You dont have javascript enabled! Please enable it!

আন্তর্জাতিক সমবায় দিবসের আহ্বানের সঙ্গে বাংলাদেশ একান্ত: মনসুর আলী
সমবায়ই হবে শােষণহীন সমাজব্যবস্থার ভিত্তি

প্রধানমন্ত্রী জনাব এম মনসুর আলী এবারের আন্তর্জাতিক সমবায় দিবসের আহ্বানের সঙ্গে বাংলাদেশের পূর্ণ সংহতি ঘােষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, এবারের আন্তর্জাতিক সমবায় দিবসে বিশ্বশান্তিকে সংহত করা সারা দুনিয়ার শােষিত ও নির্ধারিত জনগণের মুক্তি এবং পৃথিবী থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতার অভিশাপকে দূর করার জন্য যে আহ্বান জানানাে হয়েছে বাংলাদেশ তার সঙ্গে একাত্ম।
তিপান্নতম আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস উপলক্ষে গতকাল ঢাকায় ওয়াপদা মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের আয়ােজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, বিশ্বজোড়া খাদ্য ঘাটতি, অর্থনৈতিক মন্দা এবং স্নায়ুযুদ্ধ পরিস্থিতি আজ উন্নয়নশীল দেশগুলি তথা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির সম্মুখে একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, অস্ত্র প্রতিযােগিতার জন্যে আজও যে বিপুল সম্পদ এবং জনশক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে তা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং ক্ষুধা দারিদ্র্য দূর করার কাজে নিয়ােজিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সমবায় দিবসের আহ্বানে গুরুত্ব ও তাৎপর্যায়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, কল কারখানায়, ক্ষেতে-খামারে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের আদর্শকে সার্থক করে ভােলার জন্যে আমাদের আত্মনিয়ােগ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এদেশ তথা সারা বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমবায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। বঙ্গবন্ধুর বিঘােষিত দ্বিতীয় বিপ্লবকে সফল করে তােলার জন্যে সমবায়ের যে অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী তার উল্লেখ করেন। নতুন উদ্দীপনা ও প্রেরণা নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, সমাজ থেকে দুর্নীতির মূল্যোৎপাটন ও জাতীয় সংহতি গড়ে তুলে এক সুখী সমৃদ্ধ সমাজ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধনের জন্যে তিনি সকল সমবায়ী ও দেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দ্বিতীয় বিপ্লবের যুগান্তকারী ঘােষণায় যে বহুমুখী পল্লী সমবায় কর্মসূচির বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেছেন তা অবশ্যই শােষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি গড়ে তুলবে। বঙ্গবন্ধু যে সােনার বাংলা প্রতিষ্ঠার আকাক্ষা পােষণ করেন সেই শােষণহীন সমৃদ্ধ সােনার বাংলার ভিত্তি রচনা হবে বহুমুখী পল্লী সমবায়ের বাস্তবায়নের মাধ্যমে। দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণের জন্যে জাতীয় অর্থনৈতিক তৎপরতায় সকল ক্ষেত্রে সকল শক্তি নিয়ােগের জন্যে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমবায় স্থানীয় সরকার এবং পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী ফণী মজুমদার। সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে সংগ্রামের প্রতীক। তিনি বলেন, জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিঘােষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের আলােকে সমবায় আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে উপলব্ধি করতে হবে। তিনি বলেন জাতির জনক দ্বিতীয় বিপ্লবের যে ঐতিহাসিক ঘােষণা রেখেছেন তা দেশের মেহনতি তথা দুঃখী জনগণের মুখে হাসি ফোটানাের জন্যে। তিনি বলেন সমবায় আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্যকে সফল করে তােলার জন্য সমবায়ীদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত দায়িত্ব সম্পর্কে আত্মসচেতন হতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামাে গড়ে তােলার জন্যে বিক্ষিপ্ত জনশক্তির সদ্ব্যবহারের ওপর তিনি গুরুত্ব আরােপ করেন।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ৬ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!