বাকশাল কোন সাধারণ রাজনৈতিক দল নহে—একটি জাতীয় ফোরাম
বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী জনাব এম. মনসুর আলী বলেন, বাকশাল কোন সাধারণ রাজনৈতিক দল নহে—ইহা একটি জাতীয় ফোরাম। যাহারা অর্থনৈতিক মুক্তিকে বিশ্বাস করে সেইরূপ সকল স্তরের মানুষকে এই দলে স্থান দেওয়া হইবে। তিনি গতকাল (বৃহস্পতিবার) বঙ্গভবনে জাতীয় দলের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম অধিবেশনে বক্তৃতাকালে একথা বলেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়িত করার আহ্বান জানাইয়া বলেন যে, বঙ্গবন্ধু স্বয়ং জাতীয় দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করিয়াছেন। ইহা আমাদের পরম সৌভাগ্য। এই দলে সর্বস্তরের প্রতিনিধি রহিয়াছে এবং শােষণহীন সমাজ গড়ার জন্য একটি বাহিনী গড়িয়া তুলিতে হইবে।
তিনি বলেন যে, বাকশাল জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। তিনি বলেন যে, দলে শিক্ষক, ছাত্র, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা, শিক্ষাবিদ ও সরকারী কর্মচারী সকলেরই রাজনীতিতে যােগদান ও জাতীয় পুনগঠনে অবদান রাখার সুযােগ রহিয়াছে।
জনাব মনসুর আলী বলেন যে, দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেককে নিঃস্বার্থ কর্মী হইতে হইবে এবং সমস্ত জাতিকে কর্মোদ্দীপনার অনুপ্রাণিত করিতে হইবে।
তিনি বলেন, আমরা যদি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের আহ্বানে সাড়া দিয়া উহার সফল বাস্তবায়ন করিতে পারি, তবে জাতির জনক প্রবর্তিত নয়া পদ্ধতি পরবর্তী বংশধরদের জন্য জাতীয় গৌরবের বিষয় হইয়া থাকিবে।
জাতীয় দলের গঠনতন্ত্রকে ঐতিহাসিক বলিয়া বর্ণনা করিয়া তিনি বলেন যে, সমস্ত জাতি উহাকে এক বাক্যে অভিনন্দন জানাইয়াছে ও গ্রহণ করিয়াছে।
তিনি স্মরণ করাইয়া দেন যে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এক রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়া স্বাধীনতা অর্জিত হইয়াছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা হইতেছে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের উপায়।
তিনি উল্লেখ করেন যে, মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটাইতে না পারিলে স্বাধীনতা অর্থহীন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, বঙ্গবন্ধু তাঁহার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা দিয়া বুঝিতে পারিয়াছেন যে, ঐতিহ্যগত ও সনাতন পন্থায় শােষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব নয় কিংবা নিয়মতান্ত্রিক পথ ধরিয়া শতাব্দীকালের শাসন ও শােষণের অবসান সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু জনগণের মুক্তির উদ্দেশ্যে প্রাচীন ও জীর্ণ পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের আহ্বান জানাইয়াছেন।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২০ জুন ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত