You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাপড় ও সূতা বণ্টনে শুভ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়নি
সরকারী নীতি বাস্তবায়নে অহেতুক ঢিলেমী

বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কড়াকড়ির শিথিলতার পরও কাপড় ও সূতা বণ্টনে তেমন শুভ প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। এর কারণ মিল কর্তৃপক্ষের অব্যবসায়ীসুলভ-মনােভাব, সুষ্ঠু বণ্টনে অব্যবস্থা, বাজারজাতকরণে সূতার সরকারী নীতির বাস্তবায়নে অহেতুক ঢিলেমী এবং কাপড় ও সূতার অপেক্ষাকৃত নিম্নমান।
বস্ত্রশিল্প সংস্থার অধীনস্থ ৪৭টি সূতা ও কাপড় কলে এ পর্যন্ত ২ কোটি ৪৫ লাখ গজ কাপড় ও ২ কোটি ৬৯লাখ পাউন্ড সূতা পড়ে রয়েছে। একমিল প্রাইজ অনুযায়ী এই সূতা ও কাপড়ের দাম ৬০ কোটি টাকা। মজুদ এই কাপড় ও সূতা সংস্থার সবগুলাে মিলে তিন মাসের মােট উৎপাদনের সমান।

ত্রুটিপূর্ণ বিক্রয় পদ্ধতি নাকি সূতা ও কাপড় বিক্রয়ের একমাত্র প্রতিবন্ধক ছিল। কিন্তু বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বস্ত্র কল সংস্থা কর্তৃপক্ষ পুরাে সুবিধে পেলেও কার্যত: অবস্থা অন্যরকম। কিছু কিছু আইটেমের চাহিদা থাকলেও সবক্ষেত্রে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
কাপড় বিক্রয়ে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে—বিভিন্ন মিলে উৎপাদিত সব কাপড়ের চাহিদা নেই। অলিম্পিয়া টেক্সটাইল, আহমদ বাওয়ানী, চান্দ, জিনাত, চট্টগ্রাম টেক্সাইল ও ঢাকা কটন মিলে উৎপাদিত কাপড়ের জন্য ব্যবসায়ীরা বরাবরই উৎসাহী ছিলেন। অপরদিকে মনু টেক্সটাইল, গাউছিয়া কটন, সাতরাং টেক্সটাইল, আশরাফ ও শারমিন টেক্সটাইল, বেঙ্গল টেক্সটাইল মােহিনী কটন, চিটাগাং টেক্সটাইল ও চান্দ টেক্সটাইল মিলের উৎপাদিত সূতারও চাহিদা রয়েছে। এই মিলগুলাের উৎপাদিত মালের জন্য বহু দরখাস্ত জমা পড়েছে। ইতিপূর্বেকার পদ্ধতি অনুযায়ী বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশকৃত বহু দরখাস্ত উল্লেখিত কাপড়ের মিলগুলােতে পড়ে রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে নির্দিষ্ট কয়েকটি মিল ছাড়া অন্য সব মিলের কাপড় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য হচ্ছে, ঐ সব মিলের কাপড় অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের এবং বাজারে চাহিদা নেই। যে মিলের কাপড়ের চাহিদা বেশী সেগুলােরও মাল ডেলিভারীতে ঢিলেমি করা হয়। ব্যবসায়ীদের চাহিদার সুযােগে কিছু কিছু মিলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে যথাসময়ে মাল ডেলিভারী দিতে বিলম্ব করে থাকেন। যেসব কাপড়ের চাহিদা কম তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিপদে পড়েছেন। ছয় থেকে আট মাস আগে তৈরী কাপড়ও মিলে গড়ে রয়েছে। অপেক্ষাকৃত ভাল ও উন্নতমানের কাপড়ের সাথে এই কাপড় মিলিয়ে বিক্রি করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ গভীরভাবে চিন্তা করছেন। এ সূতা বিক্রয় করতেই মিলগুলাে বেশী সঙ্কটে পড়েছে। বিভিন্ন মিলের গুদামে সূতা পচে যাচ্ছে কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না। একমাত্র কারণ উৎপাদিত সূতা অত্যন্ত নিম্নমানের এবং বাজারে চাহিদা ভিত্তিক নয়। প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, কালীগঞ্জে অবস্থিত মসলিন কটন মিলে যে সূতা মজুদ হয়ে আছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের বলে ব্যবসায়ীরা এই মিলের সূতা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এই মিলে সূতা তৈরী করতে যে তুলা ব্যবহার করা হয়েছে। তা অত্যন্ত নিম্নমানের। আর একটি মূল কারণ হচ্ছে, সূতা কলগুলাে সাধারণভাবে যে সূতা তৈরী করছে বাজারে তার চাহিদা নেই, থাকলেও অত্যন্ত সীমিত। বাজারে ২০/৩২ ডি ৪২/ডি ৬০, ৮০ ও ১০০ প্রভৃতি কাউণ্টের সূতার চাহিদা রয়েছে। মিলগুলাে এ সূতাও উৎপাদন করে তবে চাহিদার তুলনায় কম।
জানা গেছে নিম্নমানের সূতার জন্যই মিলের উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বিপুল পরিমাণ সূতা ও কাপড় মজুদ হয়ে পড়ায় মিলগুলাের চালু মূলধনের ক্ষেত্রে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সামগ্রিক উৎপাদন দক্ষতার উপর এর অশুভ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সূত্র: বাংলার বাণী, ২৫ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!