You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.05.15 | পর্যাপ্ত সরবরাহের প্রেক্ষিতে সরকারী সিদ্ধান্ত: কাপড় ও সুতার উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

পর্যাপ্ত সরবরাহের প্রেক্ষিতে সরকারী সিদ্ধান্ত
কাপড় ও সুতার উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার

দেশে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কয়েক ধরনের কাপড় ও সুতা বিক্রি ও খুচরা মূল্যের উপর আরােপিত নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শিল্পমন্ত্রী জনাব এ এইচ এম কামরুজ্জামান গতকাল বুধবার অপরাহ্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেন। তিনি বলেন, যে ধরনের কাপড়ের বিক্রি ও খুচরা মূল্যের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করা হয়েছে তার মধ্যে শাড়ী, লুঙ্গি, ধূতি, মার্কিন ও লংক্লথ রয়েছে। ২০ ও ৬০ কাউন্টের সূতা ছাড়া সব কাউন্টের সুতার বিক্রি ও খুচরা মূল্যের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, পপলিন, ড্রিল, প্রিন্ট প্রভৃতি ধরনের কাপড়ের সরবরাহ ব্যবস্থার কোনাে পরিবর্তন হবে না।
কাপড় ও সুতার সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পর্কে জনাব কামরুজ্জামান বলেন, এখন থেকে কাপড় বিক্রি করার লাইসেন্সধারী যে কোনাে ব্যবসায়ী এবং ব্যবহারকারীদের সংস্থা, ভােগ পণ্য সরবরাহ সংস্থা, সমবায় বাজারজাতকরণ সমিতি ও বাছাইকৃত ডিলারদের কাছ থেকে খােলা বাজারে বিক্রি করার জন্যে কাপড় তুলতে পারবেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, পপলিন, ড্রিল, প্রিন্ট প্রভৃতি ধরনের কাপড়ের সরবরাহ ব্যবস্থার কোনাে পরিবর্তন হবে না।
কাপড় ও সূতার সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পর্কে জনাব কামরুজ্জামান বলেন, এখন থেকে কাপড় বিক্রি করার লাইসেন্সধারী যে কোনাে ব্যবসায়ী এবং ব্যবহারকারীদের সংস্থা, সমবায় বাজারজাতকরণ সমিতি ও বাছাইকৃত ডিলারদের কাছ থেকে খােলা বাজারে বিক্রি করার জন্যে কাপড় তুলতে পারবে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক সুতা কলে খুচরা কেন্দ্র থাকবে। এখান থেকে প্রকৃত তাঁতীদেরকে নিম্নতম মূল্যে দশ পাউন্ড করে সূতা দেওয়া হবে।
সুতা উৎপাদন সম্পর্কে জনাব কামরুজ্জামান বলেন দেশের চাহিদা মিটানাের জন্যে সরকার সুতা উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনাকালে দেশে চার লাখ নতুন টাকু স্থাপন করা হবে। ১৯৭৭ সালের মধ্যে দেশ সূতার স্বনির্ভর হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, সূতার সরবরাহ ব্যবস্থা শিথিল করার পর মজুদদার ও আড়তদাররা যাতে প্রকৃত তাঁতীদের স্বার্থের পরিপন্থী কোনাে অবস্থার সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্যে সরকার প্রয়ােজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যারা সূতাকল ও অন্য সরকারী সংস্থা থেকে কাপড় ও সূতা তুলবেন, তাদের নাম, ঠিকানা ও ট্রেড লাইসেন্স নম্বর রেখে বিক্রির উপর কড়া নজর রাখা হবে। শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার কাপড় ও সূতা দেশের সর্বত্র পৌছুবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার এবং মজুদদারী ও কালােবাজারী বন্ধের প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, মাথাপিছু নয় গজ হিসাবে বাংলাদেশে বছরে ৬৪ কোটি গজ কাপড়ের প্রয়ােজন। এই হিসাবের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৫-৭৬ সালে ৬০ কোটি গজ কাপড় সরবরাহ করা হবে। এই ৬০ কোটি গজের মধ্যে কাপড় কল থেকে ১০ কোটি গজ, হস্তচালিত তাঁত ও অন্যান্য প্রস্তুতকারক সূত্র থেকে ৪০ কোটি গজ সরবরাহ করা হবে। বাকী ১০ কোটি গজ মজুদ কাপড় থেকে ও আমদানীর মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।
সূতার প্রয়ােজন সম্পর্কে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-৭৬ সালে ২ লাখ ৬০ হজার বেল সূতার প্রয়ােজন হবে। সূতার মিলগুলাে ১ লাখ ৭১ হাজার বেল সরবরাহ করবে। বাকী ৮৯ হাজার বেল বর্তমান মজুদ থেকে ও আমদানী করে পূরণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, টেক্সটাইল ইন্ডাষ্ট্রিজ করপােরেশন বছরে ২ লাখ ৩০ হাজার বেল সূতা উৎপাদন করে। এর মধ্য থেকে ১০ কোটি গজ কাপড় উৎপাদনের পর উদ্বুত্ত ১ লাখ ৭১ হাজার বেল সূতা সরবরাহ করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণ আরও শিথিল করা হবে।

সূত্র: বাংলার বাণী, ১৫ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত