মিল এলাকায় আখচাষ বাড়ানাে হবে
চিনিকলগুলােতে চিনি উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য সরকার মিল এলাকায় আখ চাষের পরিমাণ বাড়াবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মিল এলাকার বাইরে থেকে আখ সংগ্রহে অনিশ্চয়তা এবং সেই সাথে গুড় তৈরীর সুযােগের পরিপ্রেক্ষিতে চিনিকল সংস্থা উপরােক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে আগামী মওসুমে নতুন কি পরিমাণ জমি..আখ চাষ এলাকাভুক্ত করা হবে তা এখনও স্থির হয়নি।
চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে চিনি কলসংস্থা এবার অস্বাভাবিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। নির্ধারিত লক্ষমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার টন। চিনিকল সংস্থার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, চিনি কলগুলােতে এবার মােট ৯৮ হাজার ৪শ’ ৬৫ টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে। পুরাে মে মাসে চিনি কলগুলাে চালু থাকার কথা ছিল। কিন্তু আখের অভাবে তা আগেই চিনিকলগুলাে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে অনিয়মিতভাবে কিছু কিছু মিল এখনও চালু রাখা হয়েছে বলে এই মুখপাত্র জানান। এতে মিলগুলাে আর্থিক দিকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
চিনিকল সংস্থার কর্তৃপক্ষ সূত্রে বলা হয়েছে, আখের অভাবে মিলগুলাে ফেব্রুয়ারী থেকেই মারাত্মক সঙ্কটে পড়েছিল। জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসে চিনি উৎপাদিত হয় যথাক্রমে ২৬ হাজার ও ২০ হাজার টন। মার্চে তা নেমে আমে ১০ হাজার টনে। এপ্রিলে উৎপাদন আরাে কমে এসে দাঁড়ায় ৫শ’ টনে। সরকার আখের চাষ বাড়ালেও গুড় অপেক্ষাকৃত অধিক লাভজনক বিধায় চাষীরা মিলে আখ না বিক্রি করে গুড় উৎপাদকদের কাছে বিক্রি করছেন বলেও তারা অভিযােগ করে। এক শ্রেণীর ফড়িয়া ব্যবসায়ী টাউটও এই সুযােগের সদ্ব্যবহার করছে। | এর ফলেই চিনি উৎপাদনের ক্ষেত্রে মিলগুলাে নাজুক অবস্থায় পড়ে। নির্ধারিত সময়ের আগেই অধিকাংশ বিল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কোনাে কোনাে স্থানে অনিয়মিতভাবে মিল চালু রাখা হয়।
জয়পুরহাট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জয়পুরহাটের চিনিকলটি এখনও অনিয়মিতভাবে চালু রয়েছে। এই চিনিকলটি দৈনিক ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মণ আখ মাড়াই করতে পারে। পক্ষান্তরে, বিভিন্ন এলাকা থেকে আখ সংগ্রহ করে এই চিনিকলটি গত ১২ই এপ্রিল থেকে ২৩শে এপ্রিল পর্যন্ত ৩২ হাজার ১শ ৩৫ মণ আখ মাড়াই করেছে। এই আখ মাড়াই করতে মােট খরচ পড়েছে আখের দাম ২,৫৬,০৪০ টাকা। তােলা খরচ ৯৬,৪০৫ টাকা, মাড়াই খরচ ১,৫০,০০০ টাকা, বেতন ও অন্যান্য বাবদ ১ লাখ টাকা নিয়ে মােট ৬,০৩,৪৮৫ টাকা খরচ পড়ে। শতকরা ৩.৩১ হারে চিনি উৎপন্ন হয়েছে ১০৬৩ মণ। চিনিকল সংস্থা চিনি বিক্রি বাবদ এ থেকে পাবে ১,৯৪,৮১৬ টাকা অর্থাৎ ১২ দিনে মিলের লােকসান হয়েছে ৪,০৮,৬৬১ টাকা। শতকরা উৎপাদনের হার বেশী হলে এই লােকসান হতাে না। এই হিসাবে গত মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন চিনিকলের লােকসানের পরিমাণ কোটির অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে। চিনিকল সংস্থার ঐ মুখপাত্র এ ব্যাপারে কিছু বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, চিনিকল সংস্থার লাভের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যাবে। সংখ্যা এবার কম করে হলেও ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা লাভ থেকে বঞ্চিত হবে।
সূত্র: বাংলার বাণী, ১৯ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত