নিয়মিত কাঁচামাল সরবরাহের নিশ্চয়তার অভাব ও বিদেশী বিনিয়ােগের লভ্যাংশ প্রেরণে অনিশ্চয়তার ফলে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিতে পারিতেছে না
কাঁচামাল সরবরাহের নিশ্চয়তা ও বিদেশী বিনিয়ােগের লভ্যাংশ নিয়মিত পাঠানাের অসুবিধার জন্যই বাংলাদেশে সরকারী ও বেসরকারী শিল্প এবং অন্যান্য খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি হয় নাই। ইহার ফলে কর্মসংস্থানের সরকারী লক্ষ্যও অর্জিত হইতেছে না। শিল্প খাতে দেশের সরকারী ও বেসরকারী বার্ষিক অন্তত: ২ শত থেকে ৪ শত টাকা পর্যান্ত বিনিয়ােগ হওয়ার কথা। এই বিনিয়ােগের বিদেশী ঋণ বিনিয়ােগ ও কারিগরী জ্ঞান দরকার। কিন্তু নিয়মিত কাঁচা মাল পাওয়ার নিশ্চয়তা ও বিনিয়ােগের লভ্যাংশ পাঠানাের নিশ্চয়তার অভাবে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিতে পারিতেছে না। ভারত, রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানী, জাপান, আমেরিকা ও অন্যন্য উন্নত দেশসমূহ বাংলাদেশে অর্থ বিনিয়ােগ করিতে আগ্রহ দেখাইতেছে। দেশের শান্তি শৃক্ষলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে কল-কারখানা স্থাপনের জন্য বিদেশীদের আগ্রহই বৃদ্ধি পাইতেছে।
|কাঁচামাল ও লভ্যাংশের সমস্যা মােকাবিলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করা হইতেছে। ফ্যাক্টরী স্থাপনের সর্বমােট ব্যয়ের সঙ্গে দশ বছরের জন্য প্রয়ােজন কাঁচামাল আমদানীর ব্যয়কে মূলধন হিসাবে গণ্য করার জন্য রাশিয়া ও অন্যান্য সকল উন্নত দেশের প্রতিষ্ঠানসমূহকে বলা হইতেছে। এই সব প্রতিষ্ঠান নিজেদের উৎপাদিত দ্রব্যাদি রফতানী করিয়া নিজেদের লভ্যাংশ গ্রহণ করিবে। ইহা ছাড়া, রফতানী আয়ের মাধ্যমে নিজেদের মূলধন ক্রমান্বয়ে ফেরত নেওয়া যাইবে। এই ব্যবস্থাধীনে বিদেশী সাহায্য পাওয়ার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চলানাে হইবে। জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা চিন্তা করিতেছেন। কমনওয়েলথ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আলাপ আলােচনা করিয়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তাহাদের সহায়তা চাইবেন বলিয়া সংশ্লিষ্ট মহল প্রকাশ করেন। সম্মেলনে হইতে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতার বিশেষ করিয়া শিল্প-বিনিয়ােগ বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন বলিয়া সংশ্লিষ্ট মহল আভাষ দেন।
সূত্র: দৈনিক আজাদ, ২৪ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত