দেশের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ ছাত্রসমাজের উপর নির্ভর করে – বঙ্গবন্ধু
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল (মঙ্গলবার) দেশের ছাত্রসমাজকে নিজেদের ঐক্য ও শৃংখলা বজায় রাখিয়া শােষণমুক্ত একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ-দারিদ্রা ও দুর্দশায় কালাতিপাতকারী লক্ষ লক্ষ অসহায় মানুষকে পরিতৃপ্ত ও সমৃদ্ধ একটি জীবনে উপনীত করিবার উপযােগী সমাজ গঠনে আত্মনিয়ােগ করিবার আহ্বান জানাইয়াছেন। তিনি ছাত্রসমাজকে উদ্দেশ্য করিয়া বলেন যে, জাতির ভাগ্য এবং ভবিষ্যৎ বংশধরদের সুখশান্তি ছাত্রসমাজের উপরেই নির্ভর করিতেছে।
নবগঠিত জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে গতকাল (মঙ্গলবার) প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য গণভবনে গেলে বঙ্গন্ধু তাহাদের উদ্দেশ্যে এই কথা বলেন। এ জাতীয় দলের সেক্রেটারী জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী জনাব এম. মনসুর আলী, জাতীয় দলের তিনজন সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মনি ও জনাব আবদুর রাজ্জাক জাতীয় দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী গােলাম মােস্তফা এমপি, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও জাতীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তােফায়েল আহমদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বাসস জানান, জাতীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সদস্যবৃন্দ এবং সামগ্রিকভাবে ছাত্রসমাজের দারিত্বের কথা স্মরণ করাইয়া দিয়া প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তাহারা জনগণকে যতটুকু প্রেরণা দান করিতে পারিবেন জাতীয় উন্নয়নের ব্যাপারে গণসচেতনা ততখানিই সৃষ্টি হইবে। তিনি বলেন, “তােমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব দুর্বহ, কিন্তু আদর্শগত ঐক্যবদ্ধ পর্যায় তােমরা কাজ করিলে কোন সমস্যা সমাধান করানাে কষ্টকর হইবে না।”
মনােযােগের সহিত নিজেদের অধ্যয়ন চালাইয়া যাইবার জন্য ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানাইয়া জাতির জনক তাহাদিগকে চরিত্র গঠন, ঐক্য অর্জন এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম নিয়মানুবতিতা অনুশীলনের উপদেশ দেন। তিনি তাহাদিগকে ঈষা বিদ্বেষ ও অপবাদ ভুলিয়া যাইতে আহ্বান জানাইয়া বলেন, হীন মানসিকতা লইয়া মহৎ কিন্তু সাধন করা যায় না।
প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ছাত্রদিগকে অপরের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাভাব পােষণ উর্ধ্বতনদের শ্রদ্ধা করিবার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, ত্যাগের জন্য তােমাদের প্রস্তত থাকিতে হইবে এবং মহান আদর্শাবলীর স্বার্থে প্রয়ােজনের সহিত নিজদিগকে খাপ খাওরাইয়া লইবার জন্য প্রস্তুত থাকিতে হইবে।
দুর্নীতির প্রতি ইঙ্গিত দিয়া জাতীয় দলের চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু বলেন, সমাজের বুক হইতে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভবপর হইলেই দেশের বহুমুখী সমস্যার সমাধান সম্ভবপর হইবে। তাই, তিনি বলেন যে, নিজেদিগকে সৎ পথে রাখিয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করাই হইবে ছাত্র সমাজের প্রথম অঙ্গীকার।
জাতির জনক ছাত্রসমাজকে আত্ম-সমালােচনা, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি অনুশীলনের প্রয়ােজীয়তা অনুধাবনের আহ্বান জানান এবং সকল প্রকার অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সতর্ক থাকিবার উপদেশ দেন।
সমাজতন্ত্রের কথা উল্লেখ করিয়া বঙ্গবন্ধু বলেন, সমাজতন্ত্র হইল শােষণমুক্ত একটি সমাজ যেখানে বসবাসকারী সকলেই পরিতৃপ্ত ও সুখী জীবন যাপন করিতে পারিবে। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনুসরণ করিয়া ক্ষুধার্ত জনগণের মুখে হাসি ফুটাইবার উদ্দেশ্যে একই শােষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আত্মনিয়ােগ করিবার জন্য তিনি ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতির জনক উল্লেখ করেন যে আমাদের সমাজতন্ত্র আমাদের তৃতীয় পথেই আসিবে। তিনি অবশ্য বলেন, সমাজতন্ত্র রাতারাতি আসে না। তবে আমরা অন্যদের তুলনায় কম সময় বলা যায় করিব। কাণ আমরা অন্যদের অভিজ্ঞতার দিকে লক্ষ্য রাখিয়া তাহাদের ভুলভ্রান্তি এড়াইয়া সমাজতন্ত্রের পথে আগাইয়া যাইতে সমর্থ হইব।
প্রেসিডেন্ট সুস্পষ্টভাবে ছাত্র সমাজকে নির্দেশে দেন যে বাংলাদেশের মাটিতে সাম্প্রদায়িকতা যেন কখনাে মাথা তুলিতে না পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে। কারন, তিনি বলেন, সাম্পদায়িকতা মানেই সংকীর্ণতা। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতার কবল হইতে মুক্ত না হইতে পারিলে দেশে শােষণ মুক্ত সমাজ গঠন সম্ভবপর হইবে না। তিনি হীনবীজ আমরা জাতীয়তাবাদের উদ্দীপনায় উদ্বুদ্ধ হইব এবং হইতে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা হীনবীজ নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হইবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ জুন ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত