সংসদে সেরনিয়াবাতের ঘােষণা
আরাে ২৪ হাজার একর এলাকায় নতুন বন সৃষ্টি করা হবে
বন্যানিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ বন, মৎস্য ও গবাদিপশু দফতরের মন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত সােমবার জাতীয় সংসদকে জানান যে এক বছর দেশে আরও ২৩টি পশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে। দেশে বর্তমানে পশু হাসপাতালের মােট সংখ্যা হচ্ছে তিনশ ২৯টি।
বাসস এর খবরে বলা হয়, মন্ত্রী সংসদকে আরও জানান যে সরকার দেশে আরও ২৪ হাজার একর জুড়ে নতুন বন সৃষ্টির আনুমানিক লক্ষ্য স্থির করেছেন। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন এলাকায় নতুন বন সৃষ্টির কাজ এর মধ্যেই শুরু করা হয়েছে। জলােচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য উপকূলীয় ৫ শত একর এলাকায় নতুন বন গড়ে তােলা হবে। সংসদে বন, মৎস্য ও গবাদিপশু উন্নয়ন খাতে মঞ্জুরী দাবী বিবেচনাকালে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন থানায় পশু সহকারীদের প্রশিক্ষণের জন্য ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। জনাব সেরনিয়াবাত বলেন, জাতীয় ভিত্তিতে গবাদিপশুর উন্নয়নের কাজে সরকার এগিয়ে যাচ্ছেন। মন্ত্রী বলেন, এ জন্যে এবারের বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই বর্ধিত অর্থ পশু হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি বর্তমান গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণ ও গবাদিপশুকে টিকাদানের কাজে ব্যয় করা হবে। মন্ত্রী বলেন, আগামী বছরে আরাে গবাদিপশু, প্রজনন খামার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
জনাব সেরানিয়াবাত বলেন, চলতি বছরে দেশে ১৭টি নয়া কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ও ১১৫টি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন ৪শতটি উন্নত জাতের ষাড় কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। উপকূলীয় এলাকায় উপযােগী পরিবেশ দেখে মহিষ খামার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরে তেজগাঁও ও সিলেটের দুধে গবাদিপশু খামারের উন্নয়ন সাধন করা হবে। রাজশাহীতে দুগ্ধ গবাদিপশুর নতুন খামার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, চলতি মরশুমে ঢাকা নগরীতে ৫০ হাজার লিটার দুধ সরবরাহ বাড়ানাে হবে।
জনাব সেরানিয়াবাত বলেন, খুলনার মৎস্য খামার সম্প্রসারণ করা হবে। দেশে নতুন বন সৃষ্টির ওপর সরকারী গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বরলন, সরকার বেআইনী দখলদারীদের কাছ থেকে ঢাকায় ১৩ হাজার ৪শ ১০ একর, ময়মনসিংহে ৫ হাজার ৮শত ৬৬ একর, টাঙ্গাইলে ৩ হাজার ৭শত ১৭ একর বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরে সরকার এর মধ্যেই ১০ হাজার একর এলাকায় উন্নত ধরনের নতুন বন গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, ২৪ হাজার একর এলাকায় নতুন বন সৃষ্টির নির্ধারিত লক্ষ্যের মধ্যে ৪ হাজার একর এলাকায় শিল্পের জন্য নরম কাঠ জন্মানাে হবে।
মন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে আরও ৮ হাজার ৫ শশা বন এলাকা জরিপ করা হবে এবং বনাঞ্চল সৃষ্টির জন্য এলাকা নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, এমন কি চলতি মরশুমেই ঐসব এলাকায় বৃক্ষরােপণ শুরু হতে পারে। মন্ত্রী বলেন, এ বছর দশ হাজার একর বনাঞ্চল সংরক্ষিত করা হবে। [ নােয়াখালীর সংসদ সদস্য জনাব নুরুল হক নােয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা বরাবর নতুন গজিয়ে ওঠা চরাঞ্চলে বন সৃষ্টির প্রয়ােজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি উপকূলীয় এলাকায় নারকেল গাছ লাগানাের ব্যাপক সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জনাব নুরুল হক হাতিয়ার একটি মৎস্য পােতাশ্রয়ে প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। পটুয়াখালীর জনাব আবদুল বারেক মিয়া আলােচনায় অংশ নিয়ে বলেন, প্রত্যেক থানায়ই পশু হাসপাতাল স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কারণ, এতে করে গবাদিপশু সম্পদের প্রতি যথাযথভাবে নজর রাখা সম্ভব হবে। তিনি উপকূলীয় চরাঞ্চলে গবাদি পশুর খামার প্রবর্তনের সুপারিশ করেন।
দিনাজপুরের সরদার মােশাররফ হােসেন দেশের বনজসম্পদ রক্ষার প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখন ক্ৰমেক্রমে বনজ সম্পদ বিলুপ্তির সম্মুখীন। চট্টগ্রামের ডা. (ক্যাপ্টেন) আবুল কাসেম বলেন, দেশের বনজসম্পদ রক্ষা করতে হলে বন বিভাগ থেকে দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হবে।
টাঙ্গাইলের জনাব আবদুস সাত্তার বলেন, মধুপুরে জাতীয় পার্ক নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করার জন্য সরকারের সম্ভাব্য সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তিনি টাঙ্গাইলের বনাঞ্চলে পুনরায় বৃক্ষ রােপণের প্রয়ােজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের বনাঞ্চল বেআইনীভাবে দখল ও সংরক্ষিত বন কেটে ফেলায় তার বনজসম্পদ এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
প্রায় ৫০০ বছর কাল পর্তুগীজ শাসনে থাকার পর গত ১২ জুলাই আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের ক্ষুদ্র দ্বীপ পাওটোমি প্রিন্সিপি স্বাধীনতা অর্জন করে এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সে দেশের সরকার ও জনগণের জন্য একটি শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেছেন।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১৫ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত