You dont have javascript enabled! Please enable it!

আরও অধিক জমিতে পাটচাষ করুন:
হৃতবাজার উদ্ধার করিতেই হইবে

কৃষিমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদ আরও অধিক জমিতে পাট চাষ করার জন্য দেশের কৃষকদের প্রতি অনুরােধ জানাইয়াছেন। তিনি বলেন, বিদেশের বাজারে আমাদের উন্নত মানের পাটের যে বাজার ছিল তাহা উদ্ধার করিতেই হইবে।
জনাব সামাদ গতকাল সােমবার সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বলেন যে, পাটের ক্রম অবনিত প্রতিরােধের উদ্দেশ্যে গৃহীত নিবিড় পাট চাষ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সরকার চলতি বৎসর ৩ কোটি টাকা আর্থিক ঋণসহ পাট চাষীদের বিভিন্ন সুযােগ-সুবিধা দান করিবেন।
তিনি বলেন, নিবিড় চাষ প্রকল্পের অধীনে ৩ লক্ষ একর জমিতে পাট চাষ করা হইবে। এবং প্রতি বৎসর জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করিয়া ১৯৭৮ সাল নাগাদ দেশের সমস্ত পাট জমি এই প্রকল্পের অধীনে আনা হইবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন যে, বৃটিশ আমলে সমগ্র বিশ্বের মােট চাহিদার শতকরা ৮০ ভাগ পাট বাংলাদেশে উৎপন্ন হইত; কিন্তু পাকিস্তান আমলে তাহা নামিয়া শতকরা ৩৫ ভাগে দাঁড়ায়। পাকিস্তানী শাসক গােষ্ঠী সুকৌশলে বাংলাদেশের প্রতি যে সমস্ত আঘাত হানে তন্মধ্যে পাটের এই অধােগতি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক আঘাত।
তিনি বলেন, পাটের ক্রম অবনতি প্রতিরােধের জন্য কতিপয় উন্নয়নমূলক কর্মসূচী বর্তমানে সরকারের জরুরী বিবেচনাধীন রহিয়াছে। এই কর্মসূচীর মধ্যে পাট সংক্রান্ত গবেষণা, চাষীদের খামারে গবেষণা লব্ধ তথ্যের বাস্তব প্রয়ােগ পাটের বাজারজাত করণ, যুক্তিসঙ্গত মূল্য সম্পর্কে নিশ্চতা দান প্রভৃতি রহিয়াছে।
তিনি আরও বলেন যে, নিবিড় পাট চাষ প্রকল্পের জন্য সরকার ১০ হাজার টন সার, ৭ হাজার ২ শত ৬৫ মণ বীজ, ৩ কোটি টাকা ঋণ, সাড়ে ৭ হাজার বুনন যন্ত্র, ৭ হাজার নিড়ানি যন্ত্র ও ৯ হাজার স্পেয়ার প্রদান করিবেন। এইগুলির সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য দেড় হাজার পাট ব্লক গঠন করা হইয়াছে ও চাষীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হইতেছে। ২ শত একর জমি লইয়া গঠিত প্রতিটি ব্লকে একজন করিয়া পাট সম্প্রসারণ কর্মী নিযুক্ত করা হইয়াছে। ইহা ছাড়া দেড় হাজার পাট চাষী সমিতিও গঠন করা হইয়াছে। এই সমিতি সরকার হইতে প্রাপ্ত সুবিধা তদারক করিবে।
জনাব আবদুস সামাদ বলেন, নিবিড় চাষ প্রকল্পের প্রয়ােজনীয় পাট বীজ উৎপাদনের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের সহযােগিতার ৫ দশমিক ৫ লক্ষ ডলার (প্রায় ৭ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা) ব্যয় সাপেক্ষে একটি বিশেষ কার্যকর নেওয়া হইয়াছে।
তিনি বলেন যে, বিদেশে পাটের বাজার অক্ষুন্ন রাখিতে হইলে অবশ্যই পাটের উৎপাদন ব্যয় ও বাজারজাতকরণ ব্যয় হ্রাস করিতে হইবে। প্রয়ােজন বােধে ভর্তুকি দিয়াও বিদেশে বিক্রি করিতে হইবে। উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের উদ্দেশ্যে একর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার সম্ভাব্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন।
কৃষিমন্ত্রী প্রকাশ করেন যে, সরকার পাট বাজারজাতকরণের অরাজকতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে ৪৩৬টি পাট ক্রয় কেন্দ্র খুলিয়াছেন। এই সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হইবে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার ক্রমে ক্রমে চাষীদের নিকট হইতে সরাসরি পাট ক্রয় করিবেন।
পাটের বাজারজাতকরণের অরাজকতা প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, পাট চাষ ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে বহু ব্যবসায়ী অসাধু পন্থায় রাতারাতি বড় লােক হইয়াছে। ইহারা প্রতি মন পাটে আড়াই সের হইতে ৫ সের পানি মিশায়। গড়ে ৫০ লক্ষ বেল পাট বিক্রি করা হইলে এবং প্রতি মন পাটে গড়ে ২ সের করিয়া পানি মিশানাে হয়, তাহা হইলে প্রতি সের আড়াই টাকা হিসাব প্রতি বৎসর সাড়ে ১২ কোটি টাকার শুধু পানি বিক্রি হয়। এই অরাজকতা রােধের উদ্দেশ্যে সরকার পাট ক্রয় কেন্দ্র খুলিয়াছেন।

সূত্র: দৈনিক আজাদ, ২২ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!