You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়ছে

আসুন প্রাকৃতিক আঁশ পাট ব্যবহার করি, আগামী বংশধরদের জন্য কম কলুষিত পরিবেশ রেখে যাই দুনিয়ার সকলের মুখে আজ কাল এমন কথা শােনা যাচ্ছে। সম্প্রতি বিদেশ সফর শেষ করে ফিরে বাণিজ্য ও বর্হিবাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মােসলেহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেছেন। তিনি একটি সরকারী প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে বিদেশে গিয়েছিলেন বাসস এ খবর দিয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বের সবখানে লােকে বলছে, আমাদের বংশধরদের ভবিষ্যকে ধ্বংস করার কোন অধিকার নেই তাদের নিষ্কলুষ পরিবেশে বসবাসের সুযােগ দিতে হবে। সারা বিশ্বে বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলােতে দূষিত আবহাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে চেতনা বাড়ছে। কলাসহ খাদ্য সামগ্রী কৃত্রিম আঁশের তৈরি পাট বা থলেতে না রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লােকের ভয় কৃত্রিম আঁশে তৈরি থলের সাথে সূর্যালােকের সম্পর্ক স্বাস্থ্যের জন্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। দূষিত আবহাওয়ার কারণে নানান রােগে আক্রান্ত হওয়ার খবর আজকাল প্রায়ই পাওয়া যায়। যে কোন সচেতন লােক বলবেন, বিনষ্ট করার দিক দিয়েও পাট কৃত্রিম আঁশের চেয়ে ভাল।
আবহাওয়া কলুষিত না করে কৃত্রিম আঁশের তৈরি থলে বা আধার বিনষ্ট করা যায় না। কৃত্রিম আঁশ পােড়ানাে হলে তা বাতাসকে কলুষিত করে কিন্তু ব্যবহারের অযােগ্য পাটের বস্তা পুড়লে তাতে আবহাওয়া কলুষিত হয় না। বাতাস কলুষিত করা ছাড়াও কৃত্রিম আঁশ এখন আবার বাজার হারাতে শুরু করেছে। তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃত্রিম আঁশের দামও বেড়েছে। পক্ষান্তরে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের মূল্য আকর্ষণীয় থাকবে।
ব্যবসায়ীক কারণে এখন ব্যবহারকারীরাও কৃত্রিম আঁশের বদলে পাটকে বেছে নেবে। বিশেষজ্ঞদেরও মত তেলের মূল্যবৃদ্ধি হেতু কৃত্রিম আঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাট তার হারানাে বাজার ফিরে পাবে। তাছাড়া পাউন্ড স্ট্যালিংয়ের সাথে টাকার বিনিময় হার পুনঃনির্ধারণের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের মণ টন প্রতি বাইশ পাউন্ড কমে গেছে।
জনাব মােসলেহউদ্দিন আহমদ বলেন বিদেশের বহু জুট মিল যারা কৃত্রিম আঁশকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছিল অথবা করবে তারা ভাবছিল তারা আবার পাট ব্যবহারে ফিরে আসছে। ইউরােপের দুটো জুট মিল তিন মাস বন্ধ ছিল এবং প্রায় বিক্রি করা হবে ঠিক হয়েছিল সেই মিল দুটো আবার খুলেছে এবং পাটজাত পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে। দ্রব্য রাখার পাত্র হিসেবে। পাটজাত দ্রব্যাদি ব্যবহারের আরাে সুবিধে আছে। যেমন একই পাটের বস্তা বারবার ব্যবহার করা যায়। কৃত্রিম আঁশের তৈরি ফলে একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না। পাটের থলে ঘরে ঘরে একটার উপর একটা সাজিয়ে রাখা যায়। এর ফলে অল্প পরিসরে বেশি বস্তা রাখা যায়।
পাটের থলের ভিতরের দ্রব্যাদি বস্তা না খুলে পরীক্ষা করা যায়। কামেট প্রস্তুতকারক এখন কৃত্রিম আঁশের বদলে পাটকে কার্পেট ব্যাকিং হিসাবে ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অতএব আমাদের দেশের এবং অন্যান্য দেশের পাট চাষীদের জন্য এখন আনন্দের দিন। বাংলাদেশ সরকার পাট উৎপাদনের খরচ কমানাের কতগুলাে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ভাল বীজ ও দেশী সার ব্যবহার করে এক জমিতে বেশি পাট ফলন অন্যতম। পাটের বাজার প্রসারিত হতে এটা আশা করা যেতে পারে।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!