রপ্তানীযােগ্য পণ্য
যেহেতু বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, সেহেতু ইহার রপ্তানীযােগ্য দ্রব্য প্রধানত: কৃষি ভিত্তিক। বাংলাদেশে উৎপাদিত দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযােগ্য রপ্তানী দ্রব্যগুলি হচ্ছে কাঁচা পাট জুট কাটিংসহ চা বরফ দেওয়া গলদা চিংড়ি, চিংড়িমাছ, বেঙ্গের পা, মাছ, মশলা, পাকা ও কাচা চামড়া। দেশে উৎপাদিত মিল্পজাত দ্রব্যগুলাে হচ্ছে, পাটজাত দ্রব্য, যথা-চট ও বস্তা, পাটের গালিচা, পাটের সূতা, পাকা চামড়া, নিউজপ্রিন্ট, কাগজ ইত্যাদি। উল্লেখিত দ্রব্যাদি ছাড়াও অন্যান্য যে সব অপ্রচলিত রপ্তানী দ্রব্য রয়েছে সে গুলাে হলাে গুড়, তুলার পরিত্যক্ত অংশ, টাকা সজি পানসহ, তেঁতুল, মানুষের চুল, সিল্কের পরিত্যাক্ত অংশ, রশি, তাবুর খুঁটি বাঁশ, ফুলের কাটা, ভেষজগুল ও অশােধিত ঔষধ, সামুদ্রিক ঝিনুক, কাঁচা সিল্কের সূতা, আয়ুর্বেদী ও ইউনানী ঔষধ এবং গ্রামােফোন রেকর্ড। বাংলাদেশের দ্রব্যাদি এখন বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই রপ্তানী হচ্ছে।
১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ ২৭১ কোটি ৬ লক্ষ টাকা মূল্যের দ্রব্য রপ্তানী এবং ২২৬ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা মূল্যের পণ্য আমদানী করেছে। ১৯৭৩-৭৪ সালে রপ্তানী ও আমদানীর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২১১ কোটি ১৯ লক্ষ এবং ৪৯৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা মূল্যের পণ্য।
৭২-৭৩ সালে আমদানীর পরিমাণ কম থাকায় বাণিজ্যিক ভারসাম্যতা অনুকূলে ছিল। ৭৩৭৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানীকৃত দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে বাণিজ্যিক ভারসাম্যতার ঘাটতি দেখা দেয়।
১৯৭০-৭৪ সালে অর্জিত মােট বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ৮৭.৩ ভাগ (২৫৪ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা) অর্জিত হইয়াছে কাচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানী থেকে। ১৯৭২-৭৩ সালে কাচা পাট ও পাট জাত দ্রব্য রপ্তানী করে অর্জিত হইয়াছে ২৩২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা অর্থাৎ মােট অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ৯০ ভাগ। ১৯৭২-৭৩ এবং ৭৩-৭৪ সালে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার শতরকা ৩৮.৪ ও শতকরা ৩৩.৩ ভাগ এসেছে যথাক্রমে কাঁচাপাট ও পাটের কাটিংস থেকে। ১৯৭২-৭৩ এবং ৭৩-৭৪ সালে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় পাটজাত দ্রব্যের অংক ছিল শতকরা ৫১.৪ এবং শতকরা ৫৪ ভাগ।[৩৬]
পাকা ও কাঁচা চামড়া
থেকে ১৯৭২-৭৩ সালে আয় হয়েছিল ১৩ কোটি ১৩ লক্ষ এবং ১৯৭৩-৭৪ সালে ১৩ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা। এটা রপ্তানী আয়ের শতকরা ৪.৭ ভাগ। ১৯৭৩-৭৪ সালে চা রপ্তানী থেকে অর্জিত হয়েছে ১১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। বিশ্বে চা-এল নতুন বাজার পাওয়াতে ১৯৭২-৭৩ সালে ঐ খাতে অর্জিত রপ্তানী আয় মােট আয়ের শতকরা ২.৭ ভাগ থেকে ১৯৭৩-৭৪ সালে শতকরা ৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৭৩-৭৪ সালে মাছ রপ্তানী থেকে প্রায় ৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা অর্থাৎ মােট রপ্তানী আয়ের শতকরা ২.১ ভাগ। ১৯৭২-৭৩ সালে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মাছ রপ্তানী করা হয়।
১৯৭৩-৭৪ সালে নিউজপ্রিন্ট ও কাগজ থেকে প্রায় হইয়াছিল ২ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা অর্থাৎ মােট আয়ের শতকরা ০.৯ ভাগ। ১৯৭২-৭৩ সালে এ খাতে আয় হয়েছিল ২ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা। ১৯৭৩-৭০ সালে অন্যান্য দ্রব্য রপ্তানী বাবদ যে আয় হয় তা মােট আয়ের শতকরা এক ভাগ মাত্র।
সূত্র: দৈনিক আজাদ, ৭ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত