You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঢাকা বিমান বন্দরে সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু

দিন যাপন করছে আর অন্যরা কষ্ট ভােগ করছে। সম্পদশালী দেশগুলাে অস্ত্র প্রতিযােগিতাসহ বিভিন্ন অনুৎপাদন খাতে বিপুল সম্পদ অপচয় করবে এবং বিশ্বের অধিকাংশ জনগােষ্ঠী না খেয়ে থাকবে, তা হতে পারে না। তিনি বলেন কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেছেন যে, এ অবস্থা বেশীদিন চলতে পারে না।

উপমহাদেশের সমস্যা
উপমহাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে বাংলাদেশ পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়াসহ যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা কমনওয়েলথ সম্মেলনে আবৃত হয়েছে বলে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন। এছাড়া পাকিস্তানের সাথে সম্পদ বণ্টন ও বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানীদের ফেরৎ নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের বক্তব্য সমর্থন করে সম্মেলনে একটা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু বলেন, জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ সাবেক পাকিস্তানের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান মজুদ বৈদেশিক মুদ্রা, মজুদ সােনা, বিমান, জাহাজ, সহ সম্পদের কোনাে ভাগই দেয়নি। এতে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে।
বাংলাদেশের সমর্থন: বঙ্গবন্ধু বলেন, সম্মেলনে ভারত মহাসাগরকে শান্তির অঞ্চল স্থাপন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও রােডেশিয়ায় সংখ্যালঘু শাসনের দ্রুত অবসান সম্পর্কে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
আফ্রিকার জনগণের মুক্তি আন্দোলনে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনরায় ঘােষণা করে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, কৃষ্ণকায় বলে কোন জাতি আত্মনিন্ত্রণের অধিকার হারাতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ গরীব হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে মুক্তি সংগ্রামে নিয়ােজিত দক্ষিণ আফ্রিকা রােডেশিয়াকে গেরিলা ট্রেনিং এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভের সুযােগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
ভিয়েম কম্বােডিয়া: ভিয়েৎনাম ও কম্বােডিয়ার জনগণের বিজয়ে আনন্দ প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ এবং ভবিষ্যতেও করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি স্মরণ করেন যে, যখন বিশ্বের কোন দেশ বিশেষ সাড়া দেয়নি, তখন বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামের অস্থায়ী বিপ্লবী কম্বােডিয়ার সিহানুক সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করার সময় তার প্রতি আন্তরিক সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের জন্য বঙ্গবন্ধু জামাইকার প্রধানমন্ত্রী মি: এম, ম্যানলী এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশের বক্তব্যের কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সরকার প্রধানদের প্রতিও অভিনন্দন জানান।

কমনওয়েলথকে ধনী ও দরিদ্র দেশের ব্যবধান দূর করতে হবে
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন যে, বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নকামী দেশগুলাের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান দূর করে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তােলার মাধ্যমে কমনওয়েলথ একটি কার্যকর সংস্থা হিসাবে চালু থাকতে পারে।
কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যােগদানের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা ফিরে এসে বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করার সময় বঙ্গবন্ধু এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, এই সম্মেলনে বাংলাদেশ সুস্পষ্ট অবদান রেখেছে এবং তিনি কিছু সমস্যার সমাধান দিতে চেষ্টা করেছেন এবং কিছু সমস্যার সমাধানের সুপারিশ করেছেন।
বিশ্বসংস্থা হিসেবে কমনওয়েলথ-এর ভূমিকা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, অতীতে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের ডিবেটিং ক্লাবের মতাে ছিল। কিন্তু এখন অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে এবং কমনওয়েলথের ভূমিকা ক্রমেই সুস্পষ্ট ও কার্যকর হয়ে উঠেছে।
বিশ্ব সমস্যা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু যে সমাধানের সুপারিশ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের কাছে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নকামী দেশগুলাের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক ব্যবধানের ফলে কিছু সংখ্যক দেশ আরামপাস হয়েছে।

সূত্র: বাংলার বাণী, ৯ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!