দেশের পশু ও প্রাণী সম্পদ রক্ষার একক দায়িত্ব বহন করছে
কুমিল্লা পশু পালন গবেষণাগার
কুমিল্লা পশু পালন গবেষণাগার ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভাগের পর সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের গবাদিপশু সংক্রান্ত গবেষণা, ভ্যাকসিন ও সিয়াম উৎপাদন ও রােগ নির্ণয় ইত্যাদি কাজের উদ্দেশ্যে স্থাপিত হয়। ভারতীয় পশু গবেষণাগার, মুক্তেশ্বর থেকে যারা পাকিস্তানে চলে আসেন তাদের সাহায্য তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে ভ্যাকসিন ও সিয়াম তৈরীর অতি জরুরী প্রয়ােজনের তাগিদে টিকা ও রক্ত রস উৎপাদন বিভাগ এবং জীবানুতত্ত্ব ও নিদান শাস্ত্র বিভাগ দুটি স্থাপিত হয়। পরে ক্রমশ: পরজীবী গবেষণা
যােগ করা হয়। পরজীবী মহামারী গবেষণা এবং মােরগ মুরগীর কলেরা রােগের ভ্যাকসিন তৈরীর প্রকার দুইটিও ক্রমে এতে সংযােগ করা হয়। ১৯৬৩ সালে ৩১শে পর্যন্ত গবেষণাগারটি তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ছিল। ১৯৬৩ সালের ১লা জুন থেকে এটা সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে এই গবেষণাগার বাংলাদেশ সরকারের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
বিভিন্ন বিভাগের ভূমিকা
ভ্যাকসিন ও সিরাম উৎপাদন বিভাগ, (বাইওলেজিক্যাল প্রডাক্টস সেকশন) এই বিভাগে ভ্যাকসিন ও সিরাম উৎপাদন করা হয়। উৎপাদনের উৎকর্ষ সাধনের জন্য গবেষণাও পরিচালনা করা হয়। উৎপাদিত ভ্যাকসিন ও সিরাম বিনামূল্যে জেলা পশু পালন অফিসারদের মারফত রােগ দমন ও সড়ক আয়ত্বকরণের মত অতি প্রয়ােজনীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। এখানে তড়কা, গলাফুলা ও বাদলা রােগের সিরাম ও ভ্যাকসিন উৎপাদিত হয়। বার্ষিক উৎপাদনের মােটামুটি পরিমাণ।
১। তড়কা ভ্যাকসিন ৫,৫০,০০০ মাত্রা। ২। সিরাম ২০,০০০, ৩। গলাফুলা ভ্যাকসিন ৩০,০০০ মাত্রা। ৩। তড়কা সিরাম ২০,০০০ মাত্রা ৫। বাদলা ভ্যাকসিন ৫০,০০০ মাত্রা। ৬ বাদলা সিরাম ১০,০০০ মাত্রা। ৭। বাদলা মােরগ কলেরা ভ্যাকসিন ৫০,০০০ মাত্রা। মােট ১০,০০,০০০।
মােরগ-মুরগীর কলেরা ভ্যাকসিন তৈরীর প্রকল্পটি এই বিভাগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
জীবাণুতত্ত্ব ও নিদান শাস্ত বিভাগ
এখানে পশু-পক্ষীর বিভিন্ন রােগের উপর গবেষণা চালানাে হয় এবং রােগ নির্ণয় করা হয়। ভ্যাকসিন ও সিরাম তৈরীর জন্য, রােগ নির্ণয়ের জন্য এবং বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাদ্যাদি যথা পনির, দধি ইত্যাদি প্রস্তুত করে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর প্রয়ােজন হয়। এখানে এই জীবানুগুলাে কৃত্রিম উপায়ে পালন করা হয় এবং এই গবেষণার বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। এগুলাে দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও সরবরাহ করা হয়। আমাদের দেশে জাতীয় জীবানু রক্ষণাগার না থাকায় এই বিভাগ সেইরূপ রক্ষণাগারের ভূমিকাও পালন করে।
পরজীবী গবেষণা বিভাগ
আমাদের দেশে পরজীবী দ্বারা জীবজন্তুর বিশেষ ক্ষতি সাধন লক্ষ্যণীয়। পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট রােগের ব্যাপকতা এবং কি কি ধরনের পরজীবী এখানে দৃষ্ট হয় তা নির্ণয় করা, এখানে প্রাপ্ত ঔষধের গুণাগুণ পরীক্ষা করা এবং কার্যকরী চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া এবং রােগ নির্ণয় বিষয়ে গবেষণা করা এই বিভাগের কাজ।
পরজীবী মহামারী গবেষণা প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশে থানা ওয়ারী কৃষির প্রার্দুভাবের জরীপ, পেয়াম নিষ্ঠুমার কৃমির প্রাদুর্ভাবের অনুসন্ধান বিভিন্ন কসাই থানায় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন ঋতুতে আবহাওয়ার প্রভাবে কৃমির প্রার্দুভাবের তারতম্যের বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা হয়।
পশু পুষ্টি বিভাগ
এই অঞ্চলে প্রাপ্ত বিভিন্ন পশু খাদ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সুলভে সুষম পশু খাদ্য প্রস্তুত, অপুষ্টি ঘটিত বিভিন্ন রােগের উপর গবেষণা কৃষি উপজাত বিভিন্ন দ্রব্যকে পশু খাদ্য রূপান্তরের প্রচেষ্টা ইত্যাদি কার্য এই বিভাগ করে থাকে। | কুমিল্লা কোতােয়ালী কেন্দ্রীয় সমবায় প্রতিষ্ঠানে এই বিভাগের সহযােগিতায় পশু পাখীর জন্য সুষম খাদ্য তৈয়ারও প্রচলন করা হয়। বর্তমানে এই খাদ্য যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
পশু প্রজনন বিভাগ
এখানে দেশীয় বিভিন্ন জাতের পশু-পক্ষীর সম্বন্ধে তথা সংগ্রহ এবং বৈজ্ঞানিক প্রজনন এদের উৎকর্ষ সাধন, প্রজননে ঘটিত বিভিন্ন রােগের উপর গবেষণা কৃত্রিম প্রজননের জন্য শুক্র সংগ্রহ ও এর রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদির উপর কাজ করা হয়। ছাগলের কৃত্রিম প্রজনন এখানে প্রবর্তন করা হয়েছে।
পশু পালন বিভাগ
পশু পালনের বিভিন্ন সমস্যাদির উপর গবেষণা, দেশীয় বিভিন্ন জাতের পশু-পক্ষীদের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ, গুণাগুণ নির্ণয়, এসবের উৎকর্ষ সাধন, বিভিন্ন পশু পক্ষীজাত দ্রব্যের সদ্ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করা হয়।
ভূ-সম্পত্তি তত্ত্বাবধান বিভাগ
এই বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে গবেষণাগারটির রক্ষণাবেক্ষণ, পশু খাদ্য চাষ, বিভিন্ন বিভাগের জন্য যন্ত্রপাতি ও রসান দ্রব্যাদি সংগ্রহ, গৃহাদি মেরামত, শ্রমিক পরিচালনা, যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ, পশু পক্ষী ও তাদের খাদ্যাদি ক্রয় ও বন্টন ইত্যাদি কাজ করা।
সূত্র: দৈনিক আজাদ, ১০ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত