কমনওয়েলথ সম্মেলনে উন্নত দেশগুলাের প্রতি বঙ্গবন্ধু
পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচীতে সাহায্যদানের আহ্বান
রাষ্টপ্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলােকে পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী ও খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরােপ ও ব্যাপক সমর্থন দানের জন্য আহ্বান জানান। খবর এনা/বাসস।
বঙ্গবন্ধু গতকাল কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের বৈকালিক অধিবেশনে ভাষণ দানকালে উপরােক্ত আহ্বান জানান। উক্ত অধিবেশনের আলােচ্য বিষয় ছিল আন্তঃকমনওয়েলথ সহযােগিতা।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের ওপর আলােকপাত করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলােতে ব্যাপক বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জীবন ধারণের মানেরও যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে। এর ফলে বাংলাদেশের মতাে উন্নয়নশীল দেশগুলাের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে এবং এসব দেশ দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের সম্মুখীন হয়েছে। এ কারণে এসব দেশ অর্থনৈতিক বিকাশ লাভে সমর্থ হচ্ছে না।
রাষ্ট্রপতি মুজিবুর রহমান এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্ত: কমনওয়েলথ সহযােগিতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ভূমিকা পালনে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলাের প্রতি আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দার প্রতি সদস্য দেশগুলাের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলাের মধ্যে ব্যবধান যাতে আর বৃদ্ধি পেতে না পারে সেজন্য কমনওয়েলথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কমনওয়েলথ বিনিয়ােগ ব্যাঙ্ক গঠন করে। উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলাের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে বলে তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন।
পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী ও খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন যে, উন্নত কমনওয়েলথ দেশগুলাে উন্নয়নশীল দেশগুলােকে এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য প্রদান করতে পারে।
উন্নত সদস্যদেশগুলাে তাদের উদ্ধৃত্ত খাদ্যশস্য ঘাটতি সদস্য দেশগুলােকে দ্রুত সরবরাহ করে উপরােক্ত কর্মসূচী সফল করে তুলতে পারে বলে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আন্ত: কমনওয়েলথ সহযােগিতা জরুরী অবস্থার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবে। বিশেষ করে সদস্য দেশগুলােতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী ও খাদ্যশস্য উৎপাদন পরিকল্পনায় একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা গ্রহণ করতে পারে।
তিনি তাঁর ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন যে, তাঁর দেশে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে এ গ্যাস রাসায়নিক সার উৎপাদনে ব্যবহৃত হতে পারে। তিনি এ ক্ষেত্রে তার সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন যে, যদি প্রস্তাবিত বিনিয়ােগ ব্যবস্থা কার্যকর হয় তা হরে কমনওয়েলথ দেশগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য সহযােগিতা বৃদ্ধির সুযােগ সৃষ্টি হবে।
এর আগে বঙ্গবন্ধু কমনওয়েলথ সেক্রেটারী জেনারেল আর্গন্ত স্মীথ। কর্তৃক রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মানে প্রদত্ত সম্বর্ধনা সভার যােগদান করেন।
সূত্র: বাংলার বাণী, ১ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত