You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেমিনারে দ্বিতীয় দিনে বিশেষজ্ঞদের আলােচনা
জন্মহার রােধে সবারই সহযােগিতা অপরিহার্য

জনসংখ্যা বৃদ্ধি রােধ করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার যে কর্মসূচী নিয়েছেন বিদেশী বিশেষজ্ঞগণ তাকে সময়ােপযােগী ও সঠিক পদক্ষেপ হিসাবে অভিহিত করেছেন। এবং বলেছেন, পারস্পরিক তামত গ্রহণ আঞ্চলিক ও কারিগরিগত সাহায্য ও সহযােগিতার মাধ্যমেই এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা যেতে পারে।
‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা নীতি’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী জাতীয় সেমিনারে গতকাল বিকেলে পঠিত ‘বাংলাদেশের জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত এই প্রবন্ধের উপর আলােচনা প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞগণ উপরােক্ত মন্তব্য করেন। প্রবন্ধটি লিখেছেন অধ্যাপক কে, এ. খালেক, জনাব এম আমিনুল ইসলাম ও ড. আতিকুর রহমান খান।
এই প্রবন্ধের উপর আলােচনায় অংশ নেন পাঁচজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ। তারা বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যার হারকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন এবং বিজ্ঞানসম্মত সুষ্ঠু প্রক্রিয়া গ্রহণ ও জনসাধারণের সক্রিয় সহযােগিতার মাধ্যমে জনসংখ্যা রােধ কর্মসূচী বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রবন্ধে পরিবার পরিকল্পনার ও জনসংখ্যা রােধ কর্মসূচীর বিভিন্ন পর্যায়ের কাজের বিশ্লেষণ করা হয়। এবং বলা হয় যে, ইতােপূর্বে এই কর্মসূচী ছিল সীমিত প্রচারনির্ভর এবং তাতে জনসংখ্যারােধে সার্বিক কোনাে সুষ্ঠু কর্মসূচী ছিল না।
পক্ষান্তরে বর্তমান পদ্ধতিতে বিভিন্নমুখী কর্মসূচী রয়েছে। এতে কন্টাস্পেটিভ সার্ভিসেস, ইনসেনটিভ পদ্ধতি ক্যুনিকেশন প্রােগ্রাম, কর্মাশিয়াল এপ্রােচ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, তত্ত্বাবধারন, গবেষণা প্রভৃতি বিষয়ে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, দেশের জনসাধারণের অধিকাংশই সন্তান সন্ততিকে সম্পদ বলে মনে করে আবার অনেকে তা করেন না। তাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন করাতে হবে। এবং তার জন্য কর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে লােকদের বুঝাতে হবে। কর্মসূচীর সফলতাই নির্ভর করছে জনগণকে পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সুফল সম্পর্কে যতটা সম্ভব বুঝানাে ও উদ্বুদ্ধ করার উপর। সেই সাথে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে যাতে মানুষ ছােট পরিবারের উপকারিতা অনুধাবন করতে পারে।
জনগণের মাঝে চেতনার সৃষ্টি করে এবং সাথে সাথে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সহযােগিতা থাকলে আগামী দশকের মধ্যেই বাংলাদেশের জনসংখ্যা রােধকল্পে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করা যাবে।
প্রবন্ধের উপর আলােচনা প্রসঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ডেভিড কর্টন জনসাধারণকে জনসংখ্যারােধ সম্পর্কে উৎসাহিত করার উপর গুরুত্ব দেন।
যুক্তরাজ্যের একজন বিশেষজ্ঞ মি: কুপার একসাথে ব্যাপক মানুষের কাছে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবার সুপারিশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হবকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সিরাজ আলাদিন অধিকতর গবেষণা কাজের উপর গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
মিসিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মি: করসা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি রােধে বাংলাদেশ সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তা সঠিক এবং সময়ােপযােগী।
ব্যাঙ্কককের প্রাচুসান্তস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ডিজিড জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশের পারস্পরিক সাহায্য ও সহযােগিতার উপর গুরুত্ব দেন। এব্যাপারে তিনি সকল মহলকেই সুপারিশ ও মতামত গ্রহণ করার প্রয়ােজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।

সূত্র: বাংলার বাণী, ১৭ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!