You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.05.16 | জাতীয় ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তােলার জন্য উপরাষ্ট্রপতির আহ্বান: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিধি প্রণয়নের কথা সরকার ভাবছেন | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

জাতীয় ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তােলার জন্য উপরাষ্ট্রপতির আহ্বান
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিধি প্রণয়নের কথা সরকার ভাবছেন

উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রকাশ করেছেন যে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে প্রয়ােজনীয় বিধি প্রণয়নের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে চিন্তা করছেন। সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবন-যাপনের জন্য প্রত্যেকের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি হােটেলে বাংলাদেশ জনসংখ্যা নীতি সম্পর্কিত সপ্তাহব্যাপী জাতীয় সেমিনারে উদ্বোধনী ভাষণদানকালে তিনি একথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন-যাপনের জন্যে প্রত্যেককে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে উপরাষ্ট্রপতি বলেন কৃষি, শ্রম, সমাজকল্যাণ সমবায়, বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচী, স্বাস্থ্য ও মাতৃমঙ্গল এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সাথে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সমন্বয় সাধন করা হবে। এছাড়া স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচীতেও জনসংখ্যা বিষয়ক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব আবদুল মান্নান অভ্যর্থনা জানিয়ে ভাষণ দেন।
সৈয়দ নজরুল বলেন, উন্নয়নের জন্য দক্ষ ও কর্মক্ষম জনশক্তির প্রয়ােজন। দেশের জনশক্তির পূর্ণ ঠিকানা, উৎকর্ষ সাধন ও সদ্ব্যবহার করতে হলে অতিরিক্ত জনসংখ্যা রােধ করতে হবে।
কার্যকরী জনসংখ্যা নীতি প্রবর্তনে পারিপার্শ্বিকতা ও বৈশিষ্ট্যের প্রতি প্রখর দৃষ্টি রাখার প্রয়ােজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উপরাষ্ট্রপতি বলেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্বন্ধে গ্রামের সাধারণ মানুষের ধ্যান-ধারণা ও অজ্ঞতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। সতর্কতা ও সমবেদনশীল মন নিয়ে বিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সুফল সম্পর্কে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের সুযােগ সুবিধা সহজ লভ্য গ্রামে গঞ্জে প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে সাধারণ মানুষের মাঝে বাস্তবধর্মী সচেতন মনােভাব জাগিয়ে তুলতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল বলেন: জনসংখ্যা বৃদ্ধি বাংলাদেশে জনজীবনের সার্বিক সামাজিক ও পিরপার্শ্বিকতার উপর প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করছে এবং সেই সাথে সরকারের সকল উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। জনসংখ্যা রােধের জন্য এমন একটি জাতীয় নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে যাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত সামাজিক অর্থনৈতিক কাঠামাে, বিবাহের বয়স আইনগত বিধি ব্যবস্থা প্রভৃতি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনুকূলে প্রভাবিত হয়। তিনি বলেন, সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রাধান্য দিয়েছেন, জনসংখ্যা কার্যক্রমকে সার্বিক জাতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টার সাথে সমন্বিত করে একটি জাতীয় আন্দোলনে পরিণত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
উপরাষ্ট্রপতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশে বার্ষিক শতকরা ৩ ভাগ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে ২০০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২১ কোটিতে দাঁড়াবে। | তিনি বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার আনুপাতিক হার প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ। জনসংখ্যার এ বৃদ্ধির ধরন প্রতিনয়ত আমাদের জীবন ধারণের মানের ক্রমাবনতি ঘটছে। জাতীয় জীবনের বিভিন্ন দিক খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও জাতীয় আয়ের সমবণ্টনের ক্ষেত্রে সম্পদের সাথে অধিকার অসামঞ্জস্যপূর্ণ চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। সকল উন্নয়ন প্রচেষ্টা যেমনি ব্যাহত হচ্ছে, পারিবারিক জীবনেও সৃষ্টি হচ্ছে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা ও নৈরাশ্য।

সূত্র: বাংলার বাণী, ১৬ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত