You dont have javascript enabled! Please enable it!

সম্মিলিত দায়িত্ব নিয়ে দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করতে হবে: মনসুর

প্রধানমন্ত্রী জনাব এম মনসুর আলী বলেছেন, আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক সূচিত দ্বিতীয় বিপ্লবকে সম্পূর্ণভাবে সফল করে তােলা। বাসসর খবরে বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার চলতি বাজেট অধিবেশনের শেষদিনে জাতীয় সংসদে সংসদের নেতা। জনাব মনসুর আলী তার সমাপনী ভাষণে দ্বিতীয় বিপ্লবকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের আন্তরিক সহযােগিতা কামনা করেন।
জনাব মনসুর আলী বলেন, জনগণের কল্যাণের জন্য বঙ্গবন্ধুর গৃহীত সকল ব্যবস্থা সাফল্যমণ্ডিত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ইতিহাসে ব্যর্থতা বলে কোন কিছু জানা নেই। গভীর আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিপ্লবের সাফল্যের পথেও কোন রকমের প্রতিবন্ধকতা এসে দাঁড়াতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে বৈপ্লবিক পদক্ষেপসমূহের প্রয়ােজন ছিলাে এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর বৈপ্লবিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু বৈপ্লবিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোন কিছু ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
বর্তমান বাজেট অধিবেশনের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে জনাব মনসুর আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব সূচনার পর এটাই ছিল সংসদের প্রথম অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে গৃহীত বাজেট জাতির জীবনে নয়া আশা-আকাঙ্ক্ষার সঞ্চার করেছে। বিদেশে বাজেটে প্রশংসিত হয়েছে। বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জনাব মনসুর আলী বলেন, সংসদের চলতি অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি বটে। তবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও উপদেশেই সবসময় সংসদ সদস্যদের তাদের দায়িত্ব পালনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি বলেন, সর্বদা কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু সংসদের সাথে মিলিত হতে সংসদে এসেছেন।
বঙ্গবন্ধুর কমনওয়েলথ সম্মেলনে যােগদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক আন্তর্জাতিক ফোরামে যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছেন, তাতে বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করেছে। তিনি বলেন, নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলাে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যে সগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বার্থের প্রতি সুদৃঢ় সমর্থন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন, সকল উন্নয়নশীল দেশই তা সমর্থন করেছে।
জনাব এম মনসুর আলী বলেন, ঐ আন্তর্জাতিক ফোরামে পাকিস্তানের সাথে পাওনা সম্পদের ভাগাভাগির প্রশ্নটি বঙ্গবন্ধু যেভাবে দৃঢ়তার সাথে তুলে ধরেছেন, এতে ঐ প্রশ্নের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভে সাহায্য করেছে। জাতির জনকর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিয়েতনাম ও কম্বােডিয়ার সংগ্রামী মানুষের বিজয়েই আমাদের উপর রাষ্ট্রের নীতির সাফল্য প্রমাণ করে। তিনি বলেন, বিশ্বের যেকোন অঞ্চলে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত বীর জনতার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপনের নীতি বাংলাদেশ অব্যাহত রাখবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামে সমর্থন জ্ঞাপনের নীতি সামনে রেখেছে বাংলাদেশ ভিয়েতনাম ও কম্বােডিয়ার জনগণের সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলাে।
নয়া জেলা প্রশাসন বিধি সম্পর্কে জনাব মনসুর আলী বলেন, এতে সুখী ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে নয়া যুগের সূচনা হয়েছে। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের এই নয়াবিধির গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘুণেধরা পুরাতন ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন উপযােগী নতুন পদ্ধতি প্রবর্তনই ঐ নয়া জেলা প্রশাসন আইনের লক্ষ্য। জনাব মনসুর আলী বলেন, নিজ নিজ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে জনগণের কল্যাণ সাধনই নয়া ব্যবস্থার লক্ষ্য। এতে নিজেদের সমস্যা সমাধানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযােগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরখানেকের মধ্যেই নানা পর্যায়ে প্রশাসন পরিষদ গঠন করা হবে। তিনি বলেন, নয়া ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় বিষয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণ ও সরকারকে বেশ ঘনিষ্ঠ নিয়ে আসবে। তিনি বলেন, দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের প্রথম পদক্ষেপ জেলা প্রশাসন পরিষদ গঠন। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হবে থানা প্রশাসন পরিষদ গঠন।
প্রধানমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী নয়া জেলা প্রশাসন ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যদের আন্তরিক সহযােগিতা কামনা করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সূচিক বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপ্লবের নিজস্ব কার্যধারা রয়েছে। তবে এটাকে বৈপ্লবিক উপায়ে ঈপ্সিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করে তােলার ব্যাপারে গবর্নর সংসদ সদস্য ও আমাদের সকলের সমান দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, এর ব্যর্থতা অর্জন হবে আমাদের সকলের ব্যর্থতা।
জনাব মনসুর আলী বলেন, শীঘ্রই জেলা প্রশাসন পরিষদ ও বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি ঘােষণা করা হবে এর দুটি সংস্থা বিপ্লব সফল করে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। ভাষণ শেষ করার পূর্বে সংসদের নেতা সংসদের কাজ দক্ষতা অথচ অত্যন্ত সহনশীলতার সাথে পরিচালনার জন্য স্পীকার জনাব আবদুল মালেক উকিলকে অভিনন্দিত করেন। চলতি বাজেট অধিবেশনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে সহযােগিতার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি জাতীয় প্রেস, বেতার, টিভি এবং সংসদ সচিবালয়ের অফিসার ও কর্মচারীকেও ধন্যবাদ জানান।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১৮ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!