আজ বঙ্গবন্ধু বেত বুনিয়ায় ভু-উপগ্রহ ন্দ্রে উদ্বোধন করিবেন
প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ (শনিবার) পার্বত্য চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ার ভু-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধন করিবেন।
কেন্দ্রটি চালুর সাথে সাথে বাংলাদেশ টেলিযােগাযােগের ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হইবে। এই ভূ-কেন্দ্রটির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের ভূ-কেন্দ্রগুলির সংযােগ সাধন করা হইবে এবং উপগ্রহের মাধ্যমে টেলিগ্রাম, টেলিগ্রাফ টেলিফোন ও টেলেক্স সার্কিট কাজ করিবে। টেলিফোন, টেলিগ্রাফ এবং টেলেক্স সার্কিট ছাড়াও উপগ্রহের মাধ্যমে যে কোন আন্তর্জাতিক ঘটনা টেলিভিশনে দেখানাে বাইবে। বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের পরিধি হইবে জাপান হইতে যুক্তরাজা পর্যন্ত। এই এলাকার মধ্যে অবস্থিত ভূকেন্দ্রগুলি হইতে স্থানীয় মাইক্রোওয়েভ বা সমুদ্র তলবর্তীকোএয়িবাল কেবলের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের সরাসরি যােগাযােগ স্থাপন সম্ভব হইবে।
বেতব্যুনযার ভূ-কেন্দ্রটি জাপান, হংক, সিঙ্গাপুর, ভারত (দেরাদুন) রােম, আবুধাবী এবং যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ভূকেন্দ্রগুলির সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকিবে। এই কেন্দ্রগুলি হইতে প্রয়ােজন মত বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলিকে টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংযুক্ত করা হইবে।
উপগ্রহের মাধ্যমে যােগাযােগের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বকে তিন ভাগে ভাগ করা হইয়াছে এবং প্রত্যেক ভাগের জন্য একটি করিয়া কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হইয়াছে। ইহার একটি প্রশাস্ত মহাসাগর, একটি আটলান্টিক মহাসাগর এবং তৃতীয়টি ভারত মহাসাগরের উপর। পৃথিবী বর্তুলাকার বলিয়া ভূপৃষ্ঠের এক জায়গা হইতে সবকটিকে একসাথে দেখা যায় না। তিনটির যে কোনাে একটি বা দুইটিকে দেখা যায়। বাংলাদেশ থেকে শুধু ভারত মহাসাগরের উপর অবস্থিত উপগ্রহটি দেখিতে পাওয়া যায়।
ভূউপগ্রহ কেন্দ্র চালুর আগে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক টেলিযােগাযােগের বেশীর ভাগই সম্পন্ন। হইবে হাই ফ্রিকোয়েখী ওয়ারলেসের মাধ্যমে। ইহার অনেকগুলি অসুবিধা ছিল। এইসব সার্কিটের ধারণ ক্ষমতা ছিল খুবই কম। সার্কিটগুলির নির্ভরযােগাত্য মাঝে মাঝে সত্তর শতাংশের চাইতেও হ্রাস পাইত। ইহা ছাড়া, কথাবার্তার স্বরও থাকিত খুব অস্পষ্ট। সর্বোপরি আবহাওয়ার উপর এই সিস্টেমের অতিনির্ভরশীলতা প্রায়ই অসুবিধার কারণ হইত। ভূ-উপগ্রহ টেলিযােগাযােগ চালু হওয়ার সেইসব অসুবিধা দূর হওয়ার বিরাট সুযোেগ আসিয়াছে।
উপগ্রহের মাধ্যমে টেলিযােগাযােগ প্রায় শতকরা একশত ভাগই নিশ্চিত। ইহার ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যােগাযােগের অধিক সুযােগ পাওয়া যাইবে। বিদেশের সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য এখন আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করিতে হইবে না। ইহাতে বিদেশীরাষ্ট্রগুলির সাথে যেমন বাংলাদেশের সম্পর্ক দৃঢ় হইবে তেমনি অর্থনৈতিক দিক হইতেও দেশের পক্ষে ইহা হইবে লাভজনক।
বেতবুনিয়ার এই ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি উচ্চ শক্তিসম্পন্ন মাইক্রোওয়েড যােগাযােগের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সাথে সংযুক্ত। সমগ্র বাংলাদেশ হইতে সব আন্তর্জাতিক ‘কল এই ভূকেন্দ্রের মাধ্যমে পাঠানাে হইবে। প্রাথমিকভাবে এই কেন্দ্রে ১৭টি ষ্টাক্স সার্কিট, ৫টি টেলিগ্রাফ সার্কিট, ১০টি টেলেক্স সার্কিট এবং লিজড সার্কিট কাজ করিবে। পরে এইগুলিকে আরও সম্প্রসারিত করা হইবে।
এই ভূ-কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কানাভীয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং কানাডার আর. সি. এ কোম্পানীর সাথে দুইটি পৃথক চুক্তি সম্পাদিত হইয়াছিল ১৯৬১ সালে। স্বাধীনতার পর নূতনভাবে চুক্তি সম্পাদন করা হয় এবং ১৯৭৩ সালে কাজ শুরু করিয়া ১৯৭৬ সালের প্রথমদিকে কেন্দ্রটি। কাজ শেষ হয় বলিয়া বাসস-এর খবরে প্রকাশ।
কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজে েৈবদেশিক মুদ্রায় ৮০ লক্ষ কানাডীর ডলার এবং স্থানীয় মুদ্রায় ২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা খরচ হয়। কানাডার আর. সি. এ কোম্পানী প্রকল্পটি কাজ সম্পন্ন করেন। এই কেন্দ্রটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়ােজনীয় সংখ্যক প্রকৌশলীকেও তাহারা এখানে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দান করেন।
বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র বাংলাদেশ এবং কানাডার মধ্যে বন্ধুত্ব এবং মৈত্রীর প্রােজ্জ্বল প্রতীক।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১৪ জুন ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত