আণবিক শক্তি কমপ্লেক্স স্থাপিত হচ্ছে
বাংলাদেশে একটি আণবিক শক্তি কমপ্লেক্স স্থাপিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রাথমিক কাজে হাত দেয়া হয়েছে এবং প্রয়ােজনীয় জমি দখলের কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে বলে নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেছে। আধুনিক গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক তৎপরতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ধরনের একটি কমপ্লেক্স স্থাপিত হলে তা হবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার একটি উল্লেখযােগ্য নিদর্শন।
বাংলাদেশের এই প্রথম আণবিক শক্তি কমপ্লেক্স স্থাপিত হবে ঢাকার সাভারে। সাভারের গণকবাড়ি এলাকায় এর জন্য দখল করা হয়েছে ২৫০ একর জমি। এই পুরাে এলাকা জুড়ে গড়ে উঠবে কমপ্লেক্সটি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে পাকিস্তান আমলে আণবিক গবেষণার জন্যে ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি আণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। বাঙালী বিজ্ঞানীরা। এখানকার সীমিত সুযােগ সুবিধার বেশ কিছু উল্লেখযােগ্য গবেষণা কাজ করলেও পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ঔদাসিন্যের শিকারে পরিণত হয়ে এই কেন্দ্রটির কোনরকম উন্নয়ন বা সম্প্রসারণ তখন আর হয়নি। স্বাধীনতার পর আণবিক গবেষণা কাজের ওপর যথাযথ গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী তেল ও জ্বালানী সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে আণবিক শক্তির ব্যবহারের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ও এক্ষেত্রে প্রয়ােজনীয় কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
সাভারের এই প্রস্তাবিত আণবিক শক্তি কমপ্লেক্সে অনেকগুলি বিভাগে গবেষণা কাজ হবে এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে প্রয়ােজন অনুযায়ী আরাে নতুন নতুন বিভাগ স্থাপন করা হবে। এখানে বসানাে হবে ১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি আণবিক রিএ্যাকটর। এটি গবেষণা রি-এ্যাকটর হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এই রি-এ্যাক্টর ছাড়াও স্থাপন করা হবে স্বাস্থ্য ও আণবিক মেডিক্যাল কেন্দ্র আণবিক প্রযুক্তিবিদরা গবেষণা কেন্দ্র ইলেকট্রনিক কেন্দ্র কম্পিউটার কেন্দ্র প্রভৃতি। রি-এ্যাক্টর বসানাের ব্যাপারে ভারতের ভাবা আণবিক শক্তি কমপ্লেক্সের সাথে প্রাথমিক আলাপ আলােচনা শেষ হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ডা. ইনাস আলীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ভারতে গিয়েছিলেন। তারা বােম্বাইয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। ভারতের একটি প্রতিনিধিদলও খুব শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বছর দুই-তিনের মধ্যে রি-এ্যাক্টরটি বসাবার কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে পুরাে কমপ্লেক্সটির কাজ স্পন্দন করার সময়সীমা ধরা হয়েছে দশ বছর।
অবশ্য রি-এ্যাক্টরটি বসানাে শেষ হলেই, এই কমপ্লেক্সের কাজ মােটামুটি শুরু করা যাবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত বর্তমান আণবিক শক্তি কেন্দ্রের কাজকর্ম সাভারে স্থানান্তর করা হবে।
কেন্দ্রের তৎপরতা সাভারে স্থানান্তর করা হলেও এই কেন্দ্রটি থাকবে এবং গবেষণা কাজে ব্যবহারের জন্যে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১৫ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত