You dont have javascript enabled! Please enable it!

বহু কোটি টাকার পাটজাদ্রব্য গুদামে রহিয়াছে রফতানীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা প্রয়ােজন

পাটজাত দ্রব্য ও কার্পেট ব্যাকিং বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন দেশে সরকারী ও বে-সরকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিদেশে প্রতিনিধিদল প্রেরণ করিয়া পাটজাত দ্রব্যের রফতানীর ব্যবস্থা করা না হইলে আগামী বর্ষার মওসুমে উল্লেখযােগ্য পরিমাণ পাটজাত দ্রব্য বিনষ্ট হইয়া যাইবে বলিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করা হইতেছে।
পূর্বে বিদেশী ক্রেতারা স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে পাটজাত দ্রব্যাদি ক্রয় করিত। বিদেশী আমদানীকারীরা এই জন্য স্থানীয় এজেন্টদের শতকরা একভাগ কমিশন দিত। পূর্বে পাকিস্তানী রফতানীকারীরাই অধিকাংশ পাটজাত দ্রব্য রফতানী করিত। অবশ্য মিলগুলােও সরাসরি পাটজাত দ্রব্য রফতানী করিত। জুট মিল কর্পোরেশন স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে পাট বিক্রয় প্রায় বন্ধ করিয়া দেয়। সরাসরি তাহাদের নিকট হইতে পাটজাত দ্রব্যাদি ক্রয় করার জন্য জুট মিল কর্পোরেশন বিদেশী ক্রেতাদের অনুরােধ করিতে থাকে। বহু বিদেশী ক্রেতা তাহাদের এই অনুরােধ প্রত্যাখ্যান করিয়া অন্যান্য দেশ হইতে পাটজাত দ্রব্যাদি ক্রয় করিতে শুরু করে। ইহার ফলে গত ৮ মাস ধরিয়া পাটজাত দ্রব্যাদির রফতানী কমিতে থাকে। তদুপরি কার্পেট ব্যাকিংয়ের বিক্রয় প্রায় বন্ধ হইযা রহিয়াছে। বিদেশী ক্রেতাদের স্থানীয় এজেন্ট থাকিলে তাহারা সময় মত পাটজাত দ্রব্যের চালান পায়। কোন জাহাজ কখন বন্দরে আসিবে এবং কিভাবে তাড়াতাড়ি জাহাজে করিয়া পাটজাত দ্রব্যাদি রফতানী করা যাইবে সেই দিকে তাহারা বিশেষ নজর রাখে। তাহাদের পরিশ্রমের জন্য তাহারা ক্রেতাদের নিকট হইতে শতকরা একভাগ কমিশন পায়। এই কমিশন দামের অতিরিক্ত। ক্রেতারা জুট শিল্প কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামেই পাটজাত দ্রব্যাদি ক্রয় করে। ইহার উপরই তাহারা শতকরা একভাগ কমিশন দেয়। কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা নাকচ করিয়া নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারিয়াছেন। আর পাটজাত দ্রব্যাদি রফতানীর ব্যাপারে একদল পরিশ্রমী লােকদের বিতাড়িত করিয়া পাটজাত দ্রব্যের বাজার হারাইতে বসিয়াছেন। সব চেয়ে অযােগ্যতার ব্যাপার এই যে, তাহারা এখনাে পর্যন্ত কার্পেট ব্যাংিকং বিক্রয়ের ব্যবস্থা করিতে পারিতেছে না। কর্পোরেশনের দক্ষ, দূরদশী ও উচ্চ মনােভাব সম্পন্ন লােক না থাকায় আজ পাট শিল্পের এই দূরবস্থা বিরাজ করিতেছে। এই অবস্থা দূর করার জন্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর কর্পোরেশনে বিশিষ্ট প্রাক্তন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের পরামর্শ গ্রহণ করার অত্যন্ত সমীচীন হইবে বলিয়া সংশ্লিষ্ট মহল অভিমত প্রকাশ করেন।
ইহা ছাড়া, প্রতিটি জুট মিলে একটি করিয়া উপদেষ্টা কমিটি বা পরিচালনা বোের্ড গ্রহণ করা দরকার। পূর্বে প্রতিটি জুটমিলে একটি করিয়া পরিচালনা বাের্ড ছিল। এই বাের্ড পুনরায় চালু করা হইলে মিলে দক্ষতা বৃদ্ধি পাইবে। তবে বাইরের দক্ষ লােকদের পারিশ্রমিক ভিত্তিতে হইলেও বাের্ডের চেয়ারম্যান নিয়ােগ করা প্রয়ােজন।
বর্তমানে একশত কোটি টাকারও বেশী পাটজাত দ্রব্য বিভিন্ন পাটের গুদামে জমা হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে। সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করিলেএই পাট অচিরেই বিক্রযৈর ব্যবস্থা করা যাইবে। এখনাে পর্যন্ত তুরস্ক, সােদী আরব ইত্যাদি দেশে পর্যাপ্ত পাটজাত দ্রব্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। নাই। কিছু সংখ্যক লােক মেহেরবানীর বদৌলতে জুট শিল্প কর্পোরেশনে উচ্চপদের অধিকারী হইয়া সরকারী পদমর্যাদার অপব্যবহার করিয়া পাট শিল্পকে ধ্বংস করিয়া দিতেছে। তাহার প্রমাণ এই যে, তাহারা এই পর্যান্ত পাট শিল্পকে স্বাধীনতার পূর্বের পর্যায়ে নিতে পারে নাই। বরং তাহাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলিয়া দিতেছে। অথচ পাট শিল্পকে সম্প্রসারণ করাই সরকারের নীতি। এখন সম্প্রসারণ করা তাে দূরের কথা চালু মিলগুলােকেও ঠিকভাবে চালাইয়া নিতে পারিতেছে না। কে এই দাযিত্ব নিবে। এই দায়িত্ব কি সরকারের না জুট শিল্প কর্পোরেশনের। জুট শিল্প কর্পোরেশনকে একটি সরকার বলা চলে। কিন্তু ইহা পরিচালনার দায়িত্ব এমন লােকদের হাতে দেওয়া হইয়াছে যারা দাযিত্ব পালনের মর্যাদাটুকু হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিতেছে না। এই অবস্থা কাটাইয়া উঠার জন্য প্রতিটি জুট মিলকে স্বাধীনভাবে কাজ করার দায়িত্ব দিয়া নিজ নিজ দক্ষতা প্রমাণ করিতে নির্দেশ দেওয়াই হইবে সুবিবেচনার কাজ।

সূত্র: দৈনিক আজাদ, ২০ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!