You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ২৯শে ডিসেম্বর, রোববার, ১৩ই পৌষ, ১৩৮১

ভুটান রাজের বাংলাদেশ সফর

ভুটানের রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুক গত তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। ভারত সফর শেষে তিনি ঢাকায় এসেছেন। তার সঙ্গে তার বড় বোন সহ ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল রয়েছে। মহামান্য রাজাকে বিমানবন্দরের সংবর্ধনা জানিয়েছেন, আমাদের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সরকারি কর্মচারী ও গণ্যমান্য নাগরিকরা। ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ লিয়েন পো দাওয়া জারিংও রাজার সঙ্গে এসেছেন। ভুটানের রাজা ইতিমধ্যেই আমাদের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া রাজা এবং তার সঙ্গীরা জাতীয় শহীদ মিনারে মাল্যদান ও নৌবিহার করবেন। ঐতিহ্যবাহী স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভুটানের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। ভুটান তার সীমিত সংকটের মধ্য দিয়েই সেদিন আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ভুটান দেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন সেদিন আমাদের মুক্তিকামী মানুষের প্রাণে যে আনন্দের জোয়ার এনেছিল তা কোনদিন এদেশের ইতিহাস বিস্মৃত হবে না। দ্বিতীয় স্বীকৃতি দানকারী দেশ ভুটান। সে ইতিহাসও আমরা কোনদিন ভুলবো না। ভুটানের রাজার আগমনে আমাদের সরকার এবং তার প্রতিনিধিরা নিঃসন্দেহে আনন্দিত। সেদিন যারা মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি অংশ নিয়েছিল সেই সকল তরুণেরাও ভুটানের সমর্থনের স্মৃতিচারণ করে উৎফুল্লিত। বস্তুতঃ একটি জাতির মুক্তি সংগ্রাম চলাকালে কোন দেশের সমর্থন যে কতখানি আনন্দের ব্যাপার তা যুদ্ধকালীন অবস্থা ছাড়া অনুমান করা দুরূহ ব্যাপার। আমাদের মুক্তিসংগ্রামের কালে আমরা তা মর্মে মর্মে অনুধাবন করেছি। ভুটানের সরকার যদিও রাজতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত তবুও তাদের বৈদেশিক নীতি প্রগতিশীল বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলা চলে। জোট নিরপেক্ষতার পক্ষে বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের সমর্থন এবং সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তাদের কণ্ঠ সোচ্চারিত। উপমহাদেশের শান্তি প্রগতির ব্যাপারেও তারা সমানভাবে আগ্রহী। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সৌহার্দ্য বৃদ্ধির নীতি ও অন্যান্য দেশের ন্যায় আন্তরিকতাপূর্ণ। সে কারণে ভুটানের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র নীতির একটি অপূর্ব সংগীত রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে উপমহাদেশের একটি দেশ হিসেবে ভুটানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সবসময়ই সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক সহযোগিতাও স্থাপিত হতে পারে উপায় দেশের মাঝে। আমরা আশা করছি -ভুটান রাজের এই সফরকালে তেমনি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার সনদ রচিত হবে এবং বিদ্যমান সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত করার ব্যাপারে উভয় দেশের নেতৃবৃন্দ বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আমরা উত্তরোত্তর ভুটান-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নতি কামনা করি। ভুটান রাজের বাংলাদেশ সফর শুভ হোক-এটাই আমাদের কাম্য।

খোদ মার্কিনিদের বিরুদ্ধেও –

বছরটাই ভাল যাচ্ছেনা সিআইএ’র। সেই গোড়া থেকে শুরু হয়েছে নানা ভোগান্তি। দেশে-বিদেশে নানা বাদ প্রতিবাদ, নানা রকম তথ্য দলিল ফাঁস। দীর্ঘ সাত বছরের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে গ্রিসে, দ্বীপদেশ সাইপ্রাসে। চিলিতে সেই ৬৪ সাল থেকে শুরু করে আলেন্দের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছিল তাও দেশ-বিদেশের সকল মানুষের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ল্যাটিন আমেরিকার দেশ থেকেও আসছে নানা অভিযোগ। তথ্য-প্রমাণ হাতে রয়েছে এমন ইঙ্গিত দিতেও ছাড়েনি পেরুর প্রেসিডেন্ট। অস্ট্রেলিয়ায় লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় আরোহন থেকে বিরত রাখার জন্য ধিকৃত গোয়েন্দাসংস্থার বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের কথাও ধামাচাপা দেয়া যায়নি। ভারত আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বারবার। এতকিছুর পরও সিআইএ’র তরফ থেকে নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য যে সকল ‘যুক্তি’ উপস্থাপন করা হতো খোদ আমেরিকায় তাদের কর্মতৎপরতা প্রকাশ হবার পর তারও আর অবকাশ নেই। বাধ্য হয়েই তাই পদত্যাগ করতে হয়েছে সিআইএ’র কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের প্রধান জেমস এঙ্গেলটনকে। বিরাট নথিপত্র সাজিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে বিশেষ বিমানযোগে পাঠাতে হয়েছে মিস্টার কলবিকে। আর শরম ঢাকবার প্রচেষ্টা হিসেবে হেনরি কিসিঞ্জারের উপর দেয়া হয়েছে তদন্তের নির্দেশ।
জন্মলগ্ন থেকেই এই ঘৃণ্য গোয়েন্দা সংস্থা সারা দুনিয়ার মানুষের ধিক্কার কুড়িয়েছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে অন্যান্য দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহই নয়, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক উত্থান-পতনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে সিআইএ। এই সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবার যে ক্ষমতা খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধির না থাকায় যেকোনো ন্যাক্কারজনক কাজ চালিয়ে যাবার ব্যাপারে তাদের কোনো প্রতিরোধ বা প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়নি। এমনকি মিয়ামিতে কিউবার প্রতি বিপ্লবীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে সমর উপকরণসহ তাদের আক্রমণের ব্যবস্থা করে দেয়ার ব্যাপারটা কিউবা আক্রমনের ব্যবস্থা করে দেয়ার ব্যাপারটাও নাকি সিআইএ’র প্রেসিডেন্ট জন ফিটজারল্যাণ্ড কেনেডির অগোচরেই সেরেছিল। কঙ্গোর ভাড়াটিয়া বাহিনী নিয়োগ, লাওসে নিজেদের বাহিনী গড়ে তোলা ইত্যাদি নানা অপকর্মের হোতা সি আই এ আজ তার ন্যূনতম আবরণ রাখার মানসিকতাও হারিয়ে ফেলেছে। সুস্পষ্টভাবেই তারা তাই যুক্তি খুঁজে পায় আমেরিকার পছন্দ নয় এমন যেকোন সরকারকে উৎখাত করার স্বপক্ষে।
ইদানিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এবং কংগ্রেসের সদস্যরা সিআইএ’র তৎপরতায় ভীষণ রকম চটে উঠেছেন। তারা দাবি জানিয়েছেন, এই গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হোক। বেপরোয়াভাবে এদের অর্থ ব্যয় এবং দেশে-বিদেশের নিজেদের মর্জিমাফিক সরকার উত্থান-পতন, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন পরিচালনা প্রভৃতির অনুমতি দেওয়া ঠিক নয়। তাদের এই দাবি কতটুকু কার্যকরী হবে আমাদের জানা নেই -তবে বলব, সি আই এ’র অতীত এবং বর্তমান তৎপরতা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মার্কিন প্রশাসন তার উপরে মার্কিনী পুঁজি, মনোপলি এবং মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের প্রভাবের মধ্যেই এর মূল নিহিত। যতদিন তা চলতে থাকবে ততদিন আপাতঃদৃষ্টিতে কিছুটা রকমফের হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নীতিতে কোনও গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!