স্বাধীনতার ইতিহাস আওয়ামী লীগ এর নেতা বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গী জড়িত: মনসুর
অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে সুখী সমাজ গড়াই লক্ষ্য
প্রধানমন্ত্রী জনাব এম মনসুর আলী স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি এবং জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, জাতির সার্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নের জন্যেই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য নয়।
বাসসর খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী বুধবার নবনিযুক্ত গবর্নরদের প্রশিক্ষণ কোর্সের সকালের অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে একথা বলেন। তিনি বলেন, পার্টি মনে করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল শেষ কথা নয়, শেষ লক্ষ্যে পৌঁছার উপায় মাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি সাধনের মধ্য দিয়ে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দুশ বছরেও ঔপনিবেশিক শােষণ নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে একটি শােষণমুক্ত সমাজ কায়েমের পথ করেই দ্বিতীয় বিপ্লব তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে। কিন্তু তাই বলে দ্বিতীয় বিপ্লবই শেষ বিপ্লব নয়। যতক্ষণ না মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর হবে এবং তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে এই প্রক্রিয়া চলবে।
জাতীয় দলের সেক্রেটারী জেনারেল জনাব মনসুর আলী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস আওয়ামী লীগ ও এর নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করেছেন। আবার তিনি দ্বিতীয় বিপ্লব পরিচালনার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলােচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংযােগ গড়ে তােলার এবং উপনিবেশিক শােষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরােধকে দৃঢ়তর করার জন্যেই আওয়অমী লীগের জন্ম হয়েছে। ১৯৫২-র ভাষা আন্দেলন ছিল জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ভাষাকে ধংস করার উপনিবেশিক নীতি প্রতিরােধের প্রথম সক্রিয় সংগ্রাম।
মনসুর আলী বলেন: ১৯৫৪-র নির্বাচনে জাতি আওয়ামী লীগের প্রতি তার স্বার্থহীন সমর্থন প্রদর্শন করেছেন। তখন থেকেই হয়েছে আমাদের জাতীয় জাগরণের সূত্রপাত। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু যে ছয় দফা আন্দোলনের সূচনা করেন তা ছিল বাঙ্গালি চাতির স্বাধীনতা সগ্রামের মহাসনদ।
ইয়াহিয়ার চক্রান্ত
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক জান্তা ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনও এক ইতিহাস। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের সর্বাত্মক সমর্থন পেয়েছেন। তার দল সেই সময়ের জাতীয় পরিষদের প্রায় সব আসন দখল করেছে।
ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন সামরিক জান্তা নির্বাচনের এরূপ ফলাফলের পরও বাঙ্গালি জাতির স্বার্থ বিরােধী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু তখন জাতির স্বার্থকে তুলে ধরেছিলেন এবং রক্ষা করেছিলেন। সামরিক জান্তা জাতীয় পরিষদের অধিবেশন নিয়ে টালবাহানা শুরু করে দিল। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি জনসাধারণের তুলনাহীন সমর্থনের কথা প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করান।
যখন থেকে স্বাধীনতার সংগ্রামের শুরু
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের জন্মক্ষণ থেকেই স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয় এবং কতগুলাে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘােষণায় তা চূড়ান্ত পর্যায়ে। পৌছে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই এই স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ২৪ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত