গত বছরের চেয়ে সিলেটে এবার ১ কোটি মণ অতিরিক্ত ধান হয়েছে
শাহজালালের শ্যামল সিলেটের অগ্রগতি, সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচী পর্যালােচনা করার জন্য গত ৩রা মে বিকেলে স্থানীয় মদন মােহন মহাবিদ্যালয়ে এক সেমিনারের আয়ােজন করা হয়। এতে পৌরহিত্য করেন জনাব হাবিবুর রহমান এম. পি। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনাব আবদুল লতিফ এম, পি, জনাব নুরুল ইসলাম খান এম পি এবং মিসেস আবেদা চৌধুরী এমপি।
সেমিনারে শ্যামল সিলেটের আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক জনাব ইরশাদুল হক শ্যামল কর্মসূচীর সাফল্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার উপর প্রায় একঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা ও নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশবাসী স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে যােগদান করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর অস্থিরতা এবং দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ ও বিশ্বের মুদ্রাস্ফীতি তাদের হতাশ করেছে। এই হতাশাকে কাটিয়ে জনগণের মধ্যে উৎপাদন বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শ্যামল সিলেট কর্মসূচী গত ছয় মাসে সিলেট জেলায় ব্যাপক সাফল্য লাভ করে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সিলেট একটি সবজি ঘাটতি জেলা ছিল। কিন্তু শ্যামল সিলেট প্রকল্পের অধীনে জেলার শুধু সবজি ঘাটতিই পূরণ হয়নি, এবার বাইরেও রফতানী করা হয়েছে। গত মওসুমের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ জমিতে সবজি ফলানাে হয়েছে।
তিনি তথ্য প্রকাশ করে বলেন, চলতি বছর বােরাে-ইরি মৌসুমে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ কোটি মণ ধান অতিরিক্ত উৎপন্ন হয়েছে। বােরাে-ইরি চাষ সাড়ে ছ’লাখ একর থেকে বাড়িয়ে আট লাখ একর করা হয়েছে।
জনাব ইরশাদুল হক আরাে জানান যে, শ্যামল সিলেট কর্মসূচীকে সফল করার জন্য এবছর ২ হাজার ৬ শ’ প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হয়েছে। ঝিংড়ি, পাস্তার খাল ছাড়াও বহু সংখ্যক ছড়া ও নদীতে বাঁধ দিয়ে খাল কেটে জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনাকে জনপ্রিয় করে তােলার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রাম্য হাসপাতালকে পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে রূপান্তরিত করা হয়েছে। প্রতিটি স্কুল ও ডাকঘরের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনার প্রয়ােজনীয় সামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি গ্রামের মেহনতি কৃষক-শ্রমিকদের চিত্তবিনােদনের সুযােগ দানের জন্য অতি সত্বর সাংস্কৃতিক দল গ্রামে-গঞ্জে প্রেরণ করা হবে।
আগামী কর্মসূচী
আরাে অধিক পরিমািণ জমিকে আগামী বছরে চাষাধীনে নিয়ে আসার জন্য এক ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ইরি-আউশ ছ’লাখ একরে বর্ধিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। মাছ, হাঁসমুরগী, শাক সবজি ইত্যাদির চাষ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জেলা প্রশাসক জানান।
তিনি জানান, অনাবাদী খাসজমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে সমবায় ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হবে। বেশী জমির মালিকের ফেলে রাখা অতিরিক্ত জমি তাদের কাছ থেকে সমবায়ে নিয়ে আসা হবে। চা-বাগানের বাড়তি জমিও চাষাধীনে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শাহজালালের শ্যামল সিলেট কর্মসূচী বাস্তবায়িত হলে জেলাবাসীকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া যাবে।
সূত্র: বাংলার বাণী, ১৩ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত