You dont have javascript enabled! Please enable it!

দেশে তুলা চাষের বিরাট সম্ভাবনা রহিয়াছে

সাভারের নিকট কাশেম বস্ত্রমিলের পরিক্ষামূলক তুলার চাষাবাদ বিপুল সম্ভাবনাময় ও লাভজনক প্রমাণিত হইয়াছে। দেশে এই রৌপ্য অংশের বাণিজ্যিক চাষাবাদ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
মিলের কার্যনির্বাহী পরিচালক জনাব মঈনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন যে, বাইমাইল গ্রামে মিলের দশ এক জমিতে মােট ত্রিশ মণ তুলা উৎপাদন হইয়াছে। গড়ে প্রতি একরে উৎপাদিত হইয়াছে তিন মন। বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী ইহার মূল্য দুইহাজার টাকা। ইহা হইতে উৎপাদন ব্যয় বাবদ পাঁচশত টাকা বাদ দিলে চাষীর মােট লাভ থাকিবে দেড় হাজার টাকা।
জনাব ইসলাম বলেন, দেরীতে বীজ বপন করার ফলে গত মওসুমে আশানুরূপ তুলার চাষ নাই। এতদসত্ত্বেও ভারত ও পাকিস্তানের চাইতে তাহাদের উৎপাদিত তুলার গুণগত উৎকর্ষ অনেক ভাল। এই আশের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭ মিলিমিটার।
জনাব মঈনুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে তাহারা এক শত একর জমিতে তুলা চাষ করিতে যাইতেছেন। ইহার অধীনে আরাে জমি আনয়ন করা হইবে। এব্যাপারে চাষীদের নিকট হইতে যথেষ্ট সাড়াও পাওয়া যাইতেছে বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন। জনাব ইসলাম বলেন যে সব উঁচু জমিতে আমন ফসল রােপণ করা সম্ভব নয়, সেই সব জমি তুলা চাষের জন্য ব্যবহার করা যাইতে পারে। আগষ্ট মাসে তুলার বীজ বপন করিতে হইবে এবং এপ্রিল মাসের দিকে জমি হইতে তুলা সংগ্রহ করিতে হইবে। রবিশস্যের চাষাবাদের মতই তুলা চাষের ক্ষেত্রেও আনুষঙ্গিক খরচ লাগিবে।
তিনি বলেন, কৃষকরা তুলা চাষের সঙ্গে সঙ্গে একই জমিতে শীতকালীন শাকশবজি ও অন্যান্য রবিশস্যের আবাদ করিতে পারিবে।
তিনি বলেন বর্তমানে দেশের ৭০টি বস্ত্র মিলের চাহিদা মিটাইতে১০ লাখ বেল তুলা বিদেশ হইতে আমদানী করিতে হয় এবং ইহার জন্য প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু শুধুমাত্র ১৫ লক্ষ একর জমিতে তুলা চাষের ব্যবস্থা করা হইলেই দেশের প্রয়ােজনীয় সম্পূর্ণ তুলা উৎপাদন হইতে পারে।
জনাব ইসলাম বলেন দেশের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত তুলা বাের্ড অফিসে তুলার বীজ মওজুদ রহিয়াছে। এক একর জমিতে চাষাবাদের জন্য পাঁচ সের তুলা বীজই যথেষ্ট। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সুতীবস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশে তুলার চাষ উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এই তুলা বাের্ড গঠন করেন। জনাব ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলেন, এব্যাপারে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু করা হয় নাই। এমন কি পাকিস্তানের গােলাম মােহাম্মদ বাধ এলাকা হইতে প্রত্যাগত বাঙালিদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাও ঠিকমত কাজে লাগানাে হয় নাই। তুলা ছাষাবাদে তাহাদের অভিজ্ঞতা এখন আমরা পরিপূর্ণ ভাবে ব্যবহার করিতে পারি। জনাব ইসলাম চাষীদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার ও মূল্যের নিশ্চয়তা সহ তাহাদের নানাভাবে উদ্দীপনা প্রদানের সুপারিশ করেন।

সূত্র: দৈনিক আজাদ, ১৩ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!