উন্নয়নের প্রধান দায়িত্ব প্রকৌশলী ও কারিগরদের
বঙ্গবন্ধু, বলেছেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের শতকরা ৮০ ভাগ দায়িত্ব প্রকৌশলী ও কারিগরদের ওপর ন্যস্ত। সততা, আন্তরিকতা ও আত্মেসমর্থের মনােভাব নিয়ে তারা এই দায়িত্ব পালন করলে দেশ দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বাের্ড এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ডের প্রকৌশলী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের যৌথ সম্মেলনের উদ্বোধন করে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কোন কিছুরই অভাব নেই। আমাদের পানি আছে পর্যাপ্ত। আছে বিষয়ে ললিত। তিনি বলেন আমাদের পানি সম্পদের গুরুত্ব কোন আগেই পেট্রোলিয়মের চেয়ে কম নয়।
বঙ্গবন্ধু বলেন, সব কিছু থাকা সত্বেও আমাদের অভাব আছে একটি। তা হলাে আন্তরিকতার অভাব। প্রকৌশলীরা আন্তরিক তার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে, সম্ভব হবে। এই সাথে সম্ভব হবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি প্রয়ােজন উপযােগী যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি বলেন, বিদেশী বিশেষজ্ঞদের চেয়ে আমাদের দেশের সমস্যাবলী সম্পর্কে আমরা অনেক বেশী ওয়াকিফহাল। আমরা যে ভাবে আমাদের বন্যা সমস্যাকে বুঝি শীতের দেশে মানুষের পক্ষে সেভাবে বােঝা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বন্যাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং সেচ ও অন্যান্য কাজের মাধ্যমে পানিকে যদি মানুষের দেশ দ্রুত সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠবে। পানিকে যদি দেশের কল্যাণে লাগানাে যায় আর এই সাথে যদি গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ শক্তিকে কাজে লাগানাে যায় তকে পল্লী উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেন।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপনিবেশবাদী মাথাভারী পরিচালনা ব্যবস্থার বিলােপ ঘটিয়ে স্বাধীন দেশে নতুন চেতনায় নতুন আদর্শের ভিত্তিতে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ডর্দযের প্রকৌশলী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের যৌথ সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এই দুটি বাের্ডের প্রশাসন ব্যবস্থার কথা, উল্লেখ করে বলেন, চেয়ারম্যান তার বাের্ড, ইঞ্জিনীয়ার তার ওপর আবার সেক্রেটারীয়েট, সেক্রেটারী, জয়েন্ট সেক্রেটারী সেইসাথে আবার একটা ডিপাটমেন্ট—এত কিছুর প্রয়ােজন নেই। তিনি বলেন, আমি সেক্রেটারিয়েটাকে বিলােপ করতে চাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, এ ব্যাপারে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছি। বাের্ডের চেয়ারম্যান পদে উপযুক্ত লােক বসিয়ে তাকেই সেক্রেটারীর পদমর্যাদা দিলে শুধু বাের্ড দিয়েই কাজ চলতে পারে। বোের্ডই সরাসরি মন্ত্রী বা সরকারের অধীনে থাকবে। এতে করে ফাইল টানাটানি বন্ধ হবে। সােজাসুজি কাজ হবে।
এই প্রসঙ্গে পেট্রো বাংলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে সেক্রেটারীয়েট তুলে দিয়েছি।
বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি সবকিছু সােজসুজি দেখতে চাই। সােজা লাঙল ধরতে চাই। সব ব্যাপারেই সােজা হতে হবে। উপনিবেশবাদী আমলের চিন্তাধারা থেকে মুক্ত হয়ে আপনাদের কাজ করতে হবে। টেবিল, চেয়ার আর ফাইলের কাজ কম করে ময়দানে নামুন।
তিনি পুরনাে ব্যবস্থাকে বাতিল করে নতুন বিপ্লবের আদর্শে কাজ করে যাবার জন্যে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১১ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত