You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.05.04 | আফ্রিকার মুক্তি সংগ্রামে বাংলার সমর্থন ঘােষণা | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

আফ্রিকার মুক্তি সংগ্রামে বাংলার সমর্থন ঘােষণা

রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দক্ষিণ আফ্রিকা প্রশ্নে আফ্রিকান নীতি- কৌশলের প্রতিসমর্থনের জন্যে কমনওয়েলগ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি দারেস সালাম ঘােষণাকে সর্বান্তকরণে সমর্থন জানান। খবর এনার।
রাষ্ট্রপতি শুক্রবারে কিংসটনে কমনওয়েলথ শীর্ষ বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রিকান পরিস্থিতির ওপর ভাষণ দিচ্ছিলেন।
সংখ্যালঘু সরকারের বিরুদ্ধে নৈতিক অবরােধ জোরদার করার গুরুত্ব বর্ণনা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ রােডেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে বাণিজ্যের প্রন্থে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখে চলছে।
রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা অর্জন ও বর্ণবৈষম্য নির্মূল করার সংগ্রামের সঙ্গে বাংলাদেশের একাত্মতা প্রকাশ করেন। সম্মেলনে আগত আফ্রিকান নেতৃবন্দের প্রতি আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন: আপনাদের ন্যায়সংগত সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন আছে—থাকবে।
আফ্রিকান ভাইদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বাংলাদেশের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন ; বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈনিকরা জাম্বিয়া ও নামিবিয়ার মুক্তিযােদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে কাজ করতে পারলে গৌরবান্বিত হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুয়ার এই এলাকার তরুণদের জন্যে উন্মুক্ত থাকবে।
যুক্ত ও আলােচনা: আফ্রিকা প্রশ্নে তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট নায়ারেরের মত্যমতের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তিযােদ্ধাদের সশস্ত্র সংগ্রামের ফলেই এঙ্গোলা মােজাম্বিক ও গিনি। বিসাউ থেকে পর্তুগীজ উপনিবেশবাদীরা বিতাড়িত হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে আলােচনা অব্যাহত রাখার সাথে সাথে লড়াই-এর জন্যে তৈরী থাকার ব্যাপারে তিনি প্রেসিডেন্ট নায়ারের সাথে একমত হবে বলেন: আমরাও পাকিস্তানী সংখ্যালঘু শাসনের অবসানের জন্যে আলােচনা করেছি। কোনাে ফল হয়নি। তাই রক্তাক্ত যুদ্ধের পথে নামতে হয়েছে।
উপমহাদেশ: বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, উপমহাদেশে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্যে আমরা ক্রমাগত জোর দিয়ে এসেছি এবং এই নীতি অব্যাহত রাখব। আমাদের জনগণের স্বার্থে এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের এই প্রক্রিয়ায় আরাে অগ্রগতি হতে যদি পাকিস্তান বাস্তবতা অনুধাবন করে অনুকূল সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তার ৬০ হাজার নাগরিককে ফিরিয়ে নিত এবং সাবেক পাকিস্তানে বাংলাদেশের সম্পদের অংশ ফিরিয়ে দিত।
বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী: বঙ্গবন্ধু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সমস্যার সমাধানে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন পানি সম্পদ আহরণ সহযােগিতায় নীতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিন্ন সমস্যার সমাধানে সম-অংশীদারিত্বের প্রতি তার দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের উল্লেখ করে তিনি বলেন দিল্লী চুক্তির ভিত্তিতে এ দুটি দেশ পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীরণের প্রচেষ্টা চালায়। এ প্রসংগে পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের স্বদেশে পাঠানাে এবং যুদ্ধবন্দীদের ক্ষমা প্রদর্শনের কথা তিনি উল্লেখ করেন।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া: বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের ফলে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মােকাবেলার জন্যে বঙ্গবন্ধু দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থে আঞ্চলিক অর্থ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তােলার আশ্বাস দেন।
ইন্দোচীন: কম্বােডীয় ও ভিয়েতনামী জনগণের বিজয়কে বহুদিনের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নয় বরং বিশ্বের শান্তিকামী শক্তিসমূহের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যময় হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং বাইরের কোনাে হস্তক্ষেপ ছাড়াই ভিয়েতনামী বীর জনগণ তাদের এলাকায় উন্নয়ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেন।
মধ্যপ্রাচ্য: মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমাগতিশীল পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, এই পরিস্থিতি বিশ্বশান্তির প্রতি গুরুত্বর হুমকি হয়ে পড়েছে। তিনি ইসরাইলী আগ্রাসনের নিন্দা করে বলেন, সংকটকে জটিলতর করার জন্যে ইসরাইলকেই দায়ী হতে হবে।
শক্তির প্রতিযােগিতা: উত্তেজনা প্রশমনে সমঝােতার পদ্ধতির প্রতি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি মুজিব বাইরের হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে বিবদমান দেশের মতপার্থক্য নিরসনের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শক্তির প্রতিযােগিতা হ্রাসের প্রচেষ্টায় তার দেশের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন পুনরুল্লেখ করে বলেন, সাইপ্রাস প্রশ্নের সন্তোষজনক মীমাংসা হবে বলে তিনি আশা পােষণ করেন।
পরিশেষে একটি স্বাস্থ্যকর আন্তর্জাতিক পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, এ ব্যাপারে কমনওয়েলথ একটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।

সূত্র: বাংলার বাণী, ৪ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত