আজ শেরেবাংলার দ্বিতীয় লক্ষ্য অর্জন করতে হবে
শেরেবাংলা এ, কে, ফজলুল হকের ১৩শ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রােববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের উদ্যোগে বাংলাদেশ পরিষদ মিলনায়তনে এক আলােচনা সভার আয়ােজন করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জনাব আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলােচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থমন্ত্রী ড. এ, আর, মল্লিক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার জন্য তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তবে তার একটি লিখিত ভাষণ পড়ে শােনান হয়। এ ছাড়া এতে সংসদ সদস্য জনাব আতাউর রহমান খান ও জাতীয় দলের অন্যতম বিশিষ্ট সদস্য জনাব মুস্তাফা সরােয়ার বক্তৃতা করেন।
ড. মল্লিক তার লিখিত ভাষণে বলেন, শেরেবাংলা উপলব্ধি করেছিলেন শিক্ষা ও জ্ঞানের আলােক প্রদানের পাশাপাশি বাঙ্গালী জাতিকে তার অধিকারের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
সেজন্যেই তিনি জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ, ঋণ সালিসী বাের্ড স্থাপন ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের মাধ্যমে সামন্ত প্রথার উচ্ছেদ করে বাঙ্গালী জাতিকে সংঘবদ্ধ করতে ও তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ সাধানের প্রয়াস পেয়েছিলেন। আমরা জানি, তার সবচৈতন্যে লালিত হতাে বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনসত্তা প্রতিষ্ঠার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা। এ জন্যেই তিনি অতি সুপরিকল্পিতভাবে ১৯৪০ সনে উপমহাদেশের পূর্ব ও উত্তরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে দুটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি গঠনের সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক সম্মেলনে উত্থাপন করেছিলেন। বাঙ্গালী জাতির জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের এই আকাঙ্ক্ষা আবার মূর্ত হয়ে উঠে ১৯৫৪ সনে। নির্বাচনে জয়ী হবার পর তিনি পুনরায় কেন্দ্রের নিকট পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দাবী করেন। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা এ, কে ফজলুল হকের এরূপ অসম সাহসী কার্যকলাপের দরুন প্রতিক্রিয়াশলি ঔপনিবেশিকচক্র বার বার তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। গৃহে অন্তরীণ করেছে কিন্তু মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত বাংলার বাঘ মাথা নত করেননি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়ক শেরেবাংলার স্বপ্ন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েম হয়েছে। এই স্বাধীনতা অর্জনে শেরেবাংলার শিক্ষার অবদান এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর দু’টি আদর্শের একটির সফল মূল্যায়ন হয়েছে। কিন্তু তার দ্বিতীয় লক্ষ্য ক্ষুধা থেকে মুক্তি, দেশবাসীর জন্য মােটা ভাত, মােটা কাপড়ের সংস্থান আজও সম্ভবপর হয়নি। দেশ স্বাধীন হলেও সামন্তযুগীয় ধ্যানধারণা এখনাে আমাদের সংহতি ও সার্বভৌমত্ব বিনাশের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, শেরেবাংলার সেই আদর্শকে আরাে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরকার দ্বিতীয় বিপ্লবের নূতন প্রেক্ষাপটে সর্বরকম শােষণ অবসান করে ভূখা-নাংগা মানুষের মুখে হাসি ফুটানাের জন্য এক সর্বাত্মক সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর।
বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষেতে-খামারে, কলে-কারখানায় উৎপাদন বাড়িয়ে দেশকে স্বয়ম্ভর করে তােলা। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ের সহিত শেরেবাংলার সেই অভিন্ন লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছি এবং আশা করছি সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর ভাগ্যোন্নয়ন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সােনার বাংলা গড়ে তুলবাে।
আতাউর রহমান: জনাব আতাউর রহমান খান বলেন, শেরেবাংলা মানুষকে ভালােবাসতেন প্রাণ দিয়ে আর সেজন্যই তিনি জনগণের হৃদয়ের আসনে চিরদিনের জন্য স্থান করে নিতে পেরেছিলেন।
জনাব খান বলেন, শেরেবাংলা বিশ্বাস করতেন রাজনীতি হচ্ছে মানুষের কল্যাণ সাধনের মাধ্যম- তিনি সেই মাধ্যমকে বেছে নিয়েছিলেন আলাদা জাতীয়সত্তা হিসেবে বাঙ্গালী গণমানুষের সার্বিক কল্যাণ কামনায়। আর সেই কল্যাণের জন্য তিনি এদেশের মানুষের মাঝে শিক্ষা প্রচারে ব্রতী হয়েছিলেন।
জনাব খান বলেন, শেরেবাংলার আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাঙ্গালীর মুক্তি—তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া এ জাতির সার্বিক মুক্তি সম্ভব নয়। তাই তিনি শিক্ষা প্রচারে এতটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
সূত্র: বাংলার বাণী, ১২ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত