You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশ আজ বহির্বিশ্বের নিকটতম প্রতিবেশী—বঙ্গবন্ধু

আজ অপরাহ্নে এখানে উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধনকালে প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষণা করেন যে, বাংলাদেশ আজ বর্হিবিশ্বের নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ার গৌলব অর্জন করিয়াছে।
প্রেসিডেন্ট বলেন: এই ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধনের ফলে বাংলাদেশের যােগাযােগ ব্যবস্থার আওতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের সুযােগ সৃষ্টি হইয়াছে। ইহার ফলে জাপান হইতে যুক্তরাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকার টেলিফোন, টেলিগ্রাম ও টেলেক্স সার্ভিসের আধুনিকতম ব্যবস্থা প্রবর্তিত হইবে।
প্রেসিডেন্ট বলেন: ভূ-কেন্দ্রের এই ঐতিহাসিক উদ্বোধন জাতীয় জীবনের এক স্মরণীয় ঘটনা। অগ্রগতির পথে আমাদের এই নূতন পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে উল্লেখযােগ্য।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জনাব এম. মনসুর আলী সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে তথ্য ও বেতার মন্ত্রী জনাব এম. কোরবান আলী, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী জনাব তােফায়েল আহমদ, ডেপুটি স্পীকার জনাব মােহাম্মদ বায়তুল্লা, ডাক ও তার দফতরের প্রতিমন্ত্রী জনাব কে. এম. ওবায়দুর রহমান, প্রতিরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরী, হুইপ জনাব মােহাম্মদ হানিফ, কানাডীয় হাই কমিশনার বাকশাল নেতৃবৃন্দ এবং পদস্থ অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কানাডীয় হাই কমিশনারও বক্তৃতা করেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ নিয়ে প্রদান করা হইল:
“পার্বত্য চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ যােগাযােগ ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধন জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা। আমাদের অগ্রগতির পথে এই পদক্ষেপ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। আজ হইতে বাংলাদেশের টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থায় এক নূতন অধ্যায়ের সূচনা হইয়াছে। এই শুভদিনে আপনাদের সাথে মিলিত হইতে পারিয়া আমি আনন্দিত।
আধুনিককালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে যােগাযােগ রক্ষার প্রয়ােজন অপরিসীম। আমাদের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে অন্যান্য যােগাযােগ ব্যবস্থার আশানুরূপ উন্নয়ন যেখানে অর্থ ও সময় সাপেক্ষ, সেখানে আন্তর্জাতিক সংযােগ রক্ষায় টেলিযােগাযােগের সর্বাধুনিক মাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভূ-কেন্দ্রের মাধ্যমে জাপান হইতে যুক্তরাজ্য পর্যন্ত স্থান সীমার মধ্যে টেলিফোন, টেলিগ্রাম ও টেলেক্স বার্তার সরাসরি আদান-প্রদানের বিস্তৃত সুযােগ সৃষ্টি হইবে। এক কথায়, বাংলাদেশ আজ হইতে বিশ্ববাসীর আরও নিকট প্রতিবেশী হওয়ার গৌরব অর্জন করিতে চহিয়াছে।
“বেতবুনিয়া উপগ্রহ যােগাযােগ ভূ-কেন্দ্র কানাডা ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযােগিতার এক উজ্জ্ব দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতা লাভের পর হইতে বাংলাদেশ যে সকল সাহায্য ও সহযােগিতা লাভ করিয়াছে, তাহা যথাযথ উন্নয়নকার্যে ব্যয় করিতে সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছে। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে উন্নয়নের অগ্রগতি সহজসাধ্য ছিল না। উপযুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করিতে এবং অর্থনৈতিক অচলঅবস্থা দূরীকরণে আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা চালাইতে হইয়াছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত, নিঃস্ব দেশের অর্থনীতির ভিত্তি গড়িয়া তুলিতে বিভিন্ন দেশের শর্তহীন সাহায্য আমরা লইয়াছি। এরূপ শর্তহীন সাহায্য গ্রহণে আমরা প্রস্তুত এবং ইহার যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কেও আমরা সর্বদা সচেতন। আন্তর্জাতিক সাহায্যে বাংলাদেশ ফলপ্রসূ ও কল্যাণকর প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষম।
“বাংলাদেশ মূলত: একটি বদ্বীপ অঞ্চল। এদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও আবহাওয়া অন্যান্য দেশের সংগে বিচার্য নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল বৎসরে পাঁচ মাস পানির নীচে থাকে বলিয়া ইহার উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাকী সাতমাস বিবেচনা করা প্রয়ােজন। ইহার জন্য অন্য দেশের বার্ষিক উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশের সাত মাসের উন্নয়নের তুলনা হইতে পারে না। যাহারা আমাদের সাহায্য প্রদান করেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও আবহাওয়া সম্পর্কে ধারণ না থাকার ফলে তাহাদের সাহায্য দান প্রায়শই সময়ােচিত হয় না এবং তা সর্বাত্মক প্রয়ােজন। মেটাতে সর্বদা সক্ষম হয় না। নানাবিধ প্রতিকুলতার মধ্যেও বিভিন্ন দেশের সহযােগিতায় বাংলাদেশ যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সাফল্য অর্জন করিয়াছে তাহা কোন অবস্থাতেই খাটো করিয়া দেখানাে চলে না।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ জুন ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!