বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ১০ই আগস্ট, শনিবার, ২৪শে শ্রাবণ, ১৩৮১
পেনসিলভানিয়া এভেন্যু হতে বিদায়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সকল প্রকার জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত গতকাল (শুক্রবার) পদত্যাগ করলেন। একযোগে বেতার ও টেলিভিশনে ভাষণদানকালে নিক্সন তার উত্তরসূরি জেরাল্ড ফোর্ডের প্রতি সমর্থনের জন্য আমেরিকার জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, পদত্যাগের পরও মার্কিন কংগ্রেস তার বিচার সম্পর্কিত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে ব্যক্তিগতভাবে তিনি তার মোকাবেলা করবেন। গত ছাব্বিশ মাস ধরে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে মার্কিন রঙ্গমঞ্চে যে উত্তেজনাকর নাটকের দৃশ্য একের পর এক ঘটে গেল গতকাল প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের মাধ্যমে সে নাটকের যে পরিসমাপ্তি ঘটবে সে আশা আপাততঃ করা যাচ্ছে না। কারণ পদত্যাগ করলেও নিক্সনকে বিচার বিভাগের সম্মুখীন হতে হবে যদি না কংগ্রেস এবং তার মধ্যে কোন আপোষ মিমাংসা হয়। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মাইক ম্যান্সফিল্ড ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন নিক্সন পদত্যাগ করলেও তিনি আপন দুষ্কর্ম হতে রেহাই পাবেন না এবং অবশ্যই তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এদিকে হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির রিপাবলিকান দলীয় এডওয়ার্ড হুটচিনসন বলেছেন পদত্যাগের পরও ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির বিচার অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় এবং অনুচিত হবে। তবে সিনেট, হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি, মার্কিন সংবাদপত্র এবং বিচার বিভাগ যদি পূর্বেকার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তাহলে রিচার্ড নিক্সনের ভাগ্যাকাশ শনিমুক্ত হবে কিনা বলা মুস্কিল।
আজ থেকে ২৬ মাস আগে ওয়াশিংটন পোস্টের দু’জন জুনিয়র সাংবাদিক যখন ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির তথ্য উদঘাটন করেছিলেন, তখন বিষয়ে অনেকেই ভাবতে পারেন নি যে, গেট পর্ব কে কেন্দ্র করে পাকানো জট নিক্সন খুলতে পারবেন না। কারণ গণতান্ত্রিক আমেরিকার সর্বময় প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রেসিডেন্টকে দেয়া হয়েছে প্রচুর ক্ষমতা এবং অনেকেই ভেবেছিল সেই সর্বময় ক্ষমতার দাপটে নিক্সন আপন পদে সমাসীন থাকবেন কার্যকালের সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু আমেরিকার সংবাদপত্র, বিচার বিভাগ ও জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে সামনে রেখে নিক্সনের অভিযুক্ত করণে উদ্যোগী হয়। আজ থেকে শতাধিক বছর আগে আমেরিকাবাসী ঠিক এমনই ধরনের ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল তখনকার রাষ্ট্রপতি জনসনকে (ইমপীচ) অভিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে। নিক্সন হয়তো সেই ইমপিচমেন্টের কথা স্মরণ করে আগেই পদত্যাগ করলেন। আমরা জানি প্রেসিডেন্ট রোমান থেকে শুরু করে অর্থাৎ দ্বিতীয় মহাসমরের পর থেকে নিক্সনের পূর্বসূরী জনসন পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে আমেরিকার পুলিশি ব্যবস্থার কূটনীতি নিক্সন পরিহার করার কাজে স্বতঃ প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি ভিয়েতনাম ও মধ্যপ্রাচ্য সংকট মিটিয়ে ফেলতে। এবং নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিসহ ওয়াশিংটনের দুই সবল প্রতিদ্বন্দ্বী মস্কো ও পিকিং-এর সাথে আপোষ মীমাংসা হয়ে আসতে। কিন্তু আমেরিকানদের ভাষায় ‘সেই সঠিক পররাষ্ট্রনীতি’ ও নিক্সনকে রেহাই দিলো না এবং সংবাদপত্র, বিচার বিভাগ, সর্বোপরি মার্কিন জনমতের কাছে নতি স্বীকার করে নিক্সনকে আপন পরিবার-পরিজনসহ ১৭ নম্বর পেনসালভানিয়া এভেন্যুর সুরম্য প্রাসাদ হতে গতকাল নিষ্ক্রান্ত হতে হলো।
একেবারে সংবাদপত্রের বলিষ্ঠ ভূমিকা, একেই বলে বিচার বিভাগ এবং জনমতের সঠিক মূল্যায়ন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা নিক্সন অনেক করেছিলেন এবং সে ধামাচাপা দিতে যেয়ে আপন কর্মের তাদের অনেককেই আগে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। লিতি ও হান্টকে কারাবরণ করতে হয়েছে। জন মিচেল ও স্টামকে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হলো। ভাইস প্রেসিডেন্ট এগনিউকে গদি ছাড়তে হলো। হোয়াইট হাউজ এর সকল আলোচনা বাণীবদ্ধ টেপরেকর্ড আদালতের কাছে সমর্পণ করতে প্রথমে নিক্সনের অস্বীকৃতি এবং পরে গায়েব করার চেষ্টা। কিন্তু শক্তিশালী আদালতের কাছে সবকিছু হস্তান্তর এবং সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিক্সনের পদত্যাগপত্র পেশ। জানিনা পৃথিবীর ইতিহাসে সংবাদপত্রের প্রতিনিধি পরিষদ এবং বিচার বিভাগের এতোখানি ক্ষমতা আছে কিনা, যার জন্য প্রবল ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতিকে এই সম্মিলিত ত্রিশক্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করে বিদায় নিতে হলো। আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বের অনেকেই আজ নিজের নিজের দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সৃষ্টির চেতনায় উদ্বুদ্ধ। মহাশক্তিধর মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিদায় তাদের সেই চেতনার দিগন্তকে বাস্তবতার আলোকে উদ্ভাসিত করবে এবং এই ঘটনা আমাদের প্রত্যেককে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো যে, সত্য কোনদিন চাপা দেয়া যায় না।
শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ, বিদ্যুৎ সরবরাহ যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ঢাকা শহরে ক্রমাগত বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে ‘পাওয়ার ফিডার পিলার চেম্বার’ ডুবে গেছে এবং মাটির নিচের ক্যাবল লাইন পানিতে ভাসছে। এই কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। সংবাদে আরো বলা হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকলে শহরের আরো এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধের আশঙ্কা উজ্জল হয়ে উঠবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। শহরে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিদ্যুৎ আজ শহুরে জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যুতের অপরিহার্যতা রয়েছে। বিশেষতঃ শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর সরবরাহ ব্যাহত হয় তাহলে গোটা সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের উপর বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য। আমাদের শিল্প কারখানার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত রাখা একান্ত অপরিহার্য। এছাড়া সর্বপ্রকার অফিস-আদালত, পারিবারিক সমস্যার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের সরবরাহ যে অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার তা অনুমান সাপেক্ষ। যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে শহরের জীবন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়বে। আর সেটা হলে যে কত বড় মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হবে তা সহজেই অনুমেয়। অতএব এই মারাত্মক ঘটনা ঘটার পূর্বে তার প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এবং নাগরিক জীবন যাতে করে বিপর্যস্ত না হয়ে পরে তার বাস্তব প্রতিকারের জন্য কাজ করতে হবে। বিগত উন্নয়ন বোর্ড অবশ্য তাদের তৎপরতার কথা জানিয়েছে, তবু আমরা বোর্ডকে অনুরোধ করবো বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে যে করেই হোক বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। আমাদের মনে রাখা দরকার ঢাকা যেহেতু দেশের রাজধানী শহর সেহেতু এর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা একান্ত প্রয়োজন। দেশে বর্তমানে যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে তার জন্য সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সকল জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তাতে করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমাদের অনেক ক্ষতি এ সময় পুষিয়ে নিতে হবে। ঠিক এমনই এক নাজুক অবস্থার মধ্যে এসে যদি রাজধানীর এবং দেশের বড় বড় শহরগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সার্বিক অবস্থার আরো দ্রুত অবনতি ঘটবে। অতএব-কর্তৃপক্ষ পূর্বাহ্নে একটি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারীদেরকেই সর্বাগ্রে নিজের জাতীয় কর্তব্য মনে করে এগিয়ে আসতে হবে।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক