You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুজিব নগরে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল
সুখী সমৃদ্ধ ও শােষণমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন উদ্দীপনা ও দ্বিতীয় বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়া বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সুখী সমৃদ্ধ ও শােষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়িয়া তুলিবার জন্য উপরাষ্ট্রপতি দেশের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।
চতুর্থ বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠার চতুর্থ বার্ষিকী উপলক্ষে এক সভায় বক্তৃতা দানকালে উপরাষ্ট্রপতি একথা বলেন।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিপ্লবী সরকার গঠিত হইয়াছিল, ঠিক সেই জায়গায়ই এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী।
সভা আরম্ভ হইবার পূর্বে উপরাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
উপরাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলাম তাহার বক্তৃতায় বলেন যে, চার বৎসর পূর্বে দেশের স্বাধীনতার জন্য বিদেশী হাত হইতে দেশকে মুক্ত করিবার জন্য এখানেই বিপ্লবী সরকার শপথ নিয়াছিল। তিনি আরাে বলেন যে, আমাদের প্রথম বিপ্লব সফল হইয়াছে। এখন দ্বিতীয় বিপ্লবকে সাফল্যমণ্ডিত করিবার জন্য আমরা এই পবিত্র জায়গাতেই শপথ নিব। রাজনৈতিক অধিকার পাইলেই মানুষ পুরােপুরি স্বাধীনতা পায় না, তাহার জন্য প্রয়ােজন ন্যূনতম মানবিক অধিকার ও চাহিদা। এই দিকে লক্ষ্য রাখিয়াই বঙ্গবন্ধু তাহার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘােষণা করিয়াছেন।
দ্বিতীয় বিপ্লবকে সফল করিবার জন্য তিনি জাতীয় ঐক্য, জনশক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানাে, উৎপাদন বাড়ানাে এবং দুর্নীতির উচ্ছেদের উপর গুরুত্ব আরােপ করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতিও উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করেন। উপরাষ্ট্রপতি তাহার বক্তৃতায় এশিয়া, ইউরােপ ও ল্যাটিন আমেরিকার নির্যাতীত জনগণের সাথে বাংলাদেশের একাত্ম ঘােষণা করেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর ভিত্তি করিয়া বৈদ্যর পাড়ায় যে জাদুঘর তৈয়ার করা হইয়াছে তিনি তাহার উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী এখানে প্রতিষ্ঠিত মুজিব তােরণের ভিত্তি প্রস্তুত স্থাপন করেন।
উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ভােরের দিকে যখন এখানে আগমন করেন তখন কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলা বাকশাল নেতারা তাহাদের স্বাগত জানান। ব্যবসা ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী খন্দকার মােস্তাক আহমেদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব আবদুল মান্নান তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী জনাব তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, বাকশাল নেতা আবদুর রাজ্জাক এবং মুক্তিযােদ্ধা কাদের সিদ্দিকীও উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সহিত মুজিব নগর গমন করেন।
এম মনসুর আলী: প্রধানমন্ত্রী জনাব এম, মনসুর আলী তার ভাষণে দেশের ৬৫ হাজার গ্রামে বহুমুখী সমবায় কর্মসূচীর পূর্ণ সফলতা অর্জনের জন্য জনাষাধারণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করিয়া বলেন যে, জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য এবং কৃষক। সমাজকে শােষণের হাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন সাধারণকে বহুমুখী সমবায় কর্মসূচীতে যােগদানের জন্য যে আহ্বান জানাইয়াছেন। জনসাধারণ উহাতে উল্লেখযােগ্য পরিমাণে সাড়া দিবে।
জনাব মনসুর আলী জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যাহারা চরম আত্মত্যাগ করিয়াছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি বিশেষ করিয়া মুজিব নগরের জনসাধারণের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করিয়া বলেন। যে, তাহারা পরাক্রমশালী সামরিক জান্তার সন্তাসকে উপেক্ষা করিয়া তৎকালীন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের লইয়া একটি অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের জন্য সহযােগিতা করিয়া দেশ প্রেমিকতার এক বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করিয়াছেন।

সূত্র: দৈনিক আজাদ, ১৮ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!