You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.07.12 | নৌ চলাচল আইনের সংশােধন প্রয়ােজন: লঞ্চডুবিতে নিহত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

নৌ চলাচল আইনের সংশােধন প্রয়ােজন
লঞ্চডুবিতে নিহত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই

বাংলাদেশে লঞ্চডুবিতে কোনাে যাত্রী মারা গেলে লঞ্চ মালিককে কোনাে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। অত্যধিক যাত্রী বহনের জন্যেও লঞ্চ মালিককে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয় না জরিমানা দেয়া ছাড়া। নৌ চলাচলের ব্যাপারে ১৯৭১ সালে আইএমপিবি নামে প্রণীত আইনটি নৌ চলাচলে দুর্নীতিকে আশ্রয় দিয়ে চলছে। অবিলম্বে এই আইন সংশােধন প্রয়ােজন।
গত সাড়ে তিন বছরে দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবেছে ৪২টি এবং লােক মারা গেছে সাড়ে ছয় শ। এটা নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের হিসেব। এই হিসেব যেসব লঞ্চডুবির যেগুলাে কর্তৃপক্ষ নৌ-গর্ভ থেকে উত্তোলন করেছেন।
কর্তৃপক্ষের সূত্রেই জানা এরও বাইরে অনেক লঞ্চ ডুবেছে যার খবর কর্তৃপক্ষের কাছে আসেনি। এবং এসব ডুবিতে কত লােক মারা গেছে তাও সকলের অগােচরে রয়ে গেছে। যেমন৭৪ সালে রাঙ্গামাটিতে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবেছে।
ধরলার গ্রাস থেকে কুড়িগ্রাম কি রক্ষা পাবে? সাড়ে ৫ লাখ টাকা গচ্চা গেল?
সাড়ে পাঁচলক্ষ টাকা তাে গচ্চা গেলােই এখন ক্ষতিগ্রস্থ শহরের কি হবে। এই প্রশ্নই শহরবাসীকে আতংকিত করে তুলেছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বাের্ড ধরলা নদীর গতি পরিবর্তনের জন্য একটি নালা খনন কার্য অনুমােদন করেন। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভুলে পরিকল্পনার দরুণ প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা একরূপ গচ্চা গেল। নদীর গতি পরিবর্তন হয়নি। বরং এখন দুর্দিন ডেকে এনেছে।
অভিজ্ঞ মহল থেকে জানা গেছে যে নদীর গতি পরিবর্তন নালাটি ভুল পরিকল্পনা অনুযায়ী খনন করা হয় এবং গতি পরিবর্তনের জন্য নালাটির যতটুকুর গভীরতা প্রয়ােজন ছিল তা করা হয়নি। আরাে জানা গেছে যে স্থান দিয়ে গতি পরিবর্তন নানা হওয়া উচিৎ ছিল সে স্থান দিয়ে নালাটি করা হয়নি। ফলে নদীর গতি পরিবর্তনের চাইতে নদীর ভাঙ্গনের কাজ ত্বরান্বিত করেছে। তদুপরি নদীর গতি পরিবর্তনের জন্য গতি পরিবর্তন নালার মুখের সামনে নদীতে পাইলিং অথবা বসে বাঁধ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু নালার মুখে যে বাঁশের পাইলিং দেওয়া হয়েছিল বলে নদীর স্রোত খননকৃত নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়নি। বরং সম্প্রতি নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই স্রোতের চাপে বাঁশের পাই লিং ভেসে গিয়ে প্রবল বেগে পানির স্রোত ধাবিত হতে থাকে। তার ফলে আরাজী পলাশ বাড়ি ডিগ্রীরচর, সবারকুঠি এখন ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। শত শত পরিবার এক মারাত্মক আশংকায় দিন কাটাচ্ছে। ভরা বর্ষায় কি হবে কে জানে।
অন্যদিকে কুড়িগ্রাম শহর এক ভয়ংকর হুমকীর সম্মুখীন হয়েছে। গত বছর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ একটি বন্যানিরােধ বাঁধ নির্মাণ করেন। তার একটি বিশেষ অংশ গত বছর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ একটি বন্যা নিরােধ বাঁধ নির্মাণ করেন। তার একটি বিশেষ অংশ গতবছর বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু এক বছরে কর্তৃপক্ষ তাঁর কোন প্রকার সংস্কার করেননি। ফলে বাঁধটির বিধ্বস্ত অংশ দিয়ে সম্প্রতি নদীর পানি সরাসরিভাবে ঢুকে শহরের পার্শ্ববর্তী পুরাতন ধরলায় আঘাত করছে। ফলে কুড়িগ্রাম শহর এখন হয়ে পড়েছে বিপদাপন্ন। বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাবে শুধু অর্থের অপচয়ই হয়নি, মানুষের দুর্দিন ডেকে এনেছে। তদুপরি শহর রক্ষাকারী ধরলা নদীর বাঁধটির নানা স্থান বিধ্বস্ত হয়ে আছে। তার কোন প্রকার সংস্কার করা হয়নি। ভরা বর্ষায় কি পরিস্থিতির উদ্ভব হবে তা বলা কঠিন। তবে শহরবাসী আতংকিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এখন দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়ােজন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাকশাল নেতৃবর্গ ও উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন এবং তারা অবিলম্বে এ ব্যাপারে সক্রিয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১২ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত