You dont have javascript enabled! Please enable it!

পরস্পর নির্ভরশীল বিশ্বের অর্থনৈতিক কল্যাণে স্বনির্ভরশীলতা অপরিহার্য

বর্তমান বিশ্বে খুব কম দেশই আছে যারা আভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য প্রয়ােজনীয় সকল প্রকার পণ্য নিজেরাই উৎপাদন করে। এর যে খুব প্রয়ােজন আছে তাও নয়। যেহেতু বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই আজ পরস্পর নির্ভরশীল, সেহেতু স্বনির্ভরতার লক্ষ্য আজ আর অপরিহার্য বলে বিবেচিত নয়। অর্থনৈতিক কল্যাণের প্রয়ােজনে একটা দেশের উৎপাদন প্রচেষ্টা কেবল এ সকল পন্থা সরবরাহে সীমিত থাকা উচিত, যে গুলাের উৎপাদনের তুলনামূলক সুবিধা দেশে রয়েছে। এটাই হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মৌল দর্শন। একটা দেশ নিজের প্রয়ােজন মাফিক কোন কোন পণ্য উৎপাদন করে এবং বাকিগুলাে বিদেশ থেকে আমদানী করে থাকে। আমদানীকৃত পণ্যের মুল্য প্রদানের জন্য একটা দেশকে নিশ্চয়ই রপ্তানী করতে হবে। একটা দেশের অর্থনীতির সাফল্য নির্ভর করে ঐ দেশের আমদানী ও রপ্তানীর মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্টার উপর। প্রত্যেক দেশই নিজস্ব পণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রয় এবং বিদেশ থেকে স্বল্পমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে চায়। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিঃসন্দেহে প্রতিযােগিতামূলক এবং কঠিন। এ জন্যই এটা দেশ তার নিজস্ব প্রযাৈজন অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনে সচেষ্ট হয় যাতে প্রয়ােজনীয় পণ্যের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে না হয়। এ কথা সকল দেশের ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য এবং বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে এর প্রয়ােজন যথেষ্ট সুবিধাজনক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
নতুন এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জন্য একটি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক কাঠামাে গড়ে তালা, সার্বিক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ এবং দেশের দ্রুত শিল্পায়নের জন্য প্রচুর পরিমাণে যন্ত্রপাতি আমদানী করা আবশ্যক। যন্ত্রপাতি আমদানীর জন্য এক দিকে বাংলাদেশকে এর ভােগ্যপণ্য আমদানীর পরিমাণ কমাতে হবে এবং অন্য দিকে আমদানীকৃত যন্ত্রপাতির মূল্য পরিশােধের জন্য রপ্তানীর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমান বাংলাদেশ একটি চরম অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। কেননা, বাংলাদেশকে প্রচুর পরিমাণে শস্য এবং অন্যান্য প্রয়ােজনীয় ভােগ্যপণ্য আমদানী করতে হচ্ছে। ফলে প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানী করার মতাে সম্পদ খুব কমই অবশিষ্ট থাকে। খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়ােজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়ার মতাে যথেষ্ট সম্ভাবনা আমাদের রয়েছে। সে লক্ষ্যে পৌছার চেষ্টা আমরা করছি। অনুরূপভাবে কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানী বৃদ্ধির জন্যও যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে। আমাদের আমদানী নীতির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে এ সকল ব্যাপারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা।

সূত্র: দৈনিক আজাদ, ৭ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!