দ্বিতীয় বিপ্লবের আলােকে সংবাদপত্র সম্পর্কে নূতন নীতি ঘােষণা
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্র পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যাপারে নূতন নীতি ঘােষণা করিয়া দুইটি অডিন্যান্স জারি করিয়াছেন। নূতন ব্যবস্থা অনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) হইতে সারা বাংলাদেশে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার দৈনিক বাংলা এবং বাংলাদেশ টাইমস এই চারটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হইবে। জনাব নুরুল ইসলাম পাটেয়ারী জনাব ওবায়দুল হক, শেখ ফজলুল হক মনি ও জনাব এহতেশান হায়দার চৌধুরী যথাক্রমে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টাইমস ও দৈনিক বাংলার সম্পাদক নিযুক্ত হইয়াছেন।
সরকার আরও ১২২টি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকার ডিক্লারেশন বহাল রাখিয়াছেন। এই পত্র পত্রিকাগুলি ছাড়া সরকারের বিনা অনুমতিতে অন্য কোন পত্রিকা প্রকাশিত হইবে না।
বাংলাদেশ সরকার সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিল) অডিন্যান্স ১৯৭৫ জারি করিয়া ‘বাংলাদেশ অবজারতার’ ও ‘দৈনিক বাংলা এবং ১২২টি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা ভিন্ন বাদবাকী সকল পত্র পত্রিকার ডিক্লারেশন ১৭ই জুন হইতে বাতিল করিয়া দিয়াছেন।
বাসস ও এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয়। এই অডিন্যান্স জারির অব্যবহিত পরে সরকার দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টাইমস এই দুইটি দৈনিক সংবাদপত্রও প্রকাশের সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেন। অতঃপর উক্ত চারিটি দৈনিক এবং ১২২টি সাময়িকী ছাড়া বাংলাদেশে সরকারের অনুমতি ভিন্ন আর কোন পত্রিকা বা সাময়িকী প্রকাশিত হইবে না।
সরকার যুগপৎ আরও একটি অডিন্যান্স জারি করেন।
যে সকল পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হইয়াছে, সেই সকল পত্রিকার কর্মচারীদের স্বার্থও ভবিষ্যতের প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য সরকার একটি ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করিয়াছেন। বাসস’ ও ‘এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয়, সংবাদপত্র সরকারী মালিকনাধীন সংবাদ পত্রসমূহ পরিচালনার জন্য জারিকৃত এই অডিন্যান্সের নাম হইতেছে সরকার মালিকানাধীন সংবাদপত্র (ব্যবস্থাপনা) অডিন্যান্স, ১৯৭৫। সরকার এতদপক্ষে এই সিদ্ধান্তও ঘােষণা করেন যে, অদূর ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম ও খুলনা হইতে একটি করিয়া এবং উত্তরাঞ্চলীয় কোন একটি জেলা হইতে অপর একটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হইবে।
ডিক্লারেশন বাতিলের ঘােষণা প্রকাশের অব্যবহিত পরে তথা ও বেতার দফতরের জনৈক মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান যে, বাতিল সংবাদপত্রসমূহের কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষা ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হইয়াছে।
ছাপাখানার কর্মচারীরা ভিন্ন বাতিল সংবাদপত্র সমূহের অন্যান্য কর্মচারীকে ৩০শে জুনের মধ্যে কমিটির নিকট রিপাের্ট করার জন্য অনুরােধ জ্ঞাপন করা হইয়াছে।
কমিটির সমস্যবৃন্দ হইতেছেন: জনাব মিজানুর রহমান, অধ্যাপক এম. এ. খালেদ এম. পি. তথ্য ও বেতার দফতরের জয়েন্ট সেক্রেটারী আনিসুজ্জামান খান, তথ্য ও বেতার দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারী জনাব সলিমুজ্জামান, জনাব গিয়াস কামাল চৌধুরী, জনাব আমানুল্লা খান, এম. পি (বগুড়া) এবং জনাব আবদুল গনি হাজারী। জনাব আনিসুজ্জামান খান কমিটির আহ্বায়করূপে কাজ করিবেন।
ঢাকা ও খুলনার বাতিল সংবাদপত্রসমূহের কর্মচারীদের জনাব মিজানুর রহমানের নিকট রিপাের্ট করিতে হইবে। অবজারভার হাউজে তাঁহার অফিস হইবে। চট্টগ্রামের কর্মচারীরা সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম. এ খালেদের নিকট এবং বগুড়ার কর্মচারীরা সংসদ সদস্য জনাব আমানুল্লাহ খানের নিকট রিপাের্ট করিবেন।
রাষ্ট্রপতি সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিলের এই অডিন্যান্স জারি করেন।
অভিন্যান্সে বলা হয়: পরিস্থিতির পরিপেক্ষিতে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক হইয়া পড়ে।
সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনা অভিন্যান্স বলে সরকারী সংবাদপত্রসমূহের পরিচালনা ও উন্নয়ন সাধনের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার ব্যবসায় পরিচালনার জন্য গঠিত নির্দিষ্ট কতকগুলি কোম্পানী ভাঙ্গিয়া দেওয়ার জন্যও অর্ডিন্যান্সে ব্যবস্থা। করা হইয়াছে। এই অর্ডিন্যান্স হলে সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহের জন্য সরকার পরিচালনার বাের্ড গঠন করিতে পারিবেন। সহকার বাের্ডে একজন চেয়ারম্যান এবং উপযুক্ত সংখ্যক সদস্য নিয়ােগ করিবেন।
বাের্ড অন্যান্য কাজের সহিত নিম্নলিখিত কার্যাদি সম্পাদন করিবে ;- সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহের এবং সংবাদপত্র মুদ্রণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সরকারের মালিকানাধীন ছাপাখানাসমূহের ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিককীকরণ; সরকারের অনুমতি অনুযায়ী স্বীয় পরিচালনাধীন সংবাদপত্র ও ছাপাখানা সম্পর্কে চুক্তি সম্পাদন ও কার্যকরীকণ, বাের্ড সংবাদপত্র ও ছাপাখানার পরিচালনার জন্য প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি, খুচরা যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ও অন্যান্য দ্রব্যাদি ক্রয় করিবে।
বাের্ড সুষ্ঠু, ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্বীয় দায়িত্ব সম্পাদন করিবে, যাহাতে গণসংযােগ মাধ্যমের চাহিদা পর্যায়ভাবে পূরণ হয় এবং বিদেশে গঠনমূলকভাবে প্রগতিশীল জাতীয় ভাবমূর্তি বিধৃত হয়।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ জুন ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত