You dont have javascript enabled! Please enable it!

একদা রংপুরে ১৩০টি কাগজের কল ছিল

রংপুর।বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে কত কাহিনী, কত ইতিহাস, কে তার খোজ রাখে। কালের প্রবাহে সে সব হারিয়ে যায়।
রংপুর জেলার কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে আছে সে কালের বিশিষ্ট সৃষ্টির শিল্পের স্মৃতি সে শিল্প কাগজ শিল্প। কিন্তু আজ রংপুর তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও কাগজ তৈরীর সামান্যতম চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ সেকালে রংপুর জেলায় প্রচুর কাগজ উৎপন্ন হতাে। এ কাগজ জেলার চাহিদা পূরণ করেও দেশ বিদেশে রফতানী করা হতাে। শিক্ষিত পরিবার ও জমিদারী সেরেস্তায় রংপুরের কাগজের প্রচুর চাহিদা ছিল।
সে যুগে রংপুরে কাগজ তৈরীর প্রচুর উপকরণ পাওয়া যেত। শন ছিল এর প্রধান উপকরণ। পরবর্তীকালে পাট ব্যবহার শুরু হয়। প্রধানত: এখানে সাদা ও বালি রঙের কাগজ তৈরি করা হতাে। যারা কাগজ তৈরী করতাে তাদের কাগজিয়া বলা হতাে। কাগজ তৈরীর ব্যাপারে নারীপুরুষ উভয়ই দক্ষ ছিল। তখন রংপুরে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছিল কাগজ শিল্পের কারখানা। বাহারাবন্দের দুর্গাপুর, বালাকান্দি, পরগনা, পায়রাবন্দের ভাজনী এবং উদাসী ফুর্সা গ্রামে এ শিল্পের প্রধান কেন্দ্র ছিল। এসব স্থানে বহু দেশীয় কারখানা গড়ে উঠেছিল এবং সম্পূর্ণ দেশেীয় নিয়মে কাগজ তৈরী করা হতাে। একটি কারখানায় দৈনিক এক রীমের বেশী কাগজ উৎপন্ন করা সম্ভব ছিল না। উৎপন্ন কাগজের অর্ধেক রংপুরে, বাকী অর্ধেক বিদেশে চালান দেওয়া হতাে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত এ জেলায় কাগজ শিল্প অব্যাহত ছিল।
ড. বুকানন লিখিত রংপুর বিবরণী গ্রন্থ হতে এ জেলার কাগজ শিল্প সম্পর্কে বহু কিছু জানা যায়। ১৮৭১ সালে ড. বুকানন প্রায় দেড় শত লােককে কাগজ তৈরীতে নিযুক্ত দেখেছেন। ১৮৭১ সালে এ জেলার ১৩০টি কারখানায় কাগজ তৈরী হতাে। ১৯০১ সালে মাত্র ছয়জন লােক এ শিল্পে নিয়ােজিত ছিল। ড. বুকাননের বিবরণীতে আরও জানা যায়, এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে কাগজ বিদেশেও রফতানী করা হতাে। রংপুরের তদানীন্তন সাব ডেপুটি কালেক্টর গােপাল চন্দ্র দাস তার রংপুর বিবরণীতে কাগজ শিল্প সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন যে, তখন পাঁচ রীম কাগজ তৈরী করতে খরচ পড়তাে মাত্র সাত টাকা পাঁচ আনা; কিন্তু পরবর্তীকালে মজুরী, পাট, চুন, তেল প্রভৃতির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কাগজ উৎপাদনের খরচও বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রীম প্রতি কাগজ তৈরীর খরচ পড়তাে দশ টাকা।
কিন্তু ইতােপূর্বে ইউরােপে যন্ত্র বিপ্লবের দরুন দ্রুত এবং কম খরচে কাগজ তৈরীর কল আবিস্কৃত হয়। এ ছাড়া মেশিনে তৈরী কাগজ ছিল সুন্দর ও মসৃণ। ফলে স্বভাবতঃই মানুষ আকর্ষিত হয় কলে তৈরী কাগজের প্রতি। প্রতিযােগিতায় দেশীয় কারখানাগুলাে পেছনে পড়ে যায় এবং ক্রমে ক্রমে বন্ধ হতে থাকে। জীবন ও জীবিকার তাগিতে কাগজিয়া’রা তখন অন্য পেশা অবলম্বন করতে থাকে। এমনি করে রংপুর জেলার কুটির শিল্প চিরতরে ধ্বংস হয়ে যায়।

সূত্র: বাংলার বাণী, ১২ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!