You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.07.01 | ৭৫-৭৬ সালের রফতানি লক্ষ্য ৫২০ কোটি টাকা- নয়া আমদানী ও রফতানী নীতি ঘােষণা | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

৭৫-৭৬ সালের রফতানি লক্ষ্য ৫২০ কোটি টাকা
নয়া আমদানী ও রফতানী নীতি ঘােষণা

বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী খােন্দকার মুশতাক আহমদ সােমবার রাতে জুলাই ডিসেম্বর বাণিজ্যে মওসুমের জন্য একটি উদার আমদানী নীতি এবং ১৯৭৫-৭৬ অর্থ বছরের রফতানী নীতি ঘােষণা করেছেন। ১৯৭৫-৭৭ সালের রফতানী লক্ষ্য ৫২৩ কোটি টাকা এবং আগামী ছয় মাসের আমদানী লক্ষ্য ৫৫০ কোটি টাকা হয়েছে। দেশে প্রতিটি খাতে উৎপাদন সর্বাধিক পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বিদেশে বর্তমান ও নতুন বাজারে প্রচলিত ও অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি সর্বাধিক পরিমাণ বৃদ্ধি এই আমদানী ও রফতানী নীতির লক্ষ্য।
জুলাই-ডিসেম্বর মওসুমের জন্যে ঘােষিত এই আমদানী নীতি বাংলাদেশের অষ্টম আমদানী নীতি। এই নীতি ঘােষণা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কাঁচামাল খুচরা যন্ত্রাংশ ও ভােগ্যপণ্য আমদানীর জন্য এতে সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর শুভ প্রতিক্রিয়া দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রতিফলিত হবে এবং পর্যাপ্ত সরবরাহের সুফল সাধারণ মানুষের নিকট পৌছাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পক্ষান্তরে রফতানী নীতির কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রচলিত পণ্যের রফতানী বৃদ্ধি এবং অপ্রচলিত ও নতুন নতুন পণ্যের রফতানী বাজার সৃষ্টি করে রফতানী আর যথাসাধ্য সর্বাধিক করাই এই রফতানী নীতির লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমাদের ক্রমবর্ধমান আমদানীর চাহিদা রফতানীর আয় বৃদ্ধি হতে মেটানােই বাঞ্ছনীয়।
১৯৭৫-৭৬ সনের রফতানী নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭৫-৭৬ সনের রপ্তানী পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে জুলাই-মে এই ১৯ মাসে রফতানীর মাধ্যমে টাকার পুরাতন মানে মােট ২৭০ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা অর্থাৎ নতুন মনে ৪৩০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। ১৯৭৫-৭৬ সনের রফতানীর লক্ষ্য ৫২০ কোটি টাকায় স্থির করা হয়েছে যা ১৯৭৪-৭৫ সনের রফতানী আয়ের তুলনায় প্রায় ১১ ভাগ বেশি। এতে পাট ও পাটজাত দ্রব্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের রফতানীর লক্ষ্যমাত্রা ১০১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ঐসব অন্যান্য পণ্যের রফতানী ১৯৭৪-৭৫ সনের তুলনায় শতকরা ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পাবে।
রফতানী বাণিজ্যে নিযুক্ত ব্যবসায়ীদের এবং রফতানী পণ্য উৎপাদনকারীদের উপযুক্ত সুদে প্রয়ােজনীয় ঋণদান নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগ, প্রতিষ্ঠান এবং বণিক সমিতি ফেডারেশনের প্রতিনিধিবর্গের সমন্বয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রচলিত প্রথানুযায়ী রফতানী ক্ষেত্রে বিক্রয় কর আবগারী শুল্ক ও আমদানী শুল্কের রেয়াতদান অব্যাহত থাকবে। পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং চা ছাড়া অন্যান্য পণ্য রফতানী আয়ের ক্ষেত্রে শতকরা ২৫ ভাগ পর্যপ্ত বর্তমানে প্রচলিত আয়কর রিবেট অব্যাহত থাকবে।
মুদ্রামান পুননির্ধারণের আগে রফতানীকারক এক পাউন্ড স্ট্যালিং মূল্যের পণ্য রফতানী করলে নগদ ভরতুকিসহ সর্বাধিক ২৬ টাকা আয় করতেন। বর্তমানে সেক্ষেত্রে রফতানীকারক ৩০ টাকা পাবেন। রফতানী প্রসারের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত মুদ্রামান বিশেষ সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নতুন আমদানী নীতিতে আগামী মওসুমের শিল্পের কাঁচামাল এবং বিবিধ ভােগ্যপণ্য আমদানীর প্রয়ােজনীয়তা মেটানাের জন্য বর্তমান বিনিময় হারে সর্বমােট ৫৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সংস্থান করা সম্ভব হবে বলে খােন্দকার মুশতাক আহমদ তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন। এ বরাদ্দ বিগত অর্থাৎ জানুয়ারী-জুন বাণিজ্য মৌসুমের প্রাপ্ত বরাদ্দের চেয়ে প্রায় শতকরা ২২ ভাগ। বেশি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অপেক্ষাকৃত অধিক অর্থ সংস্থানের ফলে আগামী মৌসুমের জন্যে একটি উদারতর আমদানী কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। প্রত্যাশিত বৈদেশিক সম্পদের মধ্যে ২০৮ কোটি টাকা। বাকী টাকার সংস্থান হবে পণ্য বিনিময় চুক্তি এবং আর্নার স্কীমের অধীনে। বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদের প্রায় দু-তৃতীয়াংশ দাতা দেশ থেকে আমদানীর শর্তযুক্ত অর্থের।
শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলাে যাতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে সেজন্য মৌসুমের শুরু থেকে নগদ অর্থ বরাদ্দ ও অন্যান্য উৎস থেকে লাইসেন্স দেবার ব্যবস্থা হবে বলে ঘােষণা করেন।
পাট, বস্ত্র, চিনি নিউজপ্রিন্ট ও কাগজ জ্বালানী তেল শােধন সার, ইস্পাত, সাবান ইত্যাদি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলির উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য তাদের আমদানী প্রয়ােজনীয়তার শতকরা ১০০ ভাগই মেটানাের মত বৈদেশিক মুদ্রা বরাদ্দ করা হয়েছে। অন্যান্য শিল্পেরও অধিকাংশকে শতকরা ১০০ ভাগ হিসাবে লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব হবে।
আমদানী নীতির বৈশিষ্ট্য
জুলাই-ডিসেম্বর বাণিজ্যে মরশুমের আমদানী নীতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:
১. মােট বরাদ্দ ৫৫০ কোটি টাকা। এ বরাদ্দ জানুয়ারী-জুন মরশুমের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি।
২. ওয়েজ আর্নার স্কীম অব্যাহত থাকবে।
৩. মােট বরাদ্দের শতকরা ৫৩ ভাগ (২৯১ কোটি টাকা) আসবে বৈদেশিক ঋণ ও মঞ্জুরী থেকে। অবশিষ্ট ৪৩ ভাগ (২৫৯ কোটি টাকা) পাওয়া যাবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে।
৪. প্রধান প্রধান ও রফতানীকারক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শতকরা ১০০ ভাগ আমদানী লাইসেন্স দেওয়া হবে।
৫.কৃত্রিম আঁশের কাপড়ের ওপর থেকে শুল্ক শতকরা ২০০ ভাগ থেকে ১২৫ ভাগ হাস।
৬. ৫৩টি আইটেম ওয়েজ আর্নার স্কীমের অধীনে থাকবে। ৪০টি আইটেম থাকবে বাণিজ্যিক আমদানী লাইসেন্সের অধীনে।
৭. ওষুধ আমদানী খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৭ কোটি টাকা।
৮. বাণিজ্যিক আমদানী লাইসেন্সে রং ও ক্যামিকেল আমদানী করা যাবে।
৯. এই বাণিজ্য মরশুমে সাইকেল আমদানী হবে মােট ৫ হাজার।
১০. দেশে ৪৫ হাজার রেডিও এবং ৩ হাজার টেলিভিশন সেট সংযােজনের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ যন্ত্রপাতি আমদানী করা হবে।
১১. জ্বালানী, ভােজ্য, তেল, সিআই শিট, সিমেন্ট নারিকেল তেল ও বেবী ফুড পর্যাপ্ত পরিমাণ
আমদানীর ব্যবস্থা।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত