বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট আলােচনার পূর্ণ বিবরণ
গত বৃস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর অনুষ্ঠিত সাধারণ আলােচনার কিছু অংশ শুক্রবার দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। বাদবাকি অংশ নিচে দেওয়া হলাে:
সদস্যরা জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সূচিত দ্বিতীয় বিপ্লবকে সফল করে তােলার উদ্দেশ্যে একতা ও নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। ড. আলাউদ্দীন (রাজশাহী) শােষণমুক্ত নয়া সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে দেশের প্রয়ােজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তিনি রাজশাহী-ঈশ্বরদী সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার প্রয়ােজনীয়তার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যে যত শীঘ্র সম্ভব রাজশাহী বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ করার আহ্বান জানান।
সর্দার মােশাররফ হােসেন (দিনাজপুর) বলেন সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা সবাই যদি জাতির সেবায় আত্মনিয়ােগ না করি তাহলে দ্বিতীয় বিপ্লব সফল হতে পারে না। তিনি উত্তরাঞ্চলের কোন কোন এলাকায় সমানভাবে গাছপালা কেটে ফেলার ঘটনার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং ফুলবাড়িয়া-পলাশবাড়ি সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করার ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর চালু করার আহ্বান জানান।
অধ্যক্ষ হুমায়ুন খালেদ (টাঙ্গাইল) কৃষকদের কাছে সময়মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণ সার ও কীটনাশক দ্রব্য সরবরাহের আহ্বান জানান। তিনি সবুজ বিপ্লবকে সার্থক করে তােলার উদ্দেশ্যে। শক্তিচালিত পাম্পের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য কৃষি সরঞ্জামের প্রাপ্তিসাব্রতা সুনিশ্চিত করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলােতে শিক্ষার সমৃদ্ধ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
জনাব আমানুল্লাহ খান (বগুড়া) সবুজ বিপ্লবকে সার্থক করে তােলার জন্যে কৃষিক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়ােজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, কৃষকদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। কৃষি বিপ্লবকে সফল করে তােলার জন্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে সরকারী অফিসার ও কর্মচারীদের নিয়ােগ করতে হবে। কৃষকদের যাতে কোন দুর্ভোগ পােহাতে না হয় কিংবা সার, ঋণ ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ বিলম্বের দরুণ কৃষকদের ফসল যাতে বিনষ্ট না হয় কর্মচারীদের তা দেখতে হবে। তিনি দেশের সর্বত্র কৃষি সরঞ্জামের মেরামত কারখানা স্থাপনেরও প্রস্তাব করেন।
জনাব আমানুল্লা খান উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলাের যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নগরবাড়ি থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত সড়ক পুননির্মাণ এবং বাংলাদেশ বিমানের রুট বগুড়া ও রাজশাহী পর্যন্ত সম্প্রসারণের জোর আহ্বান জানান।
তিনি উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলােতে আখ উৎপাদন বাড়ানাের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা অবলম্বনের এবং চিনিকলগুলােকে সব ধরনের আবহাওয়ার উপযােগী সড়কের দ্বারা সংযােগ স্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আখ উৎপাদন বাড়ানাের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হলে চিনি রফতানী করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। তিনি বগুড়া শহরের উন্নয়নের প্রয়ােজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
আলােচনায় অংশ নিয়ে কুষ্টিয়ার জনাব আবদুর রউফ চৌধুরী উৎপাদন ক্ষেত্রে জনশক্তির সদ্যবহারের জন্য শ্রমমুখী পরিকল্পনার প্রয়ােজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, জনশক্তিকে কাজে না লাগিয়ে কোন অগ্রগতি অর্জনই সম্ভব নয়। তিনি বেকারসমস্যার সমাধানের জন্য গ্রামাঞ্চলে ধানভাঙ্গার দেশীয় পদ্ধতি বিড়িশিল্প ও কুটিরশিল্প পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে যুক্তি দেখান।
জনাব রউফ চৌধুরী কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। জনাব নাজিমুদ্দীন আহমদ (ময়মনসিংহ) আশা প্রকাশ করেন যে নয়া বাজেটে প্রস্তাবিত অর্থ বরাদ্দ গ্রামাঞ্চলে পৌছার এবং শােষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজে তা ব্যয় করা হবে।
জনাব আবদুস সাত্তার (টাঙ্গাইল) একশ টাকার নােট অচল ঘােষণাকে অভিনন্দিত করে বলেন, মুদ্রাস্ফীতি রােধের জন্য নিঃসন্দেহে এটা একটা উত্তম পদক্ষেপ। তিনি বেআইনী দখল থেকে বনজসম্পদ রক্ষা করার জন্য ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সরকার মন্ত্রণালয় এবং বন, মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রণালয়।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ৫ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত