You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.05.15 | ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করে তুলুন | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করে তুলুন

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব আব্দুল মান্নান জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবকে সফল করে তােলার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার সকালে টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মন্ত্রী এই আহ্বান জানান। স্থানীয় রওশন টকিজ সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ প্রধান শেখ ফজলুল হক মণি। সভার সভাপতি ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগ প্রধান জনাব আলী আসগর খান দাউদ। বক্তৃতা করেন যুবলীগ নে জনাব কাদের সিদ্দিকী, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহমদ, ঢাকা নগর যুবলীগ প্রধান মুস্তফা মহসিন মন্টু জনাব শওকত আলী তালুকদার, জনাব আবদুস সবুর খান, জনাব আনিসুজ্জামান খান, জনাব মােজাম্মেল হক জিন্নাহ, আনােয়ার বক্স আবদুর রাজ্জাক, আবদুল হাই, ফারুক আহমদ, আজিজুর রহমান দুলাল, শামসুল হক ও তােরাব আলী খান।
জনাব আবদুল মান্নান তাঁর ভাষণে বলেন, যে বিপ্লবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে, জাতির জনকর নেতৃত্বে আজ আবার তারই সংগঠনের ছায়াতলে এসে দ্বিতীয় বিপ্লবকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব আরােপ করে মন্ত্রী বলেন, সর্বক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি না করলে সুখ ও সমৃদ্ধি লাভ কোনাে ক্রমেই সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি জনসংখ্যা হ্রাস করার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন।
যুবলীগের কর্মীদের সকল প্রকার অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরাে বলেন, শত্রুকে চিনতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্ৰু চিহ্নিত না করা গেলে দেশের অবস্থা কোনদিনই ভালাে হবে না।

শেখ ফজলুল হক মণি
প্রগতির আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই বঙ্গবন্ধু দেশে একটি নতুন পদ্ধতির উপহার দিয়েছেন। এতদিনকার সংসদীয় গণতন্ত্র হচ্ছে মূলত: একটি শােষণ করার হাতিয়ার। বিশ্বে সমজতান্ত্রিক বিজয়কে রােধ করার জন্যই এই ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
প্রধান বক্তার ভাষণে যুবলীগ প্রধান শেখ ফজলুল হক মণি উপরােক্ত কথাগুলাে বলেন। দুর্নীতিবাজ মুনাফাখাের, টাউট ও সামাজিক শােষকদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করার জন্যই বঙ্গবন্ধু এই ডাক দিয়েছেন বলে শেখ মণি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একদিন পুঁজিবাদীরা পুঁজিলগ্নি রেখে সামাজিক প্রতিপত্তি বিস্তার করে আসছিল। পুঁজিপতিদের অত্যাচার ও শােষণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যই সংসদীয় গণতন্ত্র বাতিল করে বঙ্গবন্ধু নতুন পদ্ধতি দিয়েছেন। এই পদ্ধতির লক্ষ্য হচ্ছে শােষিতের গণতন্ত্র কায়েম করা।
শেখ মণি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব আরােপ করে বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধ না করলে কোন জাতিই আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না। দেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলে সে দেশের সার্বভৌমতুও নিশ্চিত করা যায় না। তাই জাতির স্বার্থেই আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
জাতীয় ভিত্তিতে সমবায়ের কথা উল্লেখ করে শেখ মণি বলেন, দেশের সামাজিক শত্রু এবং কায়েমী স্বার্থবাদী মহল সমবায়ের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচীর অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, সমবায় কর্মসূচীতে জমির মালিকানা তুলে দেওয়ার কথা নেই। জমির মালিকানা ঠিকই থাকবে।
কৃষিভিত্তিক প্রধান আরাে বলেন, সমাজতন্ত্রের মূল লক্ষ্য বলে শেখ মণি তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন।
যুবলীগ প্রধান আরাে বলেন, সমাজতেন্ত্রর মূল শক্তি হবে শ্রম শক্তি। পুঁজিতান্ত্রিক প্রবণতা সহকারে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বক্তৃতা বিবৃতির রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে। এখন উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে।

সূত্র: বাংলার বাণী, ১৫ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত