাস পণ্য প্রদর্শনী বা ডিসপ্লের ব্যবস্থা। প্রদর্শনী বা ডিসপ্লের ব্যবস্থা। প্রদশর্নীসহ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন বিশ্বের ৪৪টি দেশের তথ্য সম্বলিত পুস্তিকা প্রকাশ, আগামী হেমন্তে দেশে রফতানী সপ্তাহ পালন, ঢাকায় আন্তর্জাতিক মেলার আয়ােজন। সেমিনার সিম্পােসিয়ামের ব্যবস্থা ইত্যাদি উদ্যোগ নেয়া হবে।
পণ্য রফতানী উন্নয়ন ব্যুরাের মহাপরিচালক আরাে বলেন, বাংলাদেশে যেসব কাঁচামাল রয়েছে আর সাহায্যে রফতানীদের পণ্য তৈরির মাধ্যমে রফতানী বৃদ্ধি করাই হচ্ছে আদায়ের লক্ষ্যে। যেমন চামড়ার দ্রব্য, তৈরি কাপড়, নারকেলের ছােবড়া কাঁচা ফলমূল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ইত্যাদি। তিনি বলেন সুইডেনের সাহায্যে এ বছর থেকে তিন বছর মেয়াদী রফতানী উন্নয়ণ সম্পর্কে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন বাংলাদেশের বাণিজ্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মােচন করেছে। ইতিমধ্যে তারা আমাদের দেশকে স্টেশনারী দ্রব্য ও দারচিনি দিয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে সিমন্টসহ অন্যান্য পণ্য আসবে এবং তারাও আমাদের কাছ থেকে পাট ও পাটজাত দ্রব্য ক্রয় করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ২৩ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত